ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬শে যিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী, ১৬ই জুন, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
ইনশাআল্লাহ আগামী ২২শ শাউয়াল, ১৪৪৪ হিজরী মুতাবিক, ১৩ই মে, ২০২৩ ঈসায়ী তারিখ রোজ শনিবার বাদ ‘আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার পুরাতন ভবনের (সাত মসজিদের সাথে) নীচ তলায় ইফতা বিভাগের রুমে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হজ্জের ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন।
তারিখ : ১৪ - ফেব্রুয়ারী - ২০১৮
জিজ্ঞাসাঃ
আমাদের এলাকায় জনৈক ব্যক্তি বলেন যে, কুরবানী তারাই করবে যারা হজ্জে যাবে। এছাড়া অন্যদের উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এবং আরো বলেন যে, কুরবানীর কথা কুরআন-হাদীসের কোথাও নেই। যদি কেউ দেখাতে পারে, তাকে আমি দশ হাজার টাকা পুরস্কার দিবো। প্রশ্ন হলো-উক্ত লোকের কথাগুলোর বাস্তবতা কতটুকু?
জবাবঃ
শরীয়তের দৃষ্টিতে কুরবানীর দিন গুলোতে যারা নিসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হয় বা থাকে, তাদের উপর কুরবানী ওয়াজিব। ঐ ব্যক্তির কুরবানী না দিলে ওয়াজিব তরকের গুনাহগার হবে। হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন- “যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করবে না, সে যেন আমাদের ঈদগাহের নিকটে না আসে”। এর দ্বারা সুস্পষ্ট প্রমাণ হয় যে, কুরবানী ওয়াজিব। কেউ ওয়াজিবকে অস্বীকার করলে ফাসিক হয়ে যাবে। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার পক্ষে কুরআন ও হাদীস থেকে কিছু উদ্ধৃতি দেয়া হলঃ
قال تعالى: {فصل لربك وانحر}- استدل به بعضهم على وجوب الاضحية لمكان الامر . (روح المعاني:15/316)
(১) অর্থাৎ “হে রাসূল!) আপনার পালনকর্তার উদ্দেশ্যে নামায এবং কুরবানী করুন, (সূরা কাউসার) কুরআনের এ আয়াতকে মুফাচ্ছিরীনগণ কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার দলীল বলে সাব্যস্ত করেছেন”। অতএব, কুরবানীর আদেশ কুরআনে নেই-এ দাবী অযৌক্তিক।[প্রমাণঃ তাফসীরে রুহুল মা’আনী ১৫:৩১৬]
{لَنْ يَنَالَ اللَّهَ لُحُومُهَا وَلَا دِمَاؤُهَا وَلَكِنْ يَنَالُهُ التَّقْوَى مِنْكُمْ} [الحج : 37]
(২) অর্থাৎ “কুরবানী একটি মহান ইবাদত। আল্লাহর কাছে এর গোশত ও রক্ত পৌঁছে না। কিন্তু পৌঁছে তার কাছে তোমাদের মনের তাক্বওয়া”। [সূরা হজ্জঃ৩৭]
(৩) মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ১নং এ উল্লেখিত আয়াত নাযিল হওয়ার পর মদীনায় দশ বৎসরের জীবনে কোন একবারও কুরবানী বাদ দেননি। বলাবাহুল্য, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাদ না দিয়ে প্রতি বৎসর এ আমল করে যাওয়া ওয়াজিব হওয়ার একটি বড় প্রমাণ।
عَنْ أَنَسٍ قَالَ قَالَ النَّبِيُّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَنْ ذَبَحَ قَبْلَ الصَّلَاةِ فَلْيُعِدْ...الخ (صحيح البخاري حـ:984)
(৪) হাদীস শরীফে ইরশাদ হচ্ছে-
من ذبح قبل الصلواة فليعد مكانها اخرى ...الخ [بخاري ومسلم]
অর্থাৎ “যে ব্যক্তি (কুরবানী ঈদের দিন) ঈদের নামাযের পূর্বে কুরবানীর পশু যবেহ করে ফেলে, সে যেন নামাযের পর তদস্থলে আরেকটি পশু কুরবানী করে।
কুরবানী যদি ওয়াজিব না হত, তাহলে নামাযের পূর্বে যারা কুরবানী করেছে তাদের পুনরায় কুরবানী করার আদেশ দিতেন না। বলাবাহুল্য, মহানবীর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতিটি আদেশই উম্মতের জন্য ওয়াজিব ও অবশ্য পালনীয়। যদি তার বিপরীত কোন দলীল না থাকে। তাছাড়া কোন কারণে কোন ইবাদত নষ্ট করা হলে, তা পুনরায় করার আদেশ তখনই করা হয়, যখন তা ওয়াজিব হয়। [বুখারী শরীফ২:৮৩৪ # মুসলিম শরীফ ১:১৫৩]
من كان له سعة ولم يضح فلا يقربن مصلانا. (ابن ماجة:حــــــــــــ)
অর্থঃ “যে ব্যক্তি সামর্থ থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করে না সে যেন আমাদের ঈদগাহে না আসে”। [ইবনে মাযহা২:২২৬]
উক্ত হাদীস দ্বারা তাওফীক থাকা সত্ত্বেও কুরবানী করেনি, তাদের ব্যাপারে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কঠোরতা প্রদর্শন করেছেন। যদি কুরবানী ওয়াজিব না হত, তাহলে এমন কঠোরতা প্রদর্শন করতেন না। নিম্নে কুরবানী ওয়াজিব হওয়ার প্রমাণ স্বরুপ ফিকাহ শাস্ত্রের কতিপয় নির্ভরযোগ্য কিতাবের ইবারত উদ্ধৃত করা হলোঃ
واما الذي يجب على الغني دون الفقير فما يجت من غير نذر ولاشراء للاضحية...الخ (بدائع الصنائع:5/62)
“ধনীদের উপর কুরবানী করা ওয়াজিব নিয়ামতের শুকরিয়া হিসেবে এবং হযরত ইবরাহীম আ.- এর প্রবর্তিত রীতি পালনার্থে”। [বাদায়িউস সানায়ে ৫:৬২]
يجب على حر مسلم موسر مقيم عن نفسه. (البحر الرائق:8/153)
এমন মুসলমান ব্যক্তি যিনি আযাদ। ধনী এবং মুকীম তার উপর তার পক্ষে থেকে কুরবানী করা ওয়াজিব।[ফাতাওয়া রহীমিয়া৩:১৭৮# আল বাহরুর রায়িক ৮:১৫৩]
قربانی محض سنت نہیں واجب۔ (فتاوی رحیمیۃ:3/178)
“কুরবানী শুধু কেবল সুন্নাত নয়, বরং ওয়াজিব”। [ফাতাওয়া রহীমিয়া ৩:১৭৮]
উল্লেখিত আয়াত, হাদীস ও ফুকাহাগনণের ইবারত দ্বারা প্রমাণিত হচ্ছে যে, কুরবানী ওয়াজিব। কেই যদি অস্বীকার করে, তাহেল সে ফাসিক ও বিদ’আতী বলে গণ্য হবে। উক্ত ব্যক্তি তাওবা না করলে এবং নিজের ভ্রান্ত মতে একগূঁয়ে হয়ে থাকলে, মুসলিম সমাজের জন্য এমন ভণ্ড ব্যক্তির বয়কট করা কর্তব্য। এ ধরনের বদদ্বীন জাহিল ও খণ্ড লোক থেকে দ্বীনের সঠিক ধারণা পাওয়ার কোন আশা করা যায় না। তামাত্তু এবং কিরানকারী হাজী ব্যতীত বাড়ীতে অবস্থানকারী ধনী (সাহেবে নেসাব) ব্যক্তিদের উপর কুরবানী জরুরী নয়-এ কথা ঐ ব্যক্তি কোথায় পেল? তার যদি কুরআন-হাদীস বুঝার মত জ্ঞান না থাকে, তাহলে উম্মতকে গোমরাহ না করে তার উচিত ছিল কোন বিজ্ঞ আলেমের স্মরণাপন্ন হওয়া।