ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬শে যিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী, ১৬ই জুন, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
ইনশাআল্লাহ আগামী ২২শ শাউয়াল, ১৪৪৪ হিজরী মুতাবিক, ১৩ই মে, ২০২৩ ঈসায়ী তারিখ রোজ শনিবার বাদ ‘আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার পুরাতন ভবনের (সাত মসজিদের সাথে) নীচ তলায় ইফতা বিভাগের রুমে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হজ্জের ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন।
তারিখ : ১৪ - ফেব্রুয়ারী - ২০১৮
জিজ্ঞাসাঃ
সাহাবয়ে কিরাম হকের মাপকাঠি কি-না? এক বিশেষ আন্দোলনের কর্মীরা প্রচার করে থাকেন যে, সাহাবাগণ হকের মাপকাঠি নন। হকের মাপকাঠি হচ্ছেন কেবল নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। এ ব্যাপারে আমরা বিভ্রান্তিতে পড়েছি। আশা করি ইসলামের সঠিক সিদ্ধান্ত প্রমাণসহ জানিয়ে হিদায়াতের পথে চলতে সাহায্য করবেন।
জবাবঃ
আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অন্যতম আকীদা হল- সাহাবায়ে কিরাম সত্যের মাপকাঠি। এ ব্যাপারে কুরআন ও হাদীসের অসংখ্য প্রমাণ রয়েছে। সুতরাং যারা এ আকীদা পোষণ করে না তারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ। সাহাবায়ে কিরাম যে সত্যের মাপকাঠি এর অসংখ্য প্রমাণাদির মধ্য থেকে নিম্নে কয়েকটি উল্লেখ করা হল-
১. আল্লাহ তা‘আলা ঘোষণা করেছেনঃ
“যদি তারা ঈমান আনে তোমাদের (সাহাবাগণের) ঈমান আনার মত, তবে তারা হিদায়াত প্রাপ্ত হবে।” এই আয়াতে স্বয়ং আল্লাহ তা‘আলা সাহাবায়ে কিরামের ঈমানকে হিদায়াত প্রাপ্তির মাপকাঠি ঘোষণা করেছেন এবং বলেছেন যে, মহান প্রভুর দরবারে ঐ ঈমানই গ্রহণযোগ্য যা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং সাহাবায়ে কিরাম এনেছিলেন। অতএব, যে ব্যক্তির ঈমান তাঁদের ঈমানের চেয়ে এদিক ওদিক হবে, তার ঈমান গ্রহণযোগ্য নয়। [মা’আরিফুল কুরআন উর্দূ ১:২৯৬, সূরা বাকারা- ১৩৭]
২.অন্যত্র আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেছেনঃ
“যখন তাদেরকে বলা হয়, তোমরা ঈমান আনো যেমন অন্য লোকেরা (সাহাবাগণ) ঈমান এনেছে।” মুফাস্সিরীনে কিরাম বলেন যে, এই আয়াত দ্বারা বুঝা যায় যে, কোন ব্যক্তির ঈমানের দাবী সঠিক কি-না, তা যাচাই করার মাপকাঠি হচ্ছে সাহাবায়ে কিরামের ঈমান। সুতরাং যার ঈমান কোন বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের ঈমানের সাথে মিলবেনা, তার ঈমান আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দরবারে গ্রহণযোগ্য হবে না। (মা’আরিফুল কুরআন উর্দূ ১:৭৩) উপরোক্ত আয়াতদ্বয় হতে একথা স্পষ্টভাবে বুঝা গেল যে, যখন ঈমানের ন্যায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সাহাবায়ে কিরামের ঈমানকেই বিশুদ্ধতা ও গ্রহণযোগ্যতার মানদন্ড নির্ধারণ করা হয়েছে, তাহলে দ্বীনের অন্যান্য ব্যাপারেও সাহাবায়ে কিরাম অবশ্যই সত্যের মাপকাঠি।
৩. নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ বনী ইসরাঈল ৭২ ফিরকায় বিভক্ত হয়েছিল। আর আমার উম্মত ৭৩ ফিরকায় বিভক্ত হবে। সেগুলোর মধ্য হতে একটি ফিরকা ব্যতীত অবশিষ্ট ৭২ ফিরকা জাহান্নামী হবে। সাহাবা (রাযিঃ) প্রশ্ন করলেন উক্ত নাজাত প্রাপ্ত ফিরকাভুক্ত কারা হবে? মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করলেন- “আমি এবং আমার সাহাবগণ যে তরীকার উপর, সেই তরীকার উপর যারা অটল থাকবে তারাই নাজাতপ্রাপ্ত দল। [তিরমিযী ২:৯৩]
৩. অন্যত্র নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ আমার সাহাবাগণ নক্ষত্র সমতুল্য। তাদের মধ্য হতে তোমরা যারই অনুসরণ করবে হিদায়াত পেয়ে যাবে।[মিশকাত শরীফ ২:৫৫৪]
উক্ত হাদীসটি শব্দের সামান্য বেশ-কমে অনেকগুলো সনদে বর্ণিত হয়েছে। শব্দের সামান্য তারতম্য থাকলেও অর্থ ও উদ্দেশ্য সবগুলোরই এক। উক্ত হাদীসের একটি সনদের শব্দ নিয়ে গবেষণা করতে গিয়ে কট্টরপন্থী কতিপয় ইমাম কোন কোন শব্দকে মাওযূ বলেছেন। কিন্তু যেহেতু হাদীসটি একাধিক সনদে বর্ণিত হয়েছে এবং সকল হাদীসের অর্থও এক, এজন্য হাদীসের হুবহু শব্দ কি হবে, তা নিয়ে আপত্তি করলেও অর্থের ব্যাপারে কেউ আপত্তি তোলেননি এবং হাদীসটিকে একাধিক সনদের দিকে লক্ষ্য করে “হাসান” পর্যায়ে ঘোষণা করেছেন। আর “হাসান” পর্যায়ের হাদীস দ্বারা দলীল পেশ করা সকলের নিকট গ্রহণযোগ্য। যেমন- “দ্বীনী ইলম শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরয” এ হাদীসটি কোন কোন সূত্রে দুর্বল হলেও সামগ্রিক ভাবে ‘হাসান’ প্রমাণিত হয়েছে। কিছু লোক “অল্প বিদ্যা ভয়ংকর” রোগে আক্রান্ত হয়ে এ সূক্ষ্ম পার্থক্য বুঝতে সক্ষম না হওয়ায় তারা উপরে উল্লেখিত হাদীসটি শুনলেই ‘মাওযূ’ বলে চিৎকার করে উঠে। কিন্তু হাদীসটি মোট কতগুলো সনদে বর্ণিত আছে এ খবর তারা রাখে না।
৫. হযরত ইবনে মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত আছে- যে ব্যক্তি সঠিক তরীকা অবলম্বন করতে চায় সে যেন ঐ সমস্ত সাহাবাগণের তরীকা অবলম্বন করে, যারা ঈমানের উপর মৃত্যুবরণ করেছেন। অর্থাৎ শেষ জীবন পর্যন্ত ইসলাম ত্যাগ করেনি। (মৃত্যুবরণের কথা এজন্য বলা হয়েছে যে, জীবিত মানুষ যে কোন মুহূর্তে গোমরাহ হয়ে যেহে পারে।) তাঁরা (সাহাবাগণ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সহচার্যে ধন্য হয়েছিলেন। তাঁরা এ উম্মতের মধ্যে সর্বোত্তম ছিলেন। সবচেয়ে নেকদিল ওয়ালা ছিলেন। সবচেয়ে গভীর ইলমের অধিকারী ছিলেন। আল্লাহ তা‘আলা তাদেরকে বিশেষভাবে নির্বাচন করেছিলেন স্বীয় নবীর সহচার্যলাভে ধন্য হওয়ার জন্য এবং তাঁর দ্বীন কায়িমের জন্য। হে দুনিয়ার মানুষ! তোমরা তাদের মর্তবা অনুধাবন করো এবং তাদের পদাংক অনুসরণ করো। সাধ্যানুযায়ী তাঁদের আখলাক-চরিত্রকে আঁকড়ে ধর। কারণ তারা সীরাতে মুস্তাকীমের উপর প্রতিষ্ঠিত ছিলেন। [মিশকাত শরীফ ১:৩২]
নমুনা হিসেবে এখানে ২টি আয়াত ও কতিপয় হাদীস পেশ করা হলো। সুষ্ঠু বিবেক সম্পন্ন লোকের জন্য এতটুকুই যতেষ্ট।
যুগ যুগ ধরে সমগ্র মুসলিম উম্মাহ সাহাবায়ে কিরামকে সত্যের মাপকাঠি মেনে আসছেন। প্রায় দের হাজার বৎসর যাবৎ উলামায়ে উম্মত এ আকীদা পোষণ করে চলছেন। ইসলামী আকীদার সকল কিতাবেও এ কথার স্বীকৃতি রয়েছে। অধুনা জনৈক ইসলামী চিন্তাবিদ (?) যিনি শুধু রিচার্স করে ইসলাম শিখেছেন দুর্ভাগ্যবশতঃ তিনি শরীয়তের নির্দেশ অনুযায়ী নির্ভরযোগ্য উলামাগণের নিকট থেকে ইলম হাসিল করার সুযোগ পাননি। তিনি সর্বপ্রথম ও উদ্ভট কথার দাবী তুললেন যে, খোদার রাসূল (সাঃ) ব্যতীত অন্য কাউকে সত্যের মাপকাঠি বিশ্বাস করবে না এবং কাউকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না। (না’ঊযুবিল্লাহ)
দুনিয়ার কোন বিদ্যা যেমন- ডাক্তারী ও ইঞ্জিনিয়ারিং ইত্যাদি বিষয় শিক্ষা করতে পারদর্শী শিক্ষকের মাধ্যম ছাড়া শুধু ঐ সকল সাবজেক্টের বই পড়ে কেউ ডাক্তার-ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে না। হলেও তাদের কাছে ঐ ব্যাপারে কেউ যাবে না। বরং তাদের ডিসিশন মানলে রুগী মরার আর বিল্ডিং ভেঙ্গে পড়ার সম্ভাবনাই বাড়বে। তাহলে কুরআন-হাদীস কি এতই মিসকীন এবং লাওয়ারিস হয়ে গেলো যে, এর ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য কোন শর্ত নেই? যে কেউ তার নিজস্ব মতানুযায়ী এর ব্যাখ্যা দিতে শুরু করবে? হতে পারে, অন্য বিষয়ে সে মহাপন্ডিত। কিন্তু মুহাক্কিক উস্তাদের সুহবতে থেকে ইলম না শিখে থাকলে এ ব্যাপারে সে অজ্ঞ। তার ব্যাখ্যা কি আল্লাহ-রাসূলের মর্যি মত হবে? কখনও নয়। আনাড়ী ডাক্তার দ্বারা যা হয়, উক্ত চিন্তাবিদ দ্বারা তা-ই হয়েছে। ইসলামের নামে তিনি বহু কিছু করেছেন। কিন্তু তার কিছুই সত্যিকার ইসলামের কাজে আসেনি। বরং তার লিখনী দ্বারা সহীহ ইসলামের মহা ক্ষতি সাধিত হয়েছে। তার ভ্রান্ত মতবাদ ও আকীদার বিশ্বাসী হয়ে অনেক লোক আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত থেকে খারিজ হয়ে গেছেন। নিজের ঈমানকে কমযোর করেছেন। এটা কি কোন ইসলামের খিদমত? আর এ কারণে এদেশের দ্বীনের যত সহীহ সিলসিলা ও লাইন আছে, যেমন- (ক) দেওবন্দী লাইনের হাজার হাজার মাদ্রাসা, (খ) হক্কানী পীর-বুযুর্গ (গ) তাবলীগী জামা’আত ও (ঘ) সহীহ ইসলামী আন্দোলনরত উলামা, তাঁদের কেউ ঐ ব্যক্তির কুরআন-সুন্নাহর ব্যাখ্যা গ্রহণ করেননি বা স্বীকৃতি দেননি। কেউ কি মনে করবে এ সকল তবকার উলামাগণ হিংসার কারণে তাকে সমর্থন করেননি? দেড় হাজার বছর যাবত যারা ইসলামের খিদমত করে এসেছেন এবং যাদের উসীলায় আমরা দ্বীন পেলাম সেই সব মুসলিম বুযুর্গগণের ব্যাপারে এ ধারণার অবকাশ নেই। কোন ব্যক্তি ইসলামের নামে ভ্রান্ত আকীদা প্রচার করলো আর লক্ষ লক্ষ লোক তা গ্রহণ করল, তাতে ইসলামের কি লাভ হবে? নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “যে ব্যক্তি সাহাবাগণের ব্যাপারে বিদ্বেষ রাখে বা তাদের সমালোচনা করে, সে বস্তুতঃ আমার সাথে বিদ্বেষ পোষণ করল। (তিরমিযী শরীফ) নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ঘোষণার পরে কোন সাহসে ইসলামের নামে এ কথা বলা যায় যে, আল্লাহর রাসূল (সাঃ) ব্যতীত কাউকে সমালোচনার ঊর্ধ্বে মনে করবে না?
আমাদের দায়িত্ব হক কথা পৌঁছে দেয়া। যাদের ভাগ্যে হেদায়েত আছে, তারা তা গ্রহণ করবে। আর কেউ সাহাবগণের ব্যাপারে সমালোচনা করে নিজেই নিজের ঈমান বরবাদ করলে, অন্যদের সুপথ দেখানো ছাড়া কিইবা করার আছে? [বিস্তারিত জানার জন্য পড়ুন আকীদাতুত তহাবী ১৪৬]