ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।
ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।
আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।
যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।
পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com
এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
www.islamidars.com
ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. বিভাগ : বই ও আর্টিকেল তারিখ : ০৯ - মার্চ - ২০১৮
الحمد لله رب العلمين والصلاة على النبى الكريم
‘খ্রিস্টধর্ম: কিছু জিজ্ঞাসা ও পর্যালোচনা’ শীর্ষক বইটি খ্রিস্টধর্মের উপর একটি বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা গ্রন্থ। এতে একজন পাঠককে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে খ্রিস্টধর্মের ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনার আহ্বান জানানো হয়েছে। সঙ্গত কারণেই এতে আক্রমণাত্মক ও বিদ্বেষমূলক আচরণ কিংবা সাম্প্রদায়িক দৃষ্টিভঙ্গির কোনো উচ্চারণ সতর্কতার সাথে পরিহার করার চেষ্টা করা হয়েছে। ধর্মীয় গোঁড়ামী ও সংকীর্ণতা, অতিরঞ্জন ও অসতর্কতা এড়িয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথ গ্রহণের নিবেদন করা হয়েছে।
এ ‘পর্যালোচনা গ্রন্থ’ প্রণয়নের পূর্বে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে গবেষণাকালে খ্রিস্টধর্মের মৌলিক ছয়টি বিষয়ে বাইবেলের বিপরীতমুখী বক্তব্যে আমরা বিস্মিত হয়েছি। আমাদের এ গ্রন্থে সে বিষয়সমূহের পর্যালোচনার প্রতিই সম্মানিত পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করা হয়েছে। বিষয়গুলো নিম্নরূপ-
১. খ্রিস্টধর্মে অনুসরণীয় কে? যীশু খ্রিস্ট, নাকি সেন্ট পল?
২. ‘বাইবেল’ আল্লাহর নাযিলকৃত তাওরাত ও ইঞ্জিল, নাকি সেন্ট পলের ধর্মগ্রন্থ?
৩. খ্রিস্টধর্মে স্রষ্টা একজন, নাকি তিনজন?
৪. খ্রিস্টধর্মে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের অন্তর্ধান: ক্রুশে হত্যা করা হয়েছে, নাকি সশরীরে আসমানে উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে?
৫. হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের নবুয়ত সর্বজনীন, নাকি কেবল বনী ইসরাঈলের জন্য?
৬. শেষ নবী কে? হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালাম, নাকি হযরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম?
খ্রিস্টধর্মের মৌলিক এ ছয়টি বিষয় নিয়েই আমরা আমাদের পর্যালোচনা সংক্ষেপণ করলেও সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সঠিক সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়ার নিমিত্তে যথেষ্ট দলীল-প্রমাণের আলোকে নিরপেক্ষ দৃষ্টিকোণ থেকে আলোচনা সমৃদ্ধ করার চেষ্টা করা হয়েছে। আশা করি, সত্যসন্ধানী পাঠক খ্রিস্টধর্মের উপর আমাদের এ দালীলিক ও নিরপেক্ষ পর্যালোচনা মূল্যায়ন করবেন এবং এ পর্যালোচনার আবেদন ও নিবেদনের সঙ্গে ঐকমত্য পোষণ করবেন।
উদ্ধৃতি প্রসঙ্গ
১. বিষয়বস্তুর প্রমাণে আমরা বাংলা বাইবেলের পাশাপাশি আগ্রহী পাঠকদের জন্য ইংরেজি বাইবেলের উদ্ধৃতিও তুলে দিয়েছি। যেন খ্রিস্টধর্মের আলোচনা খ্রিস্টধর্মীয় সমাজে স্বীকৃত ‘মৌলিক উৎসগ্রন্থে’র উদ্ধৃতি-সমৃদ্ধ হয়।
২. ইংল্যান্ডের রাজা প্রথম জেমস-এর সময়ে ১৬১১ খ্রিস্টাব্দে ইংরেজি ভাষায় বাইবেলের বিশুদ্ধ অনুবাদ প্রকাশ করা হয়। এটিই অন্যান্য ভাষার কিতাবুল মোকাদ্দাসের মূল ভিত্তি। ইংরেজি এ অনুবাদটি কিং জেমস ভার্সন (King James Version), সংক্ষেপে (KJV) নামে পরিচিত। ইংরেজি বাইবেলের উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে আমরা সাধারণত (KJV)-এর নতুন সংস্করণ (NKJV)-এর হুবহু অনুসরণ করেছি। কেননা, বাইবেলের বিভিন্ন অনুবাদ ও সংস্করণ থাকা সত্যেও খ্রিস্টসমাজের সর্ববৃহৎ শ্রেণির মাঝে ‘কিং জেমস ভার্সন’ই সর্বাধিক জনপ্রিয় এবং ইংরেজি বাইবেল সংস্করণগুলোর মধ্যে প্রাচীনতম। সূত্র: Despite the proliferation of Bible translations, the King James Version is the top choice -and by a wide margin- of Bible readers. (Joe Carter, “Report: The Bible in American Life,” Accessed 5/7/2018. https://www.thegospelcoalition.org/article/report-the-bible-in-american-life/)
তবে হ্যাঁ, ক্ষেত্রবিশেষে রিভাইজড স্টান্ডার্ড ভার্সন (RSV) থেকেও আমরা উদ্ধৃতি গ্রহণ করেছি। এ জাতীয় ক্ষেত্রে টীকায় তা লিখে দেওয়া হয়েছে।
৩. বাইবেল ও অন্যান্য ইংরেজি গ্রন্থের উদ্ধৃতিগুলো যত্নের সাথে সম্পাদনা করে দিয়েছেন ইংরেজি ভাষা বিশেষজ্ঞ আমেরিকা নিবাসী Dr. Mufti Rezwanul Hasan, M.B.B.S.। যিনি বর্তমানে Darul Uloom New Jersey, Paterson, NJ, U.S.A.-তে শিক্ষকতা করছেন।
৪. বাইবেলের বাংলা উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে আমরা ‘বাংলাদেশ বাইবেল সোসাইটি’ কর্তৃক ১৯৭৩ সালে প্রকাশিত জন কেরির ‘পবিত্র বাইবেল’ থেকে হুবহু তুলে দিয়েছি। তবে ক্ষেত্রবিশেষে যেখানে জন কেরির অনুবাদ প্রাচীনতার দরুণ দুর্বোধ্য মনে হয়েছে, সেখানে ‘কিতাবুল মোকাদ্দাস’ থেকেও উদ্ধৃতি দেওয়া হয়েছে। এ জাতীয় ক্ষেত্রে টীকায় তা লিখে দেওয়া হয়েছে।
৫. বাইবেলের পরিচিতি বিস্তারিতভাবে মূল গ্রন্থের আলোচনায় সন্নিবেশিত হয়েছে। তবে বাইবেলের বাংলা ও ইংরেজি উদ্ধৃতি অনুধাবনের সুবিধার্থে গ্রন্থের শেষে পুরাতন ও নতুন নিয়মের সকল পুস্তকের একটি ‘নির্ঘণ্ট’ সংযুক্ত করা হয়েছে। গ্রন্থ পাঠের আগে সম্মানিত পাঠক এ নির্ঘণ্ট পড়ে নিলে উদ্ধৃতির ‘অপরিচিত’র ভাব দূর হবে আশা করা যায়।
৬. বাইবেলের উদ্ধৃতির ক্ষেত্রে আমরা প্রথমত সংশ্লিষ্ট পুস্তকের নাম, অতঃপর অধ্যায় নম্বর, এরপর পদ নম্বর উল্লেখ করেছি। যেমন (মথি ১৫:২৪)-এর অর্থ হলো, মথি নামক পুস্তকের ১৫তম অধ্যায়ের ২৪ নং পদ।
৭. বাইবেলের উদ্ধৃতি পাঠের ক্ষেত্রে এ কথা মনে রাখা আবশ্যক যে, পর্যালোচনায় খ্রিস্টধর্মের আকীদা-বিশ্বাসের বিপরীতে প্রমাণ হিসেবে বাইবেলের উদ্ধৃতি কেবল এ জন্যই দেওয়া হয়েছে যে, খ্রিস্টধর্মে এ গ্রন্থ ধর্মীয় বিষয়ে ‘দলীল-প্রমাণ’ হিসেবে বিবেচিত।
৮. পরিভাষাগত আলোচনায় আমরা সাধারণত বাইবেল ও খ্রিস্টধর্মের পরিভাষাই ব্যবহার করেছি। যেমন, ঈশ্বর = আল্লাহ, ভাববাদী = নবী, ভাববাণী = নবীর বাণী, মোশি = মূসা আ., যীশু = ঈসা আ., ইশ্মায়েল = ইসমাঈল ইত্যাদি। ক্ষেত্রবিশেষে বন্ধনীতে প্রয়োজনীয় ব্যাখ্যাও করে দেওয়া হয়েছে।
৯. পর্যালোচনাকে প্রামাণ্য করতে গিয়ে অনেক খ্রিস্টান পন্ডিত ও গবেষকদের বক্তব্যও উদ্ধৃত করতে হয়েছে। ইংরেজি লেখক ও গবেষকগণের নাম বাংলায় লেখার ক্ষেত্রে কোনো বাংলা ভাষাভাষির রচনার উপর নির্ভর না করে আমরা যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি সংশ্লিষ্ট ভাষার Pronunciation বা ‘উচ্চারণ নীতি’ অনুসারে বাংলায় তা লিখে দিতে। ব্যক্তি সুনির্দিষ্টকরণের স্বার্থে ক্ষেত্রবিশেষে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির মৃত্যু সনও বন্ধনীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
১০. বার্নাবাসের বাইবেল প্রসঙ্গ
এ কিতাবে দু-এক জায়গায় বার্নাবাসের বাইবেল থেকেও উদ্ধৃতি দেয়া হয়েছে। খ্রিস্টধর্মের অনুসারীগণ বার্নাবাসের বাইবেলকে হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের সাহাবী প্রকৃত বার্নাবাসের লিখিত মনে করেন না। তাদের মতে এ সুসমাচারটি কোনো মুসলমানের রচনা। এ ধারণার মৌলিক কারণ হলো,
(১) নির্ভরযোগ্য কোনো সূত্রে এ গ্রন্থ বার্নাবাস হতে আমাদের নিকটে পৌঁছেনি।
(২) এ বাইবেলে সেন্ট পলের বিরুদ্ধে জোরালো আলোচনা করা হয়েছে এবং প্রসিদ্ধ বাইবেলের বিপরীতে ইসলাম ও মুসলমানদের ধর্ম ও নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমর্থনে সুস্পষ্ট বর্ণনা রয়েছে। (এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা ৩/২৬২) নিবন্ধ: বার্নাবাস)
‘বার্নাবাসের নামে প্রসিদ্ধ বাইবেলটি বার্নাবাসের নয়’- প্রমাণে এ দু’টি আপত্তির কোনটিই গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। কেননা, কোনো গ্রন্থ আসমানী গ্রন্থ হিসেবে স্বীকৃত হওয়ার জন্য যদি “গ্রন্থটি কোনো নবীর মাধ্যমে লিখিত হওয়া এবং উক্ত নবী গ্রন্থটিকে যেভাবে রেখে গেছেন, হুবহু কোনো ধরণের পরিবর্তন, পরিবর্ধন বা বিকৃতি ছাড়া গ্রন্থটি ‘অবিচ্ছিন্ন সূত্রে’ পরবর্তীদের নিকট পৌঁছা’র বিষয়টি খ্রিস্টধর্মে স্বীকৃত শর্ত হয়, তবে তো এ সমীক্ষানীতি অনুসারে প্রসিদ্ধ কোনো বাইবেলই ‘ঐশী গ্রন্থ’ হওয়ার যোগ্যতা রাখে না।
দ্বিতীয়ত, প্রসিদ্ধ বাইবেলের বিরোধী বা বিপরীত বক্তব্য থাকা এবং ইসলাম ও মুসলমানদের সমর্থনে বক্তব্য থাকাও আশ্চর্যের মনে হবে না, যদি বার্নাবাস ও সেন্ট পলের ইতিহাস কিছুটা পর্যালোচনা করা হয়।
বার্নাবাস ছিলেন হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের হাওয়ারিয়্যিন বা সহচরদের উচ্চতম মর্যাদার অধিকারী এবং অন্যতম সাহাবী। সূত্র: এ মর্মে প্রসিদ্ধ বাইবেলে রয়েছে, “ইউসুফ নামে লেবির বংশের একজন লোক ছিলেন। সাইপ্রাস দ্বীপে তার বাড়ি ছিলো। তাকে সাহাবিরা বার্নাবাস অর্থাৎ উৎসাহদাতা (বা উপদেশের পুত্র) বলে ডাকতেন। তার এক খন্ড জমি ছিলো, তিনি সেটা বিক্রি করে টাকা এনে সাহাবীদের পায়ের কাছে রাখলেন।” (প্রেরিত ৪:৩৬–৩৭)
বাইবেলের বর্ণনামতে অলৌকিকভাবে দামেশকের পথে যীশুর দর্শন লাভ করে নিজেকে যীশুর অনুসারী দাবী করার আগে সেন্ট পল ছিলেন কট্টর ইয়াহুদী এবং ঈসা ‘আলাইহিস সালামের অনুসারীদের উপর জুলুম নির্যাতনে সিদ্ধহস্ত। সূত্র: সেন্ট পল নিজেই বলেন, “আমি প্রাণনাশ পর্যন্ত এই পথের (যীশুর পথে যারা চলতো) প্রতি উপদ্রব করিতাম, পুরুষ ও স্ত্রীলোকদিগকে বাঁধিয়া কারাগারে সমর্পণ করিতাম।” (প্রেরিত ২২:৪)
প্রথম দিকে সেন্ট পলের ভূমিকা বুঝতে না পেরে বার্নাবাস তাকে ঈসা ‘আলাইহিস সালামের অন্যান্য সহচরদের তার (সেন্ট পলের) ব্যাপারে আশ্বস্ত করেন। সূত্র: কিন্তু বার্নাবাস তাকে সঙ্গে করে সাহাবীদের কাছে নিয়ে গিয়ে তাদের জানালেন, দামেস্কের পথে শৌল কিভাবে হযরত ঈসাকে দেখতে পেয়েছিলেন এবং ঈসা কিভাবে তাদের সঙ্গে কথা বলেছিলেন। আর দামেস্কে ঈসার সম্বন্ধে কিভাবে তিনি সাহসের সঙ্গে তাবলীগ করেছিলেন। (প্রেরিত ৯: ২৬–২৭)
প্রাথমিক সময়ে বার্নাবাস এবং সেন্ট পল একইসাথে যীশু খ্রিস্টের ধর্ম প্রচারে ব্রত ছিলেন। সূত্র: “আর বার্ণবা ও শৌল (পল) আপনাদের পরিচর্য্যা–কার্য্য সম্পন্ন করিবার পর যিরূশালেম হইতে প্রত্যাগমন করিলেন; যোহন যাহাকে মার্কও বলে, তাঁহাকে সঙ্গে লইলেন।” (প্রেরিত ১২:২৫)
কিন্তু একপর্যায়ে তাদের উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব দেখা দিলো। এ মর্মে বাইবেলের বর্ণনা নিম্নরূপ-
“কিন্তু পৌল ও বার্নাবাস এন্টিয়কেই রইলেন। সেখানে তারা আরও অনেকের সঙ্গে মাবুদের কালাম শিক্ষা দিতে ও তাবলীগ করতে থাকলেন। কিছুদিন পরে পৌল বার্নাবাসকে বললেন, ‘যেসব জায়গায় আমরা মাবুদের কালাম তাবলীগ করেছি, চল এখনই সেইসব জায়গায় ফিরে গিয়ে ঈমানদার ভাইদের সঙ্গে দেখা করি এবং তারা কেমনভাবে চলে তা দেখি। তখন বার্নাবাস ইউহোন্নাকে সঙ্গে নিতে চাইলেন। এই ইউহোন্নাকে মার্ক বলেও ডাকা হতো। পৌল কিন্তু তাকে সঙ্গে নেওয়া ভালো মনে করলেন না। কারণ মার্ক পামফুলিয়াতে তাদের ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন এবং তাদের সঙ্গে আর কাজ করেননি। তখন পৌল ও বার্নাবাসের মধ্যে এমন মতের অমিল হল যে, তারা একে অন্যের কাছ থেকে আলাদা হয়ে গেলেন। বার্নাবাস মার্ককে নিয়ে জাহাজে করে সাইপ্রাস দ্বীপে গেলেন। আর পৌল সীলকে বেছে নিলেন।” (প্রেরিত ১৫: ৩৫–৪১)
এ বিচ্ছেদের পর আবার তাদের সম্পর্ক পুনঃস্থাপিত হয়েছিলো মর্মে গোটা বাইবেলে কোনো বর্ণনা নেই। তার মানে এ বিচ্ছেদ ছিলো চিরতরের জন্য। সঙ্গী নির্বাচনের তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই আদর্শের অনুসারী দুই ব্যক্তির মাঝে এমন মারাত্মক মতবিরোধ হওয়াটা বিস্ময়কর। উপরন্তু তাদের এ মতবিরোধের ব্যাপারে প্রেরিত পুস্তকে লূক যে শব্দ ব্যবহার করেছেন, তা অস্বাভাবিক কঠিন। মিস্টার এ এম ব্লেইকলক [Blaiklock] বলেন,
এবার লূক বিশ্বস্ততার সাথে (পৌল ও বার্নাবাস, এই দুই) সফর সঙ্গীদ্বয়ের মধ্যে দেখা দেওয়া বেদনাদায়ক বিচ্ছেদ-কাহিনী বর্ণনা করেছেন। তিনি যে শব্দ ব্যবহার করেছেন [Paraxusmas] তা বড় কঠিন। …নিউ টেস্টামেন্টে সে শব্দটি এছাড়া আর এক জায়গাতেই (প্রকাশিত কালাম ৬: ১৪) ব্যবহৃত হয়েছে, যেখানে আকাশমন্ডলী ধ্বংস হয়ে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার কথা জানানো হয়েছে। [Blaiklock, Commentory on Acts, edited by R.V.G. tosher PP.118, 611]
কাজেই দৃঢ়ভাবে ধারণা করা যেতে পারে যে, তাদের উভয়ের মতবিরোধ ছিলো আদর্শগত। সূত্র: উল্লেখ্য, লূক ছিলেন সেন্ট পলের শিষ্য। কাজেই গুরুর অপরাধ ঢাকতে খুব সম্ভব এখানে ঘটনার কারণ বর্ণনায় কোনো “ত্রুটি” রয়েছে!)
অর্থাৎ সেন্ট পল যখন হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের তাওহীদী ধর্মকে নিজস্ব মতাদর্শের রূপদানের চেষ্টা শুরু করেন, তখন বার্নাবাস তাকে পরিত্যাগ করেন। সেন্ট পল ও বার্নাবাসের এ আদর্শিক মতবিরোধকে সামনে রেখে যদি চিন্তা করা হয়, তবে এটা অসম্ভব মনে হয় না যে, এরপরই বার্নাবাস সেন্ট পলের স্বরূপ উদঘাটনের জন্য একটি সুসমাচার রচনা করবেন এবং তাতে সেন্ট পলের স্বরূপ উদঘাটনসহ হযরত ঈসা ‘আলাইহিস সালামের তাওহীদ ও একত্ববাদের বিরোধী ভ্রান্ত আকীদা-বিশ্বাসের অপনোদন করবেন!
কাজেই বার্নাবাসের বাইবেল রচনা করা এবং তাতের প্রসিদ্ধ সেন্ট পলীয় বাইবেলের বিরোধী কথা থাকা আশ্চর্যের কোনো বিষয় নয়; বরং বার্নাবাস যে সত্যিই পলবিরোধী একটি বাইবেল রচনা করেছিলেন, তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয় এ কারণে যে, পশ্চিমা পন্ডিত ‘একসিহোমো’ [Ecce Homo] তার গ্রন্থে প্রাচীন খ্রিস্টান ধর্মগুরুগণ যীশু খ্রিস্ট বা তাঁর প্রেরিত শিষ্যগণ বা তাদের অনুসারীগণের নামে প্রচারিত যে সকল পুস্তক ও পত্রের নাম উল্লেখ করেছেন, কিন্তু বর্তমানে সেগুলো অবলুপ্ত রয়েছে, তার একটি তালিকা দিয়েছেন। অবলুপ্ত এ কিতাবসমূহের তালিকায় তিনি ‘বার্নাবাসের বাইবেলে’র কথা স্বীকার করেছেন। ‘এনসাইক্লোপিডিয়া আমেরিকানা’ (৩/২৬২)-তেও বার্নাবাসের বাইবেলের অস্তিত্বের কথা স্বীকার করা হয়েছে।
পবিত্র কুরআনের ইংরেজি অনুবাদক George Sale [জর্জ সেল] তার অনুবাদ গ্রন্থের সূত্র: (Wherry, Rev. E.M.: A Comprehensive Commentary on the Quran: Comprising Sale’s Translation and Preliminary Discourse (London, 1896)
ভূমিকায় এ অবলুপ্ত বাইবেলটি প্রাপ্তির যে ঘটনা উল্লেখ করেছেন, তার সারমর্ম হলো, আনুমানিক ষোড়শ শতাব্দির শেষ দিকে বিশপ ইরানিয়াসের লেখা কিছু চিঠি ল্যাটিন রাহিব (খ্রিস্টান সন্ন্যাসী) ফ্রামারিনোর হস্তগত হয়। যার একটিতে সেন্ট পলের কঠোর সমালোচনা এবং বার্নাবাসের বাইবেলের কথা উল্লেখ ছিলো। ইরানিয়াসের এ চিঠি থেকে ফ্রামারিনো বার্নাবাসের বাইবেলের প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন। পরবর্তীতে বন্ধুবর পোপ পঞ্চম সিক্সটাস [Sixtus]-এর ব্যক্তিগত পাঠাগার থেকে ইতালিয়ান ভাষায় বার্নাবাসের বাইবেলের একটি কপি ফ্রামারিনোর হস্তগত হয়। সূত্র: পরবর্তী সময়ে তার বিভিন্ন অনুবাদ প্রকাশিত হয়। বাংলা ভাষায়ও কবি আফজাল চৌধুরী ইংরেজি থেকে এর বাংলা অনুবাদ করেছেন, যা বাংলাদেশ কো–অপারেটিভ বুক সোসাইটি প্রকাশ করেছে। বার্নাবাসের বাইবেলে সেন্ট পলের বিভ্রান্তি প্রকাশের সাথে সাথে আখেরী নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর নাম সহকারে যীশুর ভবিষ্যদ্বাণী উল্লিখিত হয়েছে।
সারকথা, বার্নাবাস কর্তৃক সেন্ট পলীয় বাইবেলের বিরোধী একটি বাইবেল রচনার যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ যেমন রয়েছে, তেমনি বাস্তবিক-পক্ষেই তা লিখিত হওয়া এবং প্রাপ্ত হওয়ার ঐতিহাসিক প্রমাণও রয়েছে। কাজেই ‘প্রচলিত বাইবেল-বিরোধী বক্তব্য থাকার কারণেই এটি কোনো মুসলমানের লেখা হতে হবে’- এর কোনো যৌক্তিকতা নেই। উপরন্তু কয়েকটি বিষয় চিন্তা করলে এ সুসমাচারটি যে কোনো মুসলমানের লেখা নয়, তা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতে হয়। পাঠক লক্ষ্য করুন-
ক. এ সুসমাচারের ভাষাশৈলী, পরিভাষা ইত্যাদি প্রমাণ করে যে, তা প্রথম খ্রিস্টীয় শতকেই লিখিত।
খ. ৭ম/৮ম খ্রিস্টীয় শতক থেকে ঊনবিংশ শতক পর্যন্ত শতশত মুসলিম পন্ডিত খ্রিস্টধর্মের আলোচনা, সমালোচনা ও বাইবেলের আলোকে মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইত্যাদি বিষয়ে আলোকপাত করেছেন। কেউই কখনো বার্নাবাসের উদ্ধৃতি দেননি। যদি কোনো মুসলমান এটি লিখে থাকতেন, তবে খ্রিস্টানদের বিরুদ্ধে হাতিয়ার হিসেবে সুসমাচারটির কথা অবশ্যই তিনি মুসলমানদেরকে অবহিত করতেন; নিজের কাছে লুকিয়ে রাখতেন না!
কাজেই খ্রিস্টধর্মের অনুসারীগণ যদি নির্ভরযোগ্য সূত্র না থাকার পরও প্রসিদ্ধ বাইবেলসমূহকে গ্রহণযোগ্য বলে মেনে নিতে পারেন, তাহলে বার্নাবাসের বাইবেলকেও গ্রহণযোগ্য মেনে নেওয়াটা তাদের জন্য অত্যাবশ্যক হয়ে যায় (যদিও মুসলমানদের নিকটে কোন বাইবেলই প্রমাণ হিসাবে স্বীকৃত নয়) ।