হযরতওয়ালা মুফতী সাহেব হুজুর দা.বা. আগামীকাল (০৩.০৩.২০২৩ ঈসায়ী) জুমু‘আর নামায পড়াতে খিলগাও বাজার মসজিদে আসবেন না।
রজব মাস শুরু হলেই প্রিয় নবী ﷺ এই দু‘আ খুব বেশী করে পড়তেন: اَللّهُمَّ بَارِكْ لَنَا فِيْ رَجَبَ وَشَعْبَانَ وَبَلِّغْنَا رَمَضَانَ
ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৪শে শাবান, ১৪৪৪ হিজরী, ১৭ই মার্চ, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা দা.বা. এর কিতাব অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে চাইলে ভিজিট করুনঃ www.maktabatunnoor.com
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
লেখক: সংগ্রহ বিভাগ : বই ও আর্টিকেল তারিখ : ২০ - সেপ্টেম্বর - ২০১৬
আকাবিরদের জীবনী থেকে অনেক কিছুই শিখার থাকে!
শতাব্দীর ঐতিহ্যবাহী সংগঠন, মুসলিম মিল্লাতের রাজনৈতিক প্রহরী, জমিয়তে ওলামায়ে হিন্দের মহামান্য সভাপতি, দারুল উলুম দেওবন্দের সিনিয়র মুহাদ্দিস, রাবেতা আলমে ইসলামী মক্কা মুকাররামা এর সম্মানিত নির্বাহী সদস্য, অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড- এর অন্যতম সদস্য, আওলাদে রাসূল, মাওলানা সাইয়েদ আরশাদ মাদানী دامت بركاتهم কে এক আন্তর্জাতিক জরিপে বিশ্বের সপ্তম শীর্ষ আলেম হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি তাকে উপমহাদেশের সর্বোচ্চ ইসলামী চিন্তাবিদ, ধর্মীয় নেতা ও দেওবন্দী আলেমগণের ইলমী উত্তরাধিকারের আমিন হিসেবে গণ্য করা হয়েছে। অনুরূপ তাকে স্বীয় পিতা শাইখুল ইসলাম মাদানী رحمة اللہ علیه এর সুযোগ্য স্থলাভিষিক্ত ও জানিশীন এবং ভারতবর্ষের ইমামুত তাকওয়া গণ্য করা হয়। তাকে মুসলিম জাতিসত্তার নিবেদিতপ্রাণ সেবক, যুগশ্রেষ্ঠ শাইখুল হাদীস ও অসাধারণ বক্তা এবং স্পষ্টভাষীরূপেও গণ্য করা হয়। এছাড়াও তাকে ভারতবর্ষের শিক্ষিত ও সাধারণ জনগণের হৃদয়ের স্পন্দন হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
নিম্নে এ মহান মনীষীর সংক্ষিপ্ত জীবনী পেশ করা হল ৷
জন্ম:
শাইখুল ইসলাম কুতবুল আলম ,হযরত মাওলানা সায়্যিদ হোসাইন আহমদ মাদানী رحمة اللہ علیه এর সুযোগ্য উত্তরসূরী, কুতবুল ইরশাদ, মাওলানা সায়্যিদ আরশাদ মাদানী دامت بركاتهم ১৩৬০ হিজরী, মোতাবেক ১৯৪১ ইংরেজীতে জন্ম গ্রহণ করেন ৷
শিক্ষা জীবন:
প্রাথমিক শিক্ষা শুরু করেন ১৯৪৬ ঈ: হযরত মাওলানা কারী আসগর আলী رحمة اللہ علیه নিকট ৷ যিনি হযরত মাদানী رحمة اللہ علیه খলিফা ছিলেন৷
হিফযুল কুরআন:
আট বৎসর বয়সে কুরআনুল কারীম সম্পূর্ণ মুখস্থ করেন ৷ সর্ব প্রথম খতমে তারাবীহ পড়ান, বাঁশকান্দী, আসাম ৷ স্বীয় পিতা হযরত মাদানীর رحمة اللہ علیه উপস্থিতিতে ৷
একাডেমিক শিক্ষা শুরু:
সে সময় দারুল উলূম দেওবন্দের প্রচলিত প্রথানুযায়ী পাঁচ সালা ফারসী খানায় শিক্ষা সমাপ্ত করে ১৯৫৫ ঈ, সনে আরবী শাখায় শিক্ষা শুরু করেন ৷
দারুল উলূম দেওবন্দে ভর্তি:
দারুল উলূম দেওবন্দে ১৯৫৯ ঈ, নিয়মতান্ত্রিক ভাবে ভর্তি হন৷ পারিবারিক মুরব্বী জ্যেষ্ঠভ্রাতা হযরত মাওলানা সায়্যিদ আস’ আদ মাদানী رحمة اللہ علیه তৎকালীন বিখ্যাত আরবী সাহিত্যিক মাওলানা ওয়াহিদুজ্জামান কিরানভী رحمة اللہ علیه কে দিল্লী থেকে সায়্যিদ আরশাদ মাদানীকে আরবী ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা দানের জন্য দেওবন্দে ডেকে পাঠান৷ হযরত মাওলানা কিরানভী رحمة اللہ علیه প্রায় তিন বৎসর পর্যন্ত তাঁকে আরবী ভাষা ও সাহিত্য শিক্ষা দেন৷ অতঃপর শাইখ আব্দুল ওয়াহহাব , মাহমুদ আব্দুল ওয়াহহাব رحمة اللہ علیه (মিশর) এর নিকট ও দুই বৎসর উচ্চতর আরবী ভাষা ও সাহিত্যের প্রশিক্ষণ নেন৷ সাথে সাথে প্রচলিত শিক্ষাব্যবস্থা অনুযায়ী দারুল উলূম দেওবন্দের স্বনামধন্য শিক্ষকমন্ডলী থেকে শিক্ষা লাভ করতে থাকেন ৷ ১৯৬৩ ঈ, সনে দাওরায়ে হাদীস পাশ করে শিক্ষা সমাপ্তির সনদ হাসিল করেন ৷
শিক্ষকবৃন্দ:
ফখরুল মুহাদ্দিসীন হযরত মাওলানা সায়্যিদ ফখরুদ্দীন মুরাদাবাদী رحمة اللہ علیه, হযরত শাইখুল আদব মাওলানা ইজাজ আলী رحمة اللہ علیه, আল্লামা ইব্রাহীম বলিয়াভী رحمة اللہ علیه,হযরত মাওলানা জলিল আহমদ কিরানভী رحمة اللہ علیه, হযরত মাওলানা আখতার হোসাইন দেওবন্দী এবং হযরত মাওলানা ওয়াহীদুজ্জামান কিরানভী رحمة اللہ علیه প্রমুখ ৷
বাই‘ আত ও খিলাফত:
শিক্ষা জীবন শেষ করার পর আধ্যাত্মিকতার দুর্গম পথে পা রাখলেন ৷ স্বীয় বড় ভাই কুতবুল আকতাব ফিদায়ে মিল্লাত, সায়্যিদ আস’ আদ মাদানী رحمة اللہ علیه এর নিকট বাই’ আত হয়ে তার হিদায়ত ও প্রদর্শিত পথে পরিচালিত হয়ে মারেফাতের বন্ধুর ঘাঁটিসমূহ অতিক্রম করতে লাগলেন ৷যেহেতু স্বীয় পিতা কুতবুল আলম হোসাইন আহমদ মাদানী رحمة اللہ علیه শৈশবে তাঁর প্রতিপালন এমনভাবেই করেছিলেন ৷ তাই অতি অল্প সময়ে অথৈ সমুদ্র পাড়ি দিয়ে ফেললেন ৷কিছুদিনের মধ্যেই ইজাজতে বাই’ আত, খিরকায়ে খিলাফত স্বীয় জ্যেষ্ঠভ্রাতা থেকে হাসিল করেন ৷
এ ছাড়া স্বীয় পিতা,ও ফিদায়ে মিল্লাতের অনুস্মরণে দীর্ঘ ১৪ মাস মদীনা মুনাওরায় অবস্থান করত: রিয়াজত মুজাহাদা করতে থাকেন ৷ খুব পাবন্দী ও সতর্কতার সাথে রওযাপাকে সাঃ সময় অতিবাহিত করে হুযুর সাঃ এর রূহানী ফয়েজ হাসিল করেন ৷
কর্মজীবন:
সর্ব প্রথম কর্মজীবনের সূচনা ১৯৬৫ ঈ, সনে বিহার প্রদেশের প্রসিদ্ধ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান জামিয়া কাসিমিয়া গয়ায় শিক্ষক হিসাবে যোগদানের মাধ্যমে শিক্ষকতার জীবন শুরু করেন ৷ ১৯৬৯ ঈ, সনে দারুল উলূম দেওবন্দের শাইখুল হাদীস এবং তৎকালীন জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি মাওলানা সায়্যিদ ফখরুদ্দীন সাহেব رحمة اللہ علیه এর হুকুমে “জামিয়া কাসিমিয়া মাদরাসা শাহী মুরাদাবাদে মুদাররিস পদে যোগদান করেন ৷ ১৯৭১ ঈ,সনে হযরত মাওলানা ফখরুদ্দীন رحمة اللہ علیه তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও পরিচালনার দক্ষতা দেখে শিক্ষা কমিটির কনভেনার এবং ১৯৭২ ঈ,সনে সহকারী শিক্ষা সচিব হিসাবে নিয়োগ দেন ৷তখন মাওলানা ফখরুদ্দীন رحمة اللہ علیه নিজেই শিক্ষা সচিব ছিলেন৷
১৯৮২ ঈ, সনে দারুল উলূম দেওবন্দের মজলিসে শুরার আহবানে মুহাদ্দিস পদে যোগদান করেন ৷ এবং ১৯৯৬-২০০৮ ঈ, পর্যন্ত দারুল উলূম দেওবন্দের শিক্ষা সচিব ছিলেন ৷ তিনি তার দায়িত্ব পালনকালে যারপরনাই মেহনত করে হিফয বিভাগ,ক্বিরায়াত বিভাগ,ও প্রাথমিক আরবী বিভাগসমূহ অতুলনীয়ভাবে গড়ে তুলেছেন ৷
রাজনৈতিক জীবন:
জুলাই ১৯৮৪ ঈ,সনে জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য নির্বাচিত হন৷ ২০০৬ ঈ,সনে হযরত ফিদায়ে মিল্লাত رحمة اللہ علیه এর ওফাতের পর জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের সভাপতি নির্বাচিত হন ৷ এবং অদ্যাবধি এ পদে সমাসীন রয়েছেন ৷ পুরা বিশ্বে বিশেষ করে হিন্দুস্তানে তার নেতৃত্বে জমিয়তের কাজ দিন দিন আর বেগবান হচ্ছে ৷ তিনি ভারতের মুসলমানদের একক রাহবর হিসাবে কাজ করে যাচ্ছেন ৷
রচনাবলী:
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত হযরত শাইখুল ইসলাম মাদানী رحمة اللہ علیه এর ইলম- হিকমতের হিফাযত করত: সর্বপ্রথম ১৯৮০ ঈ,সনে হিন্দী ভাষায় কুরআনুল কারীমের তাফসীর লিখার কাজ আরম্ভ করেন এবং দু’ খন্ডে ১৯৯১ ঈ,সনে সম্পন্ন করেন ৷
★ ৭২২ পৃষ্ঠার দু’ খন্ডে বিভক্ত ফিকহে হানাফির ইকদুল ফারায়িদ ফি তাকমীলে কায়দিস্ শারাইদ মারুফ বি- শারহি মানজুমাহ ইবনে ওহ্বান এর পান্ডুলিপি নিজে পরিমার্জন ও সংশোধন করতঃ সর্বপ্রথম প্রকাশ করেছেন ৷
★জগৎবিখ্যাত মুহাক্কিক আলেম হাফিয বদরুদ্দীন আইনী رحمة اللہ علیه এর অনুপম অবদান ” নুখাবুল আফকার ফি তানকীহে মাবানীল আখবার ফি শরহে মা’ আনীল আছার ” (ত্বহাবী শরীফ) এর হস্ত লিখিত পান্ডুলিপি মিশরের আল – আজহার লাইব্রেরী থেকে সংগ্রহ করতঃ সংশোধন পরিমার্জন করে প্রকাশের কাজ শুরু করেন, যা আল্লাহ তা’ আলার অশেষ মেহেরবানীতে আট হাজার পৃষ্ঠায় সম্পন্ন হয়েছে ৷ এই দুষ্প্রাপ্য গ্রন্থখানি ইতিপূর্বে কখনো ছাপানো হয় নাই ৷
★ “নকশে হায়াত ” যে গ্রন্থখানি হযরত শাইখুল ইসলাম মাদানী رحمة اللہ علیه এর স্ব- রচিত আত্মজীবনী, এতদিন পর্যন্ত উর্দূ ভাষায়ই ছিল৷ উক্ত গ্রন্থখানি আরবী ভাষায় ভাষান্তরিত করার সৌভাগ্য হযরত মাওলানা আরশাদ মাদানী (মা,জি,আ,) এর হাসিল হয়েছে৷
★” বুরহান শরহে মাওয়াহিবুর রহমান ” নামক গ্রন্থটি পরিমার্জনের কাজ করেছেন ৷ এটি ফিকহে হানাফীয়্যার একটি দুঃস্প্রাপ্য গ্রন্থ যা মদীনা শরীফ থেকে ছেপে প্রকাশিত হয়েছে ৷ এ ছাড়া আরও অনেকগুলো গ্রন্থ প্রকাশিত হওয়ার পথে রয়েছে ৷
★নিরক্ষরতা দূরীকরণ ও সামাজিক খিদমাত
★ “মাদানী চ্যারিটেরিয়েল ট্রাষ্ট” ১৯৯৭ ঈ,সনে প্রতিষ্ঠা করেন ৷এ সংগঠনের মাধ্যমে সর্বপ্রথম ধর্মীয় পরিবেশে আধুনিক শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করেন ৷এজন্য দেওবন্দে মাওলানা মাদানী মেমোরিয়াল ইংলিশ মিডিয়াম স্কুল প্রতিষ্ঠা করেন ৷উক্ত ট্রাষ্টের অধীনে বহুসংখ্যক মাদরাসা ও মক্তব প্রতিষ্ঠা লাভ করে ৷ বিশেষভাবে হরিয়ানা, পাঞ্জাব,হিমাচল, প্রদেশে ধর্মান্তরিত এলাকাগুলোতে আবাসিক মাদরাসা এবং অনাবাসিক মক্তব প্রতিষ্ঠা করেন ৷ পাঞ্জাবে আই,টি,আই প্রতিষ্ঠা, এমনভাবে পিছিয়ে পড়া দরিদ্র এলাকাসমূহে মসজিদ নির্মাণ এবং অন্যান্য সমাজিক ও মানবিক সাহায্য- সহযোগিতা করে যাচ্ছেন ৷
সফর:
ভারতবর্ষ ও পৃথিবীর বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকাসমূহে তাদের আমন্ত্রনে ইলমী,দাওয়াতী-সেমিনার, সিম্পোজিয়াম,ধর্মীয় মাহফিল- সম্মেলনে যোগদান করতে থাকেন ৷এসব সফরের মাঝে বাংলাদেশ,পাকিস্তান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, মিশর, মালাভি জাম্বিয়া, দক্ষিণ আফ্রিকা, কাতার, আমেরিকা, কানাডা, পানামা, বারবাডোজ, ট্রানিডার,মরিশাস, রিউনিয়ন, ব্রিটেন,সৌদিআরব ইত্যাদি রাষ্ট্রসমূহ উল্লেখযোগ্য ৷ কিছু দিন পূর্বে আরো সাতটি দেশ সফর করে এসেছেন ৷ তিনি ভারতবর্ষের বিভিন্ন মাদরাসা ও সংগঠনের পৃষ্ঠপোষক এবং সভাপতিও বটে৷ এ ছাড়া কিছুদিন পূর্বে ” রাবেতায়ে আলম-আল ইসলামী মক্কা মোকাররমা এর আজীবন শুরার সদস্য নির্বাচিত হন ৷
দরগাহে ইলাহীতে দু’আ করি, হে আল্লাহ ! দারুল উলূম দেওবন্দ এবং জমিয়তে উলামায়ে হিন্দ কে হযরত ওয়ালার নেতৃত্বে দিন দিন তারাক্কীর উঁচু শিখরে পৌঁছে দিন ৷ আমদের উপর হযরতের ছায়াকে আর দীর্ঘ করে দিন ৷ (সংগ্রহীত)