elektronik sigara

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

 

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

 

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

 

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

 

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই ‍দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

www.islamidars.com

ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)

হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।

হিদায়াত কি

আল্লাহ তা‘আলা দুনিয়াতে দুটি রাস্তা চালু করেছেন, একটি হিদায়াত এবং জান্নাতের রাস্তা। আর অপরটি গোমরাহী এবং জাহান্নামের রাস্তা। পবিত্র কুরআনে পাকে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

إِنَّا هَدَيْنَاهُ السَّبِيلَ إِمَّا شَاكِرًا وَإِمَّا كَفُورًا

‘আর আমি তাকে [মানুষকে] পথ দেখিয়েছি, হয়তো সে কৃতজ্ঞ হয়েছে, অথবা অকৃতজ্ঞ । [সূরা দাহর; ৩]

হিদায়াত আল্লাহ তা‘আলার এমন এক নেআমাত, যা আমাদের মৃত্যু পর্যন্ত চাইতে থাকতে হবে। হিদায়াতের অনেক অর্থ আছে। যেমনঃ এর একটি অর্থ হলো জান্নাতের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়া। আরেকটি অর্থ হলো, জান্নাতের পথে চলার এবং মৃত্যু পর্যন্ত তাতে কায়েম থাকার তাওফীক দান করা। আম্বিয়া ‘আলাইহিমুস সালামকে আল্লাহ তা‘আলা কেবল মানুষকে জান্নাতের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য পাঠিয়েছিলেন। তারা কাউকে হাতে ধরে জান্নাতের রাস্তায় উঠিয়ে দিতে সক্ষম ছিলেন না; বরং এ ক্ষমতা আল্লাহ তা‘আলা রেখেছেন নিজের হাতে। কোনো নবী-রাসূল কিংবা কোনো পীর-মাশায়েখের হাতে রাখেননি। পবিত্র কুরআনে কারীমে আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন,

إِنَّكَ لَا تَهْدِي مَنْ أَحْبَبْتَ وَلَكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَنْ يَشَاءُ

‘(হে রাসূল!) সত্যি কথা হলো, আপনি নিজে যাকে ইচ্ছা করবেন তাকে হিদায়াতপ্রাপ্ত করতে পারবেন না; বরং আল্লাহ যাকে চান হিদায়াতপ্রাপ্ত করেন। কারা হিদায়াত কবুল করবে তা তিনিই ভালো জানেন।’ (সূরা কাসাস:৫৬)

আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে জান্নাতের রাস্তায় চলার জন্য তাওফীক দান করেছেন। এখন মৃত্যু পর্যন্ত যেন এই জান্নাতের রাস্তার উপর কায়েম থাকতে পারি, এর জন্য দু‘আ করতে থাকতে হবে। ইবলিশ যেন ধোঁকা দিয়ে আমাদেরকে এই পথ থেকে সরাতে না পারে। কারণ হিদায়াত এমন নাযুক বিষয় যে, একটু অসতর্ক হলেই ছুটে যেতে পারে।

কুরআন-হাদীসে এতদসংশ্লিষ্ট অনেক ঘটনা রয়েছে। এমন অনেক বুযুর্গ ছিলেন, যারা হাত তুললেই দু‘আ কবুল হয়ে যেত। অথচ একটু দুনিয়ামুখী হওয়ার কারণে আল্লাহ তার থেকে হিদায়াতের নেয়ামতকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। তার জিহ্বা এক হাত বড় হয়ে বের হয়ে গিয়েছিল এবং অবশেষে তার মুত্যু বেঈমান অবস্থায় হয়েছে!

আল্লাহ কারো মুখাপেক্ষী না। যে ব্যক্তি-ই দুনিয়ার দিকে ঝুঁকেছে, আল্লাহ তার নিকট থেকে হিদায়াতকে ছিনিয়ে নিয়েছেন। এমন একটি-দুটি ঘটনা নয়, বরং অনেক ঘটনা কুরআন-হাদীসে রয়েছে। এবং পরবর্তী যমানারও এমন ঘটনা রয়েছে।

বাদশা আকবরের দরবারে একজন বড় আলেম ছিলেন, যিনি আরবীতে কুরআনের ত্রিশ পারার তাফসীর লিখেছিলেন নুকতাবিহীন অক্ষর দিয়ে। আরবীতে নুকতাবিহীন অক্ষরের সংখ্যা কম। তারপরেও এ ব্যক্তি এতো জ্ঞানী ছিলেন যে, এমন নুকতাবিহীন শব্দ দিয়ে বাক্য তৈরী করে তাফসীর লিখেছেন। চিন্তার বিষয় যে, লোকটা কতো বড় জ্ঞানী! কিন্তু দেখা গেল পরবর্তীতে, সে হিদায়াতের উপর কায়েম ছিল না। যদিও তার তাফসীরগ্রন্থ এখনো আছে..!

আল্লাহ আমাদেরকে হেফাযত করেন, আমীন।

উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব

মানবজাতিকে জান্নাতের রাস্তা দেখিয়ে দেওয়ার জন্য আল্লাহ তা‘আলা যুগে যুগে অনেক নবী রাসূল পাঠিয়েছেন। কুরআনে আল্লাহ পাক চার স্থানে বয়ান করেছেন যে, আল্লাহ রাব্বুল আলামীন, আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামকে দিয়ে দীন কায়েম করার জন্য চারটি দায়িত্ব পুরা করিয়েছেন। সকল নবীরা (আ.) দীন কায়েমের জন্য এই চার কাজ করেছেন। ১. দাওয়াত ও তাবলীগ; ২. তালীমে কিতাব; ৩. তালীমে সুন্নাহ; ৪. আত্মশুদ্ধি।

এতদসংশ্লিষ্ট কুরআনে কারীমের নির্দেশনা কুরআনে মোট চার স্থানে এসেছেঃ প্রথম পারার ১৯ নং পৃষ্ঠায়, দ্বিতীয় পারার ২ নং পৃষ্ঠায়, চতুর্থ পারার ১০ নং পৃষ্ঠায়, ২৮তম পারার সূরা যুমার।

উলামাদের দায়িত্বঃ

আগে এক নবীর (আ.) পরেই আরেকজন নবী এসেছেন। সকালে কোন নবী দুনিয়া থেকে চলে গেছেন, তো বিকালে আরেকজন নবীর আবির্ভাব হয়েছে। কিন্তু আমাদের নবীর পরে আর কোন নবী আসেন নাই, আসবেন না। তিনি-ই আখেরী নবী। এই জন্য এই নবীওয়ালা কাজ পুরো উম্মতকে দেয়া হয়েছে। আম্বিয়া আলাইহিমুস সালামের ওয়ারিস হিসাবে উলামায়ে কেরামের দায়িত্বও এই চারটি। যার ব্যাখ্যা হলো যে, একজন আলেমের জন্য উক্ত চার দায়িত্বের অধীনে নিম্নোক্ত ছয়টি বিষয়ে শিক্ষা লাভ করা এবং জনসাধারণকে শিক্ষা দেওয়া আবশ্যকঃ

১. ঈমান শিক্ষা করা।

২. ইবাদত সুন্নত অনুযায়ী করা।

৩. আয়-রোজগার, উপার্জন হালাল রাখা।

৪. মাতা-পিতা সহ বান্দার হক আদায় করা।

৫. অন্তরের রোগের চিকিৎসা করা অর্থাৎ আত্মশুদ্ধি করা.

৬. আখিরী নবীর উম্মত হিসেবে যে দায়িত্ব এসেছে সেই কাজ করা অর্থাৎ দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনত করা।

নিজের পরিচিত মহলে এই কাজ করতে হবে আবার সারা পৃথিবীজুড়ে এই কাজ করতে হবে। উলামাদের দায়িত্ব এই ৬টি বিষয় সাধারণ লোকদেরকে ভালোভাবে বুঝানো এবং শিক্ষা দেয়া।

এ ছয়টি বিষয় শিক্ষা করা এবং জনসাধারণকে শিক্ষা দেওয়া ছাড়াও উলামায়ে কেরামের আরো একটি দায়িত্ব আছে, যা নবীজি সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হাদীসে পাকের মধ্যে বলেছেন।

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وتأويل الجالين وانتحال المبطلين

এই ইলম (কুরআন-হাদীস) কে ধারণ করবে, প্রত্যেক উত্তরসূরীদের মধ্যে হতে ঐ সকল (উলামায়ে কেরাম), যারা আস্থাভাজন হিসাবে স্বীকৃত। তারা এ ইলম থেকে বাড়াবাড়ির শিকার ব্যক্তিদের বিকৃতিসাধন, অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা এবং বাতিলপন্থিদের কারচুপিকে রোধ করবে। (মুকাদ্দামা; আত্তামহীদ লি ইবনে আব্দিল বার; ১/৫৯)

অর্থাৎ উলামাদের আরেকটি দায়িত্ব হলোঃ কেউ যদি ইসলামের ক্ষতি করতে আসে, ইসলামের নামে কেউ কোন কিছুর ভুল প্রচার করে বা ইসলামের কোন বিষয় ভুল ব্যাখ্যা করে, তাহলে এই ভুল যে ব্যক্তি করলো তাকে বলতে হবে যে, তার এই কাজ ভুল। সে যেন এ ভুল কথা/কাজ থেকে ফিরে আসে এবং জনগণকে জানিয়ে দেয় যে, আমার অমূক কথাটি ভুল ছিলো। সহীহ কথা এরূপ- এটাকে বলা হয় ‘রুজু’ করা। তাকে ভুল ধরিয়ে দেওয়ার পরেও যদি সে ব্যক্তি ‘রুজু’ না করে, তাহলে জনগণকে ঐ ব্যক্তির ভুলের ব্যাপারে সচেতন করতে হবে। স্পষ্ট জানিয়ে দিতে হবে এটা ইসলামের পরিপন্থি, এটা সঠিক না। জনসাধারণকে তাদের ঈমান-আমল হিফাযতের নিমিত্তে এ সতর্কীকরণ উলামায়ে কেরামের জন্য জরুরী।

এ হাদীসের ব্যাখ্যা এটাই যে, যারা দীনের ব্যাপারে বাড়াবাড়ির শিকার, তাদের প্রতিহত করা উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। তাদের ভুল ব্যাখ্যা, ভুল তাফসীরের ব্যাপারে জনগনকেও জানিয়ে দেয়া উলামায়ে কেরামের দায়িত্ব। এই সতর্কীকরণ গীবতের অন্তর্ভূক্ত নয়। এ কারণেই উলামায়ে কেরাম কুরআন-হাদীসের অপব্যাখ্যাকারী শিয়া এবং কাদিয়ানীদের বিভ্রান্তি জনসাধারণকে জানিয়ে থাকেন।

আল্লামা তাহির আল বুখারী রহ. তার ফাতাওয়া গ্রন্থ খুলাসাতুল ফাতাওয়া”-তে লিখেছেন-

“আন নাওয়াযিল”-এ নাসির রহ. [বলখের বিখ্যাত হানাফী ফকীহ]-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিলো যে, একজন ব্যক্তি অপর আরেকজন ব্যক্তির নিকট যে কিনা বাতিল আকিদা বিশ্বাস লালনা করে, এই নিয়তে যাতায়াত করে যেন তাকে তার গলদি (ভুল) থেকে বের করে আনতে পারে এবং এই গমনাগমনকারী ব্যক্তি সুপরিচিত এবং ঐ সমস্ত লোকদের অন্তর্ভূক্ত যাদেরকে অনুসরণ করা হয়; (উত্তরে তিনি জানান) সেক্ষেত্রে এমন ব্যক্তির জন্য এরূপ (বাতিল আকীদার) লোকদের নিকট গমনাগমন পছন্দনীয় নয়। (খুলাসাতুল ফাতাওয়া : ৪/৩৩৫)

হানাফীর প্রসিদ্ধ ফকীহ আল্লামা ইবনে নুজাইম রহ. (মুত্যু: ৯৭০ হিঃ) তার প্রসিদ্ধ গ্রন্থ “আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ির”-তে ইমাম আবু হানিফা রহ. কর্তৃক তাঁর প্রিয় শাগরেদ ইমাম আবু ইউসুফ রহ. কে উপদেশ বর্ণিত হয়েছে-

যখন তুমি বুঝবে যে, কোনো ব্যক্তি [দীনী বিষয় ব্যতিত] দোষী, তখন এটি কারো সামনে উল্লেখ করো না। বরং তার জন্য ভালো কামনা কর এবং দীনী কোনো ব্যাপার ছাড়া তার অন্য বিষয়ে তার ভালো গুনসমূহ মানুষের সামনে বর্ণনা কর। কিন্তু তুমি যদি বুঝতে পারো যে, তিনি দীনী ব্যাপারে কোনো গলদ কাজের সাথে জড়িত (যেমন যদি তার কোনো কুফরী আকিদা থাকে) তাহলে তার ব্যাপারটি তুমি মানুষের নিকট জানাও, যাতে মানুষ তাকে অনুসরন না করে এবং তার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে পারে। [আল আশবাহ ওয়ান নাযায়ির; ২/৭১২)

কাজেই উলামায়ে কেরামের জন্য মাওলানা সা‘আদ সাহেবের ভুলসমূহ উম্মাতের সামনে স্পস্ট করে তাদেরকে সতর্ক করে দেওয়া দীনী দৃষ্টিকোণ থেকেই আবশ্যক।

উলামায়ে কেরাম মাওলানা সাআদ সাহেবের বিরোধিতা কেন করছেন?

বর্তমানে উলামায়ে কেরাম বিশেষ করে উলামায়ে দেওবন্দ মাওলানা সা‘আদ সাহেবের অপব্যাখ্যার ভুল ধরছেন এবং তাকে জনসম্মুখে ভুল স্বীকার করে রুজু করতে বলেছেন। কিন্তু দুঃখের বিষয় যে, তিনি দীর্ঘদিন হয়ে গেলেও এ কাজটি করছেন না। ফলে বাধ্য হয়ে উলামায়ে কেরাম দীনী দায়িত্ব পালনার্থে এবং সাধারণ মুসলমানদের ঈমান রক্ষার্থে তার অপব্যাখ্যাগুলো সঠিক ব্যাখ্যা সহকারে জনগণের সামনে পেশ করেছেন।

এটা উলামায়ে কেরাম তাদের দীনী দায়িত্বের কারণেই করেছেন। কিন্তু আফসোসের বিষয় হলো, মাওলানা সা‘আদ সাহেবের অনুসারীরা এটাকে গীবত মনে করছে। তার ভক্তরা বলে বেড়াচ্ছে যে, “উলামাদের তেল বেশী হয়ে গেছে। আমরা যেহেতু রমযানে মাদরাসায় চাঁদা দেইনি, তাহলে মাদরাসা চলে কিভাবে? নিশ্চয়ই ইহুদীরা টাকা দিয়েছে, নাউযুবিল্লাহ!”

এই যে উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে সা‘আদ সাহেবের অনুসারীরা বিদ্বেষমূলক কথাগুলো বলে বেড়াচ্ছে, এটা কি কোন দীনী কাজ? এর দ্বারা কি দীনের কোনো উপকার হচ্ছে? কখনোই না। সত্যিকার অর্থে এটাই গীবত। এই কথাগুলো যারা বলছে, গীবত ও ফেতনা সৃষ্টি করার কারণে তাদের ঈমানের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। তাদের তাওবা করে সঠিক রাস্তায় ফিরে আসা উচিৎ।

উলামাদের সতর্কীকরণ গীবতের অন্তর্ভূক্ত নয়ঃ

আমরা উলামারা যা বলছি এগুলো দীনের স্বার্থে। জনগণের ঈমান হেফাজতের জন্য বলছি। আমাদের উদ্দেশ্য নিম্নোক্ত আয়াত এবং হাদীসের উপর আমল করা।–মিশকাত

إِنْ أُرِيدُ إِلَّا الْإِصْلَاحَ مَا اسْتَطَعْتُ وَمَا تَوْفِيقِي إِلَّا بِاللَّهِ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ أُنِيبُ

নিজ সাধ্যমত সংস্কার করা ছাড়া অন্য কোনো উদ্দেশ্য আমার নেই। আর আমি যা কিছু করতে পারি, তা কেবল আল্লাহর সাহায্যেই পারি। (সূরা হুদ; আয়াত ৮৮)

يحمل هذا العلم من كل خلف عدوله ينفون عنه تحريف الغالين وتأويل الجالين وانتحال المبطلين

এই ইলম (কুরআন-হাদীস) কে ধারণ করবে, প্রত্যেক উত্তরসূরীদের মধ্যে হতে ঐ সকল (উলামায়ে কেরাম), যারা আস্থাভাজন হিসাবে স্বীকৃত। তারা এ ইলম থেকে বাড়াবাড়ির শিকার ব্যক্তিদের বিকৃতিসাধন, অজ্ঞদের অপব্যাখ্যা এবং বাতিলপন্থীদের কারচুপিকে রোধ করবে। (মুকাদ্দামা; আত্তামহীদ লি ইবনে আব্দিল বার; ১/৫৯)

কাজেই মাওলানা সা‘আদ সাহেবের ভুল ব্যাখ্যার ব্যাপারে জনগণকে সাবধান করা গীবতের অন্তর্ভূক্ত নয়। আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে ফেরাউন, কারুন, আবু লাহাব, আবু যাহেলের নিন্দা কেন করেছেন? তাহলে কি আল্লাহ গীবত করেছেন, নাউযুবিল্লাহ। আল্লাহতো আমাদেরকে ঈমান শিক্ষা দেয়ার জন্য এবং কুফর থেকে বাঁচানোর জন্য এই সমস্ত ঘটনা বর্ননা করেছেন। বতর্মানেও উলামায়ে কেরাম মুসলমানদের ঈমান হেফাজতের জন্য, ঈমান রক্ষা করার জন্য কুরআন-হাদীসের আলোকে সা‘আদ সাহেবের ভুলগুলো জনসাধারণকে অবহিত করতে বাধ্য হচ্ছেন।

মাওলানা সা‘আদ সাহেবের সাথে উলামায়ে কেরামের ব্যক্তিগত কোন দুষমনি বা শত্রুতা নেই। তার খান্দান অনেক উঁচু খান্দান। লাখো লোক তার খান্দানের মাধ্যমে হিদায়াত পেয়েছেন। এর অর্থ এই না যে, তার খান্দানের সকল লোকই সুনিশ্চিতভাবে কেয়ামত পর্যন্ত হকের উপর থাকবেন এবং সঠিক কিংবা ভুল-যাই তারা বলবেন, তা আমাদেরকে মানতে হবে..!

হযরত নূহ আ. এর ছেলে কাফের ছিলো, ইবরাহীম আ. এর পিতা কাফের ছিলো, নবীর খান্দানের হওয়া সত্ত্বেও তারা হক ছিলো না। ঠিক তেমনি মাওলানা সা‘আদ সাহেবের খান্দান অনেক উচু, কিন্তু দীনের ব্যাপারে তার দেয়া ব্যাখ্যা অনেক হক্কানী আলেমের কাছে সহীহ প্রমাণিত হয়নি। কাজেই তিনিও বর্তমানে হকের উপর নেই।

দু’চারজন নামধারী আলেম আছে, যারা সা‘আদ সাহেবের পক্ষে কথা বলছে। এরা কারা? যাঁচাই করে দেখা গেছে এরা এক যমানায় কাকরাইলের সাথে সম্পর্ক রাখতো। এখন নেই। কারণ তাদের কু-কর্মের কারণে কাকরাইল থেকে তাদেরকে বহিষ্কার করা হয়েছে। কাকরাইলে যখন কোন আরব মেহমান আসতো, ছলে-বলে তাদেরকে নিজেদের সাথে নিয়ে গিয়ে এই নামধারী আলেমরা আরব মেহমানদের থেকে চাঁদা কালেকশন করতো। কাকরাইলের মুরুব্বিরা যখন জানতে পারলেন তখন এই নামধারী আলেমদের কাকরাইল থেকে বের করে দিলেন। এই বহিষ্কৃত লেবাসধারী আলেমরাই এখন মাওলানা সা‘আদ সাহেবের ভুলগুলোর পক্ষে সাফাই গাইছে। এই লেবাসধারী আলেমদের যথেষ্ট ইলমও নেই। তাই এদের কথা না শুনে শীর্ষস্থানীয় আলেমরা কি বলে তা শুনতে হবে। দারুল উলুম দেওবন্দ কি বলে তা শুনতে হবে। যতদিন তিনি দারুল উলূমের আস্থা অর্জন করতে না পারবেন, ততদিন আমরা এই ব্যাপারে জনগণকে সতর্ক করতে থাকবো, যেন তার ভুল ব্যাখ্যার দরুন কেউ গোমরাহ না হয়। এ সতর্কীকরণ আমাদের দায়িত্ব। এ দায়িত্বকে ‘গীবত’ বলে মিথ্যা প্রচারণা করা অত্যান্ত দুঃখজনক। মনে রাখতে হবে, দাওয়াত ও তাবলীগের প্রাণপুরুষ মাওলানা ইলয়াস রহ .বলেন,

“একজন সাধারণ মুসলমান সম্পর্কেও কোন কারণ ছাড়া বদগুমানী (খারাপ ধারণা পোষণ করা) নিজেকে ধ্বংসের দিকে নিক্ষেপ করে। আর উলামায়ে কেরামের উপর প্রশ্ন উত্থাপন (বদগুমানী করা) তো এর চেয়ে অনেক বেশী মারাত্মক ও ভয়ংকর’।

এরপর বলেন, ‘আমাদের তাবলীগের এই তরীকায় মুসলমানকে ইজ্জত করা এবং উলামায়ে কেরামকে ইহতিরাম করা বুনিয়াদী এবং মৌলিক বিষয়। প্রত্যেক মুসলমানকে ইসলামের কারণে ইজ্জত করতে হবে। আর উলামায়ে কেরামকে ইলমে দীনের কারণে অত্যন্ত সম্মান করা কর্তব্য’।

এরপর বলেন, ‘ইলম এবং যিকিরের কাজ এখনও আমাদের মুবাল্লিগদের আয়ত্তে আসেনি। এটা নিয়ে আমার খুব চিন্তা হয়। আর এর তরীকা এটাই যে, এই সাথীদেরকে আহলে ইলম এবং আহলে যিকিরগণের নিকট পাঠানো হবে যেন এরা তাঁদের তত্ত্বাবধানে তাবলীগও করে এবং তাঁদের ইলম ও সাহচর্য দ্বারা উপকৃতও হয়’। [মাওলানা মনযূর নোমানী কৃত মালফূযাতে মাওলানা ইলয়াস; মালফূয নং ৫৪]

হযরত মাওলানা রশীদ আহমাদ গাঙ্গুহী রহ.বলেন, যে ব্যক্তি উলামাদের সঙ্গে বিদ্বেষ রাখে, কবরের মধ্যে তার চেহারা কেবলার দিক থেকে ঘুরিয়ে দেওয়া হয়। যদি বিশ্বাস না হয়, কবর খুঁড়ে দেখে নিও!

সাআদ সাহেবের ভুলসমূহঃ

মাওলানা সা‘আদ সাহেবের প্রতি উলামায়ে কেরামের আস্থা না থাকার মৌলিক কারণ তিনটিঃ

১. দীনের বিভিন্ন বিষয়ের মনগড়া ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ।

২. তাবলীগের গুরুত্ব বোঝাতে গিয়ে তাবলীগ ব্যতীত দীনের অন্যান্য মেহনতকে (যেমন, মাদরাসা শিক্ষা, খানকাহ, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি) হেয় এবং গুরুত্বহীন সাব্যস্ত করা।

৩. পূর্ববর্তী মুরব্বীদের কাজের উসূল থেকে সরে যাওয়া।

দীনের বিভিন্ন বিষয়ের মনগড়া ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণ প্রসঙ্গঃ

তার অপব্যাখ্যার একটি দৃষ্টান্ত হলো যে, তিনি বলেছেন,

ہدایت اگر اللہ کے ہاتھ میں ہوتی تو اللہ تعالیٰ نے نبیوں کو کیوں بھیجا؟

হিদায়াত যদি আল্লাহর হাতেই থাকতো, তাহলে আল্লাহ তা‘আলা নবীদেরকে পাঠালেন কেন!

অর্থাৎ তিনি বলতে চাচ্ছেন যে, হিদায়াত আল্লাহর হাতে নেই; বরং নবীদের হাতে! প্রশ্ন হলো, হিদায়াত যদি নবীর হাতে হয়, তবে নবীজী কেনো তার চাচা আবু তালেবকে হিদায়াত দিয়ে ইসলামে দীক্ষিত করতে পারলেন না? হযরত নূহ আ. কেন নিজ সন্তানকে হিদায়াত দিতে পারলেন না? হযরত ইবরাহীম খলীলুল্লাহ আ. কেন নিজ পিতাকে হিদায়াত দিতে পারলেন না..?

তাবলীগ ব্যতীত দীনের অন্যান্য মেহনতকে (যেমন, মাদরাসা শিক্ষা, খানকা, ওয়াজ মাহফিল ইত্যাদি) গুরুত্বহীন প্রমাণ প্রসঙ্গঃ

১. দীনের অন্যান্য মেহনতের প্রতি তার অবজ্ঞার একটি দৃষ্টান্ত হলো, তিনি বলেন, মসজিদ ভিত্তিক যে দীনী কাজ হয়ে থাকে, শুধুমাত্র এটাই দীনের আসল মেহনত। এর বাইরে দীনের নামে যত মেহনত চলছে, সবই মানুষের বানানো মেহনত।

প্রশ্ন হলো, তিনি যে নিজে নিজামুদ্দীন মাদরাসায় পড়েছেন- তা কি বেকার ছিলো? প্রত্যেক বড় বড় তাবলীগী মারকাযের সাথে মাদরাসা শিক্ষা চালু আছে, এগুলো কি বানোয়াট মেহনত?

২. দীনের অন্যান্য মেহনতের প্রতি তার অবজ্ঞার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, তিনি বলেন,

اجرت لیکر قرآن پاک پڑھانا فاحشہ عورت کی اجرت کے مانند ہے، فاحشہ عورت ان سے پہلے جنت میں چلی جاوے گی۔

কুরআন পড়িয়ে বিনিময় নেয়া পতিতার বিনিময়ের মতো। এমন লোকের আগে পতিতারা জান্নাতে যাবে।

অর্থাৎ যে সমস্ত আলেম দীনি খেদমত করে বেতন নেয়, ঐ আলেমরা যিনাকারিনীর আগে জাহান্নামে যাবে। এই কথাটা হাদীসে আছে সত্য। কিন্তু এই হাদীসের তাফসীর কী, তা বুঝতে হলে ইলম লাগবে। উনি যে ব্যাখ্যা করেছেন তা ভুল। কেননা, এই হাদীস কেবল বেআমল আলেমদের ব্যাপারে বলা হয়েছে অর্থাৎ যাদের কোন আমলতো নেই, আবার হালাল-হারামের যাঁচাই-বাঁছাই না করে নাজায়েয ভাবে পয়সা নেয়। যারা দীন বিক্রি করে দুনিয়া কামাই করে।

একটা উদাহরণ দিচ্ছি। যেমন: মূর্দারের জন্য কুরআন খতম করে টাকা নেয়া হারাম। এখন কোন আলেম যদি এমন কাজ করে তাহলে এমন আলেমদের উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে যে, যিনাকারীরা এই শ্রেণীর আলেমদের আগে বেহেশতে যাবে।

এটা হলো হাদীসের সঠিক ব্য্যাখ্যা। এখন এই হাদীসটি যদি সাধারণদের মজমায় বলা হয় (টঙ্গির ময়দানে বলা হয়) এবং এর সঠিক ব্যাখ্যা না করে দেয়া যে, আলেম বলতে কোন শ্রেণীর আলেমের কথা বলা হয়েছে, তাহলে কি এটা ফিতনা সৃষ্টি করা হলো না? সাধারণ মানুষ ভেবে নিবে আমাদের সব আলেমরাইতো বিনিময় নিচ্ছে। ইমামতি করে, মুয়াজ্জিন হয়ে, মাদরাসায় পড়িয়ে। কাজেই সবাই এ হাদীসের অন্তর্ভূক্ত। তাদের আগে পতিতারা জান্নাতে যাবে..! (নাউযুবিল্লাহ)

মাওলানা সা‘আদ সাহেব প্রথমতঃ এ হাদীসের ভুল ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি হাদীসটির সঠিক ব্যাখ্যা উপস্থাপন করেননি। যদ্দরুণ সাধারণ শ্রোতা এখন এমন মনে করছে যে, যে সকল উলামায়ে কেরাম মাদরাসায় দীনী খেদমত করে বেতন নিচ্ছেন, তারাও এ হাদীসের অন্তর্ভূক্ত..! (নাউযুবিল্লাহ)

দ্বিতীয়তঃ এ হাদীসটি উলামাদের খাস মজলিসে বলার হাদীস, কিন্তু তিনি সেখানে না বলে এ হাদীস জনসাধারণের আম মজমার মধ্যে বলেছেন, যা একেবারেই নির্বুদ্ধিতা কিংবা উলামায়ে কেরামের প্রতি সুস্পষ্ট বিদ্বেষের বহিঃপ্রকাশ! মাওলানা সা‘আদ সাহেবের এ জাতীয় বক্তব্যের কারণে এখন, তাবলীগের মেহনতের দ্বারা জনগণ উলামা বিদ্বেষী হয়ে যাচ্ছে। শুধু তাই নয়; বরং উলামাদের গালী দেনেওয়ালা, উলামাদের ভুল ধরনেওয়ালা, উলামাদের জামার কলার ধরে মারনেওয়ালা লোক পয়দা হচ্ছে।

৩. দীনের অন্যান্য মেহনতের প্রতি তার অবজ্ঞার আরেকটি দৃষ্টান্ত হলো, তিনি বলেন,

جو دعوت میں لگ کر بھی اپنی اصلاح کے لئے کسی بزرگ کی صحبت کی ضرورت محسوس کر رہاہے  اس نے دعوت کو سمجھا ہی نہیں۔

‘‘লোকেরা প্রশ্ন করে, তোমার ইসলাহী সম্পর্ক কার সাথে? তোমরা তাদের বলবে, আমার ইসলাহী সম্পর্ক দাওয়াতের সাথে। যে ব্যক্তি দাওয়াতের কাজে জুড়ে থেকেও নিজের ইসলাহের জন্য কোনো বুযর্গের সোহবতের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে, সে দাওয়াতের কাজ বোঝেইনি।’

আশ্চর্যের বিষয় হলো, একদিকে তিনি আত্মশুদ্ধিকে পৃথক নববী কাজ হিসাবে মানতে চাইছেন না, যা অপব্যাখ্যার শামিল। অপরদিকে নিজে অন্যদের আত্মশুদ্ধির আজীব পদ্ধতি আবিস্কার করেছেন! তার কাছে যে বায়আত হতে আসে, তার হাত নিজের হাতে রেখে তাকে বলতে বলেন, “বলো আমি অমুকের কাছে হাত রেখে, মাওলানা ইলয়াস রহ. এর নিকট বায়আত হলাম”। বায়াত করাচ্ছেন যিন্দা লোক, আর মুরীদ হচ্ছেন মূর্দা লোকের হাতে। যিনি শতবছর আগে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছেন। চৌদ্দশত বছরে এমন আযীব বায়আত কেউ করেননি। কেননা, আপনারা আমার হাতে বায়আত হলেন, কিন্তু মুরীদ হলেন খাযা মাঈনুদ্দিন চিশতী রহ. এর। এটা কী সম্ভব? তিনি কবর থেকে আপনাদের সবক দিবেন কিভাবে? আপনাদের আত্মসংশোধন করবেন কিভাবে? মৃত মানুষ কারো উপকার কিংবা অপকার করতে পারে-এমন আকীদা-বিশ্বাস রাখা তো স্পষ্ট শিরক! কাজেই বায়আতের এ আজীব তরীকা সম্পূর্ণ ভ্রান্ত এবং তার মনগড়া!

মনে রাখতে হবে যে, নবী আ. উলামাদের জন্য যে ৪ কাজ রেখে গেছেন তার প্রত্যেকটা জরুরী। চারটা কাজকেই সমান গুরুত্ব দিতে হবে। যেমন: দুনিয়াবী শিক্ষার লাইনে- প্রাইমারী স্কুল জরুরী, হাইস্কুল জরুরী, কলেজ জরুরী, তেমনি বিশ্ববিদ্যালয়ও জরুরী। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা যদি মনে করেন যে, ‘প্রাইমারীতে কোন লেখা-পড়াই হয় না, কাজেই এটার দরকার নাই’, তাহলে দুনিয়াবী শিক্ষাই বন্ধ হয়ে যাবে।

ঠিক তেমনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে ৪ কাজ রেখে গেছেন, তার কোনটিকে গুরুত্বহীন প্রকাশ করলে, কিংবা কম গুরুত্ব দিলে দীন মিটে যাবে। একজন আলেম যখন কথা বলবেন তখন চারটি বিষয়েই কথা বলবেন। আমাদের সকলের দায়িত্ব এই ৪ বিষয়ে ইলম হাসিল করা এবং একই সাথে এই ৪ কাজ করা। তা‘লীমে কিতাব তথা আল্লাহর দেয়া হুকুম আহকাম জানা। তা‘লীমে সুন্নাহ তথা আল্লাহর হুকুম পুরা করার জন্য হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে সুন্নাত বলে গেছেন, তা শিখে আমল করা। তাবলীগ তথা অন্যদের নিকট আল্লাহর হুকুম এবং নবীজির তরীকা পৌঁছে দেওয়া। এর পাশাপাশি তাযকিয়া তথা হক্কানী আল্লাহওয়ালা পীর-মাশায়েখের কাছে গিয়ে অন্তরের দশটি রোগ দূর করে আত্মশুদ্ধি করা।

এই চারটা যখন এক সাথে হবে, তখন একজন মানুষ পরিপূর্ণ দীনদার হবে। এর একটাও যদি বাদ যায়, তাহলে কারো পক্ষে পরিপূর্ণ দীনদার হওয়া সম্ভব না। আর দীনের সাথে এ আংশিক সম্পৃক্ততার মুহুর্তে কেউ যদি দীনের ব্যাখ্যা করতে যায়, তবে এ ব্যাখ্যা হবে প্রান্থিকতাপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ। যেমন: ছয় অন্ধ ব্যক্তি হাতী দেখে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে ঠিক তেমন। যাদের কারোটাই সহীহ হয়নি। ঠিক তেমনি কেউ যদি ৪টা কাজের কোন একটা বাদ দিয়ে বা গুরুত্বহীন প্রমাণ করে দীনের ব্যাখ্যা দেয়, তবে তার ব্যাখ্যাও হবে এই অন্ধদের হাতি দেখার মতো। অন্ধদের বয়ান দ্বারা যেমন হাতির পরিপূর্ণ ছবি মানস্পটে চিত্রায়িত করা সম্ভব নয়। তেমনি তা‘লীমে কিতাব, তা‘লীমে সুন্নাহ, দাওয়াত ও তাযকিয়া তথা নববী দায়িত্ব চার কাজের সাথে সম্পৃক্ত নয়-এমন ব্যক্তির বয়ান দ্বারাও দীনের পরিপূর্ণ সমঝ অর্জন করা সম্ভব নয়। সে বয়ান দ্বারা শ্রোতা হিদায়াত তো কখনোই পাবে না; উপরন্তু গোমরাহ হবে!

মাওলানা সা‘আদ সাহেব কেবল দাওয়াতকে এমন জোর দিয়েছেন যে, দীনের অন্যান্য মেহনত সব জবাই হয়ে গেছে। মাদরাসার দীনী শিক্ষার মেহনত জবাই হয়ে গেছে, খানকার আত্মশুদ্ধির মেহনত জবাই হয়ে গেছে, ওয়াজ-মাহফিলে বয়ানের মেহনতও জবাই হয়ে গেছে। এভাবে কখনো মানুষের জীবনে হিদায়াত আসবে না; বরং মানুষ উলামা বিদ্বেষী হয়ে দীন থেকে ক্রমেই দূরে সরে যাবে।

অথচ দাওয়াত ও তাবলীগের প্রাণপুরুষ মাওলানা ইলয়াস রহ. এর মেহনত দ্বারা উদ্দেশ্য ছিলো, জনসাধারণকে উলামায়ে কেরামের সাথে জুড়ে দেওয়া। হযরতজী স্বয়ং ইরশাদ ফরমান:

فرمایا: اپنی اس تحریک کے ذریعہ ہر جگہ کے علماءاور اہل دین اور دنیا داروں میں میل ملاپ اور صلح وآشتی کرانا چاہتے ہیں۔

“আমি এই ‘তাহরীকের’ মাধ্যমে প্রত্যেক জায়গায় উলামায়েকেরাম ও বুযুর্গানে দীন এবং দুনিয়াদারদের মাঝে মেলামেশা ও সৌহার্দ্য ভালবাসা ও সম্পৃীতি সৃষ্টি করতে চাই। [মালফুযাত ১০২ নং মালফুয]

সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ. বলেন, “মাওলানা [ইলয়াস রহ.] একদিকে উলামায়ে কেরামকে দাওয়াতের মাধ্যমে আওয়ামের কাছে যাওয়ার এবং আওয়ামের প্রতি দরদী হওয়ার তাগিদ করতেন। অন্যদিকে আওয়ামকে উদ্বুদ্ধ করতেন, যেন তারা উলামায়ে কেরামের কদর ও মর্যাদা বুঝে এবং উসূল ও আদব রক্ষা করে তাঁদের খেদমতে হাজির হয় এবং প্রয়োজনীয় ইলম হাসিল করে। তাদেরকে তিনি উলামায়ে কেরামের যিয়ারত ও মুলাকাতের সাওয়াব এবং তাঁদের খেদমতে হাজির হওয়ার উসূল-আদব শেখাতেন। উলামায়ে কেরামকে দাওয়াত দেওয়ার, তাঁদের থেকে ফায়দা হাসিল করার এবং তাঁদেরকে কাজে যুক্ত করার হিকমত ও পদ্ধতি বলতেন। উলামায়ে কেরামের কোন কথা বা কাজ বুঝে না এলে এর সুব্যাখ্যা গ্রহণ এবং সুধারণা পোষণের অভ্যাস তাদের মাঝে গড়ে তুলতেন। তাদেরকে তিনি উলামায়ে কেরামের খেদমতে পাঠাতেন এবং ফিরে আসার পর অবস্থা জিজ্ঞাসা করতেন যে, কীভাবে গিয়েছ? কী করেছ? কী বলেছ? (ইত্যাদি। অতঃপর প্রয়োজনে) তাদের (আপত্তিকর) সমালোচনা ও প্রতিক্রিয়ার সংশোধন করতেন। এভাবে কারবারী শ্রেণীকেও উলামায়ে কেরামের এত কাছে নিয়ে এসেছিলেন যে, বিগত বহু বছরে (সম্ভবত খেলাফত আন্দোলনের পরে) এমনটি কখনো দেখা যায়নি। [সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী কৃত গ্রন্থ ‘মাওলানা ইলয়াস আওর উনকী দীনী দাওয়াত: পৃ. ১২৩]

দাওয়াত ও তাবলীগের মেহনতে কি কেবল দাওয়াত দেয়া উদ্দেশ্য? নাকি দাওয়াত দিয়ে নিয়ে এসে তা‘লীম দেয়া উদ্দেশ্য? দাওয়াত দিয়ে মসজিদে এনে তাকে কি আবার দাওয়াত দিবো, নাকি তাকে তা‘লীম দিবো? মসজিদে এনে তাকে তা‘লীম দিবো। তা‘লীম দিয়ে তার কালিমা ঠিক করবো, তার ফাতিহা ঠিক করবো, তার নামাযের রুকু সিজদা ঠিক করবো। তাহলে উদ্দেশ্য কি দাওয়াত না তা‘লীম? নিঃসন্দেহে তা‘লীম। যদি তা‘লীম না-ই থাকে, তাহলে দাওয়াত দিয়ে এনে কী করবো? এভাবে কি শুধু দাওয়াতের দ্বারা দীন টিকবে, যদি তা‘লীম না থাকে?

এ কারণেই মাওলানা ইলয়াস রহ. মেওয়াতীদের প্রতি লেখা এক চিঠিতে লেখেন, “মেরে দোস্তো! তোমাদের (আল্লাহর পথে) বের হওয়ার খোলাসা তিন জিনিসকে যিন্দা করা; যিকির, তা‘লীম এবং তাবলীগ। অর্থাৎ তাবলীগের জন্য বের হওয়া যেন তাদেরকে যিকির এবং তা‘লীমের প্রতি আরও বেশি গুরুত্ববান করে। [‏সাইয়্যেদ আবুল হাসান নদভী রহ.কৃত ‘মাকাতিবে হযরত মাওলানা ইলয়াস রহ.; পৃ.১৩৮, মেওয়াতীদের প্রতি লিখিত ১ নং চিঠি]

হজরতজী আরো ইরশাদ ফরমান; ‘আমাদের এই আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হল; সমস্ত মুসলমানদেরকে جميع ما جاء به النبي صلى الله عليه وسلم শেখানো (অর্থাৎ ইসলামের পুরা ইলমী এবং আমলী নেযামের সাথে উম্মতকে সম্পর্কযুক্ত করে দেওয়া।) এটা তো হল আমাদের মূল উদ্দেশ্য’। এরপর হযরত বলেন,

رہی قافلوں کی یہ  چلت پھرتاور تبلیغی  گشت سو یہ اس مقصد کے لئے ابتدائی ذریعہ ہے، اور کلمہ نماز کی تلقین و تعلیم گویا ہمارے پورے نصاب کی “الف بے تے ” ہے۔

বাকি রইল জামাতের চলাফেরা এবং গাশত করা এটা তো হল মূল মাকসাদে পৌঁছার একটি প্রাথমিক স্তর। আর কালিমা এবং নামায শিক্ষা সেটা হল আমাদের পুরা নেসাবের আলিফ, বা, তা-এর শিক্ষা করার মত’।

তিনি আরো বলেন, ‘আর এটাও পরিস্কার কথা যে, আমাদের এই কাফেলা সম্পূর্ণ কাজ করতে পারবে না। বরঞ্চ তাদের থেকে এতুটুকুই হতে পারে যে, সব জায়গায় গিয়ে নিজেদের চেষ্টা-মেহনতের মাধ্যমে উম্মতের মাঝে একটি আলোড়ন ও চেতনা সৃষ্টি করে দিবে এবং সমাজের উদাসীন (তথা দীন সম্পর্কে বেখবর) লোকদেরকে সেখানকার স্থানীয় দীনদার লোকদের সাথে সম্পর্ক করে দিবে। এবং দীন ও ইসলাম নিয়ে চিন্তা ফিকিরকারী স্থানীয় উলামায়ে কেরাম এবং নেককার লোকদেরকে সাধারণ মানুষের ইসলাহ ও সংশোধনের কাজে লাগানোর চেষ্টা করবে..।’ মাওলানা মনযূর নো‘মানী কৃত ‘মালফূযাতে হযরত মাওলানা ইলয়াস; মালফূয নং২৪]

পূর্ববর্তী মুরব্বীদের কাজের উসূল থেকে সরে যাওয়া প্রসঙ্গঃ

‘পূর্ববর্তী মুরব্বীদের কাজের উসূল থেকে সরে যাওয়া’ প্রসঙ্গে দৃষ্টান্ত হলো, মাওলানা সা‘আদ সাহেব দাওয়াত ও তাবলীগের মধ্যে মনগড়া নতুনত্ব সৃষ্টি করেছেন। আগে ছিলো আড়াই ঘন্টার মেহনত হবে। ঘরে ঘরে গিয়ে দাওয়াত দেয়া হবে। কিন্তু উনি তা পাল্টে দিয়ে নতুন এনেছেন দাওয়াত, তালীম, ইস্তেকবাল। যারা বাহিরে ঘুরাফেরা করে, তাদেরকেই শুধু দাওয়াত দেয়া। উনি ফাতাওয়া দিয়েছেন যে, ঘরে ঘরে গিয়ে নাকি দাওয়াত দেয়া ঠিক নয়! অথচ আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফেরদের ঘরে, মজলিসে, বাজারে গিয়ে গিয়ে দাওয়াত দিতেন!

মুন্তাখাবে হাদীস কিতাবটি তৈরি করেছেন হযরতজি মাওলানা ইউসুফ রহ.। যিনি দাওয়াত ও তাবলীগের দ্বিতীয় হযরতজী। এই কিতাব হাদীসের কিতাব। খুব ভালো কিতাব। কিন্তু ইউসুফ রহ. নিজে এই কিতাব লিপিবদ্ধ করার পরেও তিনি এই কিতাবকে সাধারণদের জন্য পাঠ উপযোগী মনে করেননি। অথচ মাওলানা সা‘আদ সাহেব এই কিতাবের তরজমা করিয়ে জনসাধারণের জন্য পাঠ্য সাব্যস্ত করেছেন। যদ্দরুন সাধারণ মানুষ হাদীস পড়ে পড়ে নিজে নিজে মাসআলা বের করে এবং দীনের বিভিন্ন কাজের মনগড়া ব্যাখ্যা দাঁড় করায়। এমনকি উলামায়ে কেরামকেও অজ্ঞ ভাবতে আরম্ভ করে..!

মাওলানা সাআদ সাহেবের বিভ্রান্তির সূচনাঃ

সা‘আদ সাহেবের প্রতি উল্লিখিত তিনটি কারণেই উলামায়ে কেরাম তার প্রতি অনাস্থা প্রকাশ করেছেন। এই ভুলগুলো আরো আগে থেকে উলামাদের বলা উচিৎ ছিলো, কেননা এই ভুলগুলো তিনি অনেক আগে থেকে করে আসছেন। কিন্তু ইজতিমার ময়দানে যারা তার বয়ানের তরজমা করার দায়িত্বে থাকতো, তারা হেকমতের সাথে তার এই ভুল ব্যাখ্যার তরজমা করতো না; বরং এড়িয়ে যেত। আমি নিজে সরাসরি কাকরাইলের মুরব্বীদেরকে জিজ্ঞেস করেছি। আপনারা তার ভুলগুলো কি করতেন? তরজমা যিনি করেন, তিনি উত্তর দিয়েছেন, ‘আমরা তার ভুলগুলো সাধারণদের মজমায় তরজমা করতাম না। আমরা শুধু সঠিক অংশটুকু বলে দিতাম, গলদ অংশের তরজমা করতাম না।’

কিন্তু কাকরাইলের উলামায়ে কেরামসহ ভারত, পাকিস্তান, আরব ও বাংলাদেশের উলামায়ে কেরামের বৃহৎ অংশ এখন মাওলানা সা‘আদ সাহেবের বিরুদ্ধে এই জন্য রূখে দাঁড়িয়েছেন যে, এখন তাকে ইসলাহ করার জন্য সরাসরি দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফতোয়া দেয়া হয়েছে যে, আপনার এই এই ভুল আছে। আপনার প্রথম ভুল হলো মনগড়া তাফসীর করা। আপনার দ্বিতীয় ভুল হলো, আপনি যে বয়ান করেন এর মধ্যে দাওয়াত ছাড়া দীনের অন্যান্য কাজগুলোর ক্ষতি হয়, আপনি জনসাধারণের সামনে দীনের অন্য কাজগুলোকে খাটো করে দেখান। আপনার তৃতীয় ভুল হলো, আপনি আগের তিন মুরুব্বির কাজকে পাল্টে দিয়ে নিজের মনের মতো এই কাজকে ভুল পথে চালাচ্ছেন।

মাওলানা সাআদ সাহেবের ‘রুজু’ প্রসঙ্গঃ

মাওলানা সা‘আদ সাহেবের ‘রুজু’ বা আপন মত প্রত্যাহারের প্রসঙ্গে এ বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে যে, তিনি দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে রুজু করেছেন, কাজেই এখন তার বিরোধিতা করা সঠিক নয়!

সা‘আদ সাহেব রুজু করেছেন কি করেননি এবং তার রুজু গ্রহণযোগ্য বিবেচিত হয়েছি, কি হয়নি- তা জানার আগে আমাদের জানা দরকার যে, শরী‘আতের দৃষ্টিতে রুজু’র অর্থ কি?

রুজু কাকে বলে

রুজু করার অর্থ হলোঃ

১. ভুল স্বীকার করে নেওয়া।

২. ভুল গোপনে করে থাকলে গোপনে আর প্রকাশ্যে করে থাকলে প্রকাশ্যে নিজের ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে সঠিক বিষয়টার ঘোষণা করে দেওয়া। সাহাবী হযরত মুআজ ইবনে জাবাল রাযি. কে নবীজি ওসীয়্যত করে বলেন, “তুমি প্রকাশ্যে [গুনাহ] হলে প্রকাশ্যে [তাওবা করো], গোপনে [গুনাহ] হলে গোপনে [তাওবা করো] । [তবরানী কাবীর; হা.নং ৩৩১, মাজমাউয যাওয়ায়েদ; ১৬৭৫৩] যে সকল মজমাতে বা জনসমাগমে ভুল করা হয়েছে, ঐ সকল মজমাতে বলবে যে, আমি এমন একটি ব্যাখ্যা দিয়েছি, যা ভুল ছিল। সহীটা হলো এটা।

৩. পরবর্তীতে ঐ ভুল আর না করা।

যে ব্যক্তি ভুল ধরিয়ে দিয়েছে তার শুকরিয়া আদায় করা যে, ভাই তুমি আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে উপকার করেছো, অন্যথায় যারা যারা আমার এ ভুলের উপর আমল করতো, তাদের সকলের দায়ভার আমার উপর আসতো!

রুজু প্রসঙ্গে শরী‘আতের এ দৃষ্টিভঙ্গি জানার পর এ কথা স্পষ্ট করেই বলা যায় যে, মাওলানা সা‘আদ সাহেব দীনের যে অপব্যাখ্যা এবং দীনের অন্যান্য শাখার প্রতি অবজ্ঞা করেছেন, সে ভুল থেকে তার রুজু সহীহ হওয়ার জন্য আবশ্যক হলো,

১. ভুল স্বীকার করে নেওয়া।

২. ভুল গোপনে করে থাকলে গোপনে আর প্রকাশ্যে করে থাকলে প্রকাশ্যে নিজের ভুলের স্বীকৃতি দিয়ে সঠিক বিষয়টার ঘোষণা করে দেওয়া। যে সকল মজমাতে বা জনসমাগমে ভুল করা হয়েছে, ঐ সকল মজমাতে বলবে যে, আমি এমন একটি ব্যাখ্যা দিয়েছি, যা ভুল ছিল। সহীটা হলো এটা।

৩. পরবর্তীতে ঐ ভুল আর না করা।

৪. যে ব্যক্তি ভুল ধরিয়ে দিয়েছে তার শুকরিয়া আদায় করা যে, ভাই তুমি আমার ভুল ধরিয়ে দিয়ে উপকার করেছো, অন্যথায় যারা যারা আমার এ ভুলের উপর আমল করতো, তাদের সকলের দায়ভার আমার উপর আসতো!

আর তার তৃতীয় ভুলটির ব্যাপারে তার রুজু সহীহ হওয়ার জন্য আবশ্যক হলো, তিনি দাওয়াত ও তাবলীগের প্রবীন মুরব্বীদের সমন্বয়ে গঠিত মজলিসে শুরার অধীনে পরিচালিত হবেন এবং এ জন্য যে সকল প্রবীন মুরব্বীরা তার ভুল কর্মপন্থার দরুন নিযামুদ্দীন থেকে চলে গিয়েছেন, তাদেরকে ফিরিয়ে আনবেন। উল্লিখিত কাজগুলো যতক্ষণ পর্যন্ত সা‘আদ সাহেব না করবেন, ততক্ষণ তিনি রুজু করেছেন বলে কোনোভাবেই স্বীকৃত হবে না।

দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে রুজু করা প্রসঙ্গঃ

দারুল উলূম দেওবন্দের কাছে তিনি যে রুজুনামা পাঠিয়েছেন, দেওবন্দ তা যথাযথভাবে গ্রহণ করেনি। এ ব্যাপারে সা‘আদ সাহেবের ব্যাপারে দারুল উলূম দেওবন্দের সর্বশেষ ‘ওযাহাতনামা’টি লক্ষণীয়ঃ

………….اس موقع سے یہ وضاحت ضروری  ہےکہ مولانا کے رجوع کو اس واقعے کی حد تک تو قابل اطمینان قرار دیا جا سکتا ہے!لیکن دارالعلوم کے موقف میں اصلا مولانا کی جس فکری بے راہ روی پر تشویش کا اظہار کیا گیا   تھا اس سے  صرفنظر نہیں  کیا جا سکتا؛ اس لئے کہ کیئ بار رجوع کے بعد  بھی وقتا فوقتا  مولانا  کے ایسے نئے  بیانات موصول ہو رہے ہیں ، جن میں وہی مجتہدانہ انداز، غلط استدلالات، اور دعوت سے متعلق اپنی ایک مخصوص فکر پر نصوص        شرعیہ کا غلط انطباق نمایاں ہے، جس کی وجہ سے خدام دارالعوم نہیں؛ بلکہ دیگر علمائے حق کو بھی مولانا کی مجموعی فکر سے سخت قسم کی بے اطمینانی ہے۔

………….مولانا موصوف کی ان دور از کار  اجتہادات سے ایسا لگتا ہے کہ خدا نخواستہ وہ ایسی جدید  جماعت کی تشکیل کے  درپے ہیں جو اہل السنہ والجماعت اور خاص  طور پر اپنے اکابر سے مختلف ہوگی، اللہ تعالی ہم سب کو اکابر و اسلاف کے طریق پر ثابت قدم رکھے، آمین۔

…….جو لوگ دار العلوم دیوبند سے مسلسل رجوع کر رہے ہیں ان سے دوبارہ گذارش کی جاتی ہے کہ جماعت تبلیغ کے داخلی اختلاف سے دار العلوم کا کوئی تعلق نہیں ہے۔ پہلے دن سے اس کا ااعلان کیا جا چکا ہے۔ البتہ غلط افکار وخیالات سے متعلق جب بھی دار العلوم سے رجوع کیا گیاہے دار العلوم نے ہمیشہ امت کی راہنمائی کی کوشش کی ہے۔ دار العلوم اس کو اپنی دینی وشرعی فریضہ سمجھتا ہے۔

[দারুল উলূমের উল্লিখিত ‘ওজাহাতনামার’ জন্য পাঠক দারুল উলূমের ওয়েবসাইটটি ভিজিট করতে পারেন।

www.darululoom-deoband.com]

“এখানে একটা বিষয় স্পষ্ট করা জরুরী। সেটা হলো, এই (মূসা আ. এর) ঘটনার বিষয়তো মাওলানা (সা‘আদ সাহেবে)-র রুজুকে সন্তোষজনক বলা যায়, কিন্তু তাঁর চিন্তাগত বিচ্যুতির ব্যাপারে দারুল উলুমের পক্ষ থেকে যে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়েছিলো, সে আশঙ্কা এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব হচ্ছে না। কারণ, কয়েকবার রুজুর পরও কিছুদিন পর পর তার এমন কিছু নতুন বয়ান আমাদের কাছে পৌঁছাচ্ছে, যেগুলোর মধ্যে আগের সেই মুজতাহিদসুলভ আন্দায, ভুল প্রমাণপদ্ধতি এবং দাওয়াতের ব্যাপারে নিজের বিশেষ চিন্তার সাথে শরী‘আতের বক্তব্যকে অন্যায়ভাবে খাপ খাওয়ানোর চেষ্টা বিদ্যমান। এই কারণে শুধু দারুল উলুমের দায়িত্বশীলগণই নন, বরং অন্যান্য হক্কানী উলামায়ে কিরামদের মাঝেও মাওলানা (সা‘আদ) সাহেবের ‘সামগ্রিক চিন্তার’ ব্যাপারে প্রচন্ড রকমের অনাস্থা রয়েছে।

মাওলানা (সা‘আদ) সাহেবের এই অনর্থক ইজতিহাদ দেখে মনে হয় যে, আল্লাহ না করুন, তিনি এমন এক নতুন দল তৈরির দিকে চলছেন, যারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আত বিশেষ করে নিজেদের আকবিরদের থেকে ভিন্ন রকমের হবে। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সবাইকে আকাবির ও পূর্বসুরীদের পথ ও পদ্ধতির উপর অটল রাখুন। আমীন।”

যে সকল ভাইয়েরা দারুল উলূমের সাথে সম্পর্ক রাখেন, দ্বিতীয়বার তাদের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, তাবলীগ জামা‘আতের আভ্যন্তরীন বিষয়ের সাথে দারুল উলূমের কোনো সম্পর্ক নেই। প্রথম দিন থেকেই দারুল উলূম এ ব্যাপারে তার অবস্থান স্পষ্ট করেছে। তবে ভুল মতাদর্শের ব্যাপারে যখনই দারুল উলূমের অবস্থান জানতে চাওয়া হয়েছে, দারুল উলূম সর্বদাই উম্মতের ‘রাহনুমায়ীর’ চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। দারুল উলূম তার এই প্রচেষ্টা কে দীনী দায়িত্ব মনে করে থাকে।

দারুল উলূমের এ বক্তব্য বিশ্লেষণ করলে কয়েকটি বিষয় স্পষ্ট হয়ে যায়-

১. শতাধিক বিতর্কিত বক্তব্যের মধ্য হতে কেবল হযরত মূসা আ. এর ঘটনাটির ব্যাপারে সা‘আদ সাহেবের রুজুর ব্যাাপারে দারুল উলূম আস্থা প্রকাশ করেছে। [এ বিষয়ে জানার জন্য আগ্রহী পাঠক দেখতে পারেন, مولانا سعد صاحب کو ٹونگی اجتماع میں شرکت سے روک  کربنگلہ ڈیش سے واپس کے جانے کا پس منظر اور مولانا سعد صاحب سے علما امت کی اختلاف کی پس منظر]

২. অন্যান্য বক্তব্যের ব্যাপারে দারুল উলূম তার অনাস্থা বজায় রেখেছে।

৩. রুজু করার পরও যখন সা‘আদ সাহেব তার বিভিন্ন আম বয়ানে এ ধরণের বিতর্কিত বক্তব্য পরিহার করেননি, তখন দারুল উলূম, সা‘আদ সাহেবের মাধ্যমে ‘আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত’-এর পরিপন্থি একটি বাতিল ফেরকা জন্মলাভের আশংকা প্রকাশ করেছে। [২রা ফেব্রুয়ারী ২০১৭ তারিখে সাআদ সাহেব তার সর্বশেষ রুজুনামা দারুল উলূম দেওবন্দে পাঠান। তার বিতর্কিত বক্তব্যসমূহের মধ্য হতে এ তারিখের পরবর্তী বক্তব্যগুলো দ্রষ্টব্য।]

দারুল উলূম নিজের অবস্থান পরিস্কার করেছে যে, কে আমীর হবেন-না হবেন, তা নিযামুদ্দীনের আভ্যান্তরীণ বিষয়। দারুল উলূমের দাবী হলো, ‘ফিকরী মুনহারেফ’ [মতাদর্শের বিবেচনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিপন্থী চিন্তাধারার অধিকারী] কোনো ব্যক্তি দীনী কোনো কাজে কখনোই আমীর হতে পারে না। এর দৃষ্টান্ত ঠিক এমনই যে, বাচ্চার গায়ে যদি নাপাক লেগে যায়, তবে এই অবস্থায় তাকে কেউ কি কোলে নেবে? কখনোই নয়। বরং আগে তাকে পাকছাফ করে তারপর কোলে নেবে। উলামায়ে কেরামও তাকে বরণ করে নেবে, যদি তিনি উলামায়ে কেরামের পরামর্শমত তার ভুলগুলো শুধরে নেন। কেননা, তার সাথে উলামায়ে কেরামের ব্যক্তিগত কোনো আক্রোশ নেই।

সুতরাং শতাধিক বিতর্কিত বক্তব্যের মধ্য হতে দু’ একটি বিষয়ে রুজু করলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি কিভাবে আস্থার পাত্র হতে পারে? দ্বিতীয়ত, রুজু করার পরও একই কর্মকান্ডে লিপ্ত হওয়া প্রমাণ করে যে, তিনি সত্যিকার

অর্থে আন্তরিকভাবে রুজু করেননি, বরং দেওবন্দের কঠোর বিরোধিতায় বাধ্য হয়ে কিছু বাহ্যিক সান্তনাবাণী শুনিয়েছেন। এ বিষয়টি আরো সুস্পষ্ট হয়ে যায় এ বিষয় থেকে যে, বিতর্কিত বক্তব্যের পর দারুল উলূম যখন তার ভুলগুলো ধরিয়ে দেয়, তখন প্রথমদিকে তিনি রুজু করেননি; বরং ১৯ শে সফর, ১৪৩৮ হিজরীতে দারুল ঊলূমের প্রতি প্রেরিত সে চিঠিতে উল্টো দেওবন্দের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন এবং এ ফতোয়াকে দাওয়াতের কাজের প্রতি ‘অসহযোগিতামূলক আচরণ” বলে অভিহিত করেছেন এবং ভুল ধরাকে ‘‘বদগুমানী” অর্থাৎ কুধারণা বলে আখ্যায়িত করেছেন। সেই সাথে নিজের বক্তব্যের সমর্থনে প্রমাণ পেশ করবেন বলে জবাব দিয়েছেন। তার বক্তব্য নিম্নরূপঃ

آپ جیسے عالمی علمی دینی مرکز کے اہم ذمہ دار حضرات کو اس احقر واس کے ساتھیوں کے افکار وخیالات اور موقف ومسلک میں کسی قسم کی جو بد گمانی ہوئی ہے احقر اس کو نہایت افسوسناک اور دعوت وتبلیغ والے مبارک عمل اور اس کے مرکز کے ساتھ عدم تعاون سمجھتا ہے۔ فالی اللہ المشتکی و الیہ المستعان۔ …  نیز احقر کے بیانات پر جو اعتارضات ہیں ان کے متعلق احقر کی کم علمی کے باوجود جو معلومات اور ان کے علمی مراجع وغیرہ ہیں آئندہ ارسال کرنے کی کوشش کی جائیگی۔

“অধম এবং তার সাথীদের চিন্তা-ভাবনা ও কর্মপন্থার ব্যাপারে আপনাদের মত আন্তর্জাতিক দীনী মারকাযের বিশিষ্ট দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের যে ‘বদগুমানী’ [কুধারণা] হয়েছে, অধম বিষয়টিকে অত্যান্ত দুঃখজনক এবং দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ এবং তার মারকাযের প্রতি ‘অসহযোগিতামূলক আচরন’ মনে করছে। আল্লাহর নিকট অভিযোগ পেশ করছি, তারই নিকটে সাহায্যপ্রার্থী…এছাড়া অধমের বিভিন্ন বয়ানের উপর যে আপত্তিসমূহ রয়েছে, সেগুলোর ব্যাপারে অধমের জ্ঞানের স্বল্পতা সত্ত্বেও ইলমী উৎসগ্রন্থের যে অবগতি অধমের রয়েছে, ভবিষ্যতে তা [আপনাদের] সমীপে পাঠানোর চেষ্টা করা হবে।”

দারুল উলূমের পক্ষ হতে যখন বারবার আপত্তি আসতে থাকে, [এরপর দ্বিতীয় রুজুনামায় তিনি উপরিউক্ত ক্ষোভ এবং দলীল পাঠানোর অংশ বাদ দিয়ে নিজ রুজু এবং আকাবিরের প্রতি আস্থার বিষয়টি উল্লেখ করেন। এতে দারুল উলূমের মুহতামিম সাহেব আনন্দিত হয়ে তাকে একটি পত্র দেন। সেখানে এই রুজুর ব্যাপারে তাদের আশ্বস্ত হওয়ার ব্যাপারটা উল্লেখ করা হয়েছে। তবে এ জাতীয় বক্তব্য বিভিন্ন মজলিসে পুনরাবৃত্তির সংবাদ পৌঁছার কারণে এ আশ্বস্তি পরে আর থাকেনি। এরপর ১০ রবীউস্ সানী ১৪৩৮ হিজরী মোতাবেক ৯ই জানুয়ারী ২০১৭ তৃতীয় রুজুনামায় তিনি আপত্তি ওঠা প্রত্যেকটি বক্তব্যের ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তার এ রুজুনামার ব্যাপারে ২৮শে জানুয়ারী ২০১৭ দেওবন্দ জবাবী চিঠিতে তার ব্যাপারে এই আশা ব্যক্ত করে যে, তিনি তার অঙ্গীকার অনুযায়ী এমন বক্তব্য আর দেবেন না। সাথে এটাও উল্লেখ করে যে, তার এই বিস্তারিত রুজু নামার অনেক বক্তব্যের ব্যাপারে তারা একমত নন। তথাপি তারা আপাতত আশাবাদ ব্যক্ত করেন। সে সাথে মুসা আ. এর ব্যাপারে দেওয়া বক্তব্য থেকে ব্যাখ্যাহীন রুজু কামনা করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে মাওলানা সা‘আদ সাহেব ২রা ফেব্রুয়ারী ২০১৭-তে  চতুর্থ রুজুনামায় মুসা আ. সম্পর্কে বক্তব্য থেকে ব্যাখ্যাহীনভাবে রুজু করেন। কিন্তু এরপরও তার এ জাতীয় আপত্তিকর বক্তব্যের বিভিন্ন সংবাদ একের পর এক আসতে থাকে। যার কারণে ১৩ ই জুমাদাল উলা ১৪৩৯ হি. মোতাবেক ৩১ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে দেওবন্দ এ বিষয়ে একটি পরিস্কার ‘ওয়যাহাতনামা’ বা অবস্থান স্পষ্ট করে বক্তব্য প্রকাশ করে।] এবং দেওবন্দের ফতোয়াকে কেন্দ্র করে বিশ্বের উলামায়ে কেরাম তার ব্যাপারে আপত্তি প্রকাশ করেন, তখন একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে চতুর্থ চিঠিতে তিনি রুজু করেন, এবং এ রুজুর পর আবারো তিনি বিভিন্ন আম মজলিসে বিতর্কিত বক্তব্য দেন। যদ্দরুন, দেওবন্দের পক্ষ থেকে ১৩ ই জুমাদাল উলা ১৪৩৯ হি. মোতাবেক ৩১ জানুয়ারী ২০১৮ তারিখে প্রকাশিত সর্বশেষ ‘ওজাহাতনামায়’ সা‘আদ সাহেবের চিন্তাধারাকে ‘ফিকরী ইনহেরাফ’ [মতাদর্শের বিবেচনায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের পরিপন্থি চিন্তাধারা] আখ্যা দিয়ে ‘তার মাধ্যমে গোমরাহ দল আত্মপ্রকাশের আশংকা প্রকাশ করা হয়। কাজেই একদিকে তিনি দেওবন্দের ভুল ধরিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই রুজু না করে, উল্টো দেওবন্দের অবস্থানের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। দ্বিতীয়ত, রুজু করার পরও তিনি ‘ভুল ইজতেহাদ’ বন্ধ করে দেননি। ফলে এ রুজু গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে।

অথচ ভুলের ব্যাপারে পূর্বসূরীদের কর্মপদ্ধতি এমন হঠকারিতাপূর্ণ কখনোই ছিলো না। বরং যখনই তাদের কারো ভুল ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে, তারা তৎক্ষণাৎ রুজু করে নিয়েছেন। আর দীনী বিষয়ে অনুসরণীয় হতে হলে অবশ্যই তার প্রতি উলামায়ে কেরামের আস্থা থাকতে হবে। কাজেই আপত্তিকর বক্তব্যে ভুল স্বীকার করতে গিয়ে গড়িমসি করা, যিনি ভুল ধরিয়ে দিয়েছেন, তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন না করে উল্টো ক্ষোভ প্রকাশ করা এবং ভুল স্বীকার করার পরও বার বার সে ভুলে লিপ্ত হওয়ার বিষয়টি প্রমাণ করে যে, তিনি আসলে আন্তরিকভাবে রুজু করেননি।

দারুল উলূম দেওবন্দের ‘মাকাম’

দারুল উলূম দেওবন্দ কি কোন মামুলি জিনিস? দুনিয়ার সমস্ত উলামা এখনো এক মত যে, এখনো দারুল উলূম দেওবন্দ ইলমে দীনের হেড কোয়াটার। এর থেকে উচ্চাঙ্গের তা‘লীম দুনিয়ার কোথাও নেই। এই দেওবন্দকে আল্লাহ রেখেছেন হিন্দুস্তানে। ফেরাউন মূসা আ. কে মারার জন্য লাখ লাখ শিশুকে হত্যা করেছে। অথচ আল্লাহ রাব্বুল আলামীন সেই মূসাকে (আ.) লালন-পালন করেছেন ফেরাউনের ঘরে। যারা হিন্দু, ইসলামের নাম শুনতে পারে না। আল্লাহ পাক ইসলামের, দীনী ইলমের সবচেয়ে বড় মারকাযকে এই হিন্দুদের কোলে লালন-পালন করাচ্ছেন। কেমন যেন ফেরাউনের কোলে মূসা আ.!

দারুল উলূম দেওবন্দ তাকে সতর্ক করেছে, সাহারানপুর উনাকে সতর্ক করেছে, উলামায়ে কেরামের ‘সারে তাজ’ মাওলানা আরশাদ মাদানী দা.বা. এর মত ব্যক্তিত্ব তাকে সতর্ক করেছেন, আমার শায়েখ মুহিউস্ সুন্নাহ হযরত শাহ আবরারুল হক হারদুঈ রহ.- এর যিনি জানেশিন, তিনিও তাকে সতর্ক করেছেন। কারো সতর্কই তিনি আমলে নিচ্ছেন না।

তিনি নিজে নিজে আমীর হয়ে গিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ‘‘আমিই আমীর, যে আমাকে আমীর হিসাবে না মানবে, সে জাহান্নামে যাক”..!!

অথচ শরী‘আতে নিজে নিজে আমীর হওয়ার কোন পদ্ধতি নাই। আল্লাহওয়ালা উলামায়ে কেরামের শুরা থাকবে। ঐ শুরা পরামর্শ করে একজনকে আমীর বানাবে। অতঃপর আমীর ঐ মজলিসে শুরার সাথে পরামর্শ করে সকল কাজের সিদ্ধান্ত দিবেন। এটাই শরী‘আতসম্মত পদ্ধতি।

সাআদ সাহেব প্রসঙ্গে জনসাধারণের ভুল কর্মপন্থাঃ

মাওলানা সা‘আদ সাহেব প্রসঙ্গে আমাদের কিছু দীনী ভাই দুটি বিভ্রান্তির শিকার হয়েছেন-

১. বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান সহ আরব বিশ্বের উলামায়ে কেরাম সা‘আদ সাহেবের ভুল ধরার পরও তারা সা‘আদ সাহেবকে অনুসরণীয় জ্ঞান করছেন।

২. তাঁরা বলছেন, ‘আমরা নিযামুদ্দীনের ইতাআতে আছি এবং থাকবো’। আরো বলছেন, ‘‘আমাদের সাথে উলামা আছেন!” এ কথা বলছেন না যে, ‘‘আমরা উলামাদের সাথে আছি, তাদের পরামর্শে চলছি”!

সাআদ সাহেবের ব্যক্তিত্ব প্রসঙ্গঃ

মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে ব্যক্তিপূজা করা অর্থাৎ জায়িয-নাজায়িয সকল বিষয়ে কারো অনুসরণ করা নিষেধ। কোনো ব্যক্তি ততক্ষণ পর্যন্ত অনুসরণীয় থাকতে পারে, যতক্ষণ সে হকের উপর থাকবে। হক পথ ও মত থেকে বিচ্যুত হয়ে গেলে কারো অনুসরণ করা বৈধ নয়। সহীহ বুখারীর এক বর্ণনায় [হাদীস নং ৪৩৪০] এসেছে যে, নবীজি এক আনসারী ব্যক্তিকে একটি ছোট দলের আমীর বানিয়ে প্রেরণ করলেন এবং লোকদেরকে তাঁর অনুসরণ করতে বললেন। উক্ত ব্যক্তি অধিনস্ত সাহাবায়ে কেরাম থেকে তার ‘ইতাআত-এর স্বীকৃতি নিয়ে লাকড়ী জমা করতে এবং আগুন জ্বালাতে নির্দেশ দিলো। অতঃপর যখন আগুন জ্বালানো হলো, তখন উক্ত ব্যক্তি অধিনস্ত সাহাবায়ে কেরামকে আগুনে প্রবেশ করার আদেশ প্রদান করলো! কিন্তু সাহাবায়ে কেরাম এ ‘ইতাআত’ থেকে বিরত থাকলেন এবং বিষয়টি নবীজির কাছে গিয়ে উত্থাপন করলেন। তখন নবীজি বললেন, “যদি তোমরা আগুনে প্রবেশ করতে, তবে কেয়ামত পর্যন্ত আর তা থেকে বের হতে পারতে না। ‘ইতাআত’ কেবল পুণ্যের মধ্যে [বৈধ আছে]”।

উল্লিখিত হাদীস দ্বারা স্পষ্ট বুঝে আসে যে, কোনো ব্যক্তির ‘ইতাআত’ বা অনুসরণ ততক্ষণ বৈধ হবে, যতক্ষণ সে হকের উপর থাকবে। কেননা, ইসলামে ব্যক্তি নয়; বরং ইসলামের স্বার্থই বড়। এই ইসলামের জন্য স্বয়ং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তায়েফে মার খেলেন, গালী খেলেন, আরো কত কষ্ট করলেন। আমার শায়েখ হযরত মাওলানা শাহ আবরারুল হক রহ. বাংলাদেশের উলামা সম্পর্কে বলেছিলেন, “তোম বাড়ো কি রেআয়াত কারতে হো, লেকীন শরী‘আত কি রেআয়াত নেহী কারতে হো”। অর্থাৎ তোমরা বড় বড় আলেমদের খুব খেয়াল করো কিন্তু শরী‘আতের খেয়াল করো না। উদাহরণ দিলে বিষয়টি বুঝে আসবে। যেমন, আমি একজন হুজুর। খানার মজলিসে আমার ডান দিকে একজন সাধারণ লোক আর বাম দিকে আরেকজন শাইখুল হাদীস বসেছেন। এমতাবস্থায় আমার সম্মানের দিকে লক্ষ্য করে খানা প্রথমে আমাকে দিয়ে শুরু করা হলো। এরপর আমার ডানদিকে যিনি আছেন, তাকে দেওয়া হলো শরী‘আতের রেআয়াত করা তথা শরী‘আত পালন করা। কিন্তু দেখা যাবে যে, পরিবেশনকারী ব্যক্তি সম্মানের দিকে লক্ষ্য করে আমার ডানদিকের সাধারণ ব্যক্তিটিকে না দিয়ে বাম দিকের শাইখুল হাদীসকে দেয়া শুরু করবে। এটাই আমার শায়েখ বুঝিয়েছেন যে, “তোম বাড়ো কি রেআয়াত কারতে হো, লেকীন শরী‘আত কি রেআয়াত নেহী কারতে হো”।

বুখারী শরীফে এমন একটা হাদীস আছে, একবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোন এক খানার মজমায় ছিলেন। তাঁর ডান দিকে ছিল একজন গ্রাম্য লোক, আর বাম দিকে ছিল বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আবু বকর রা.। উম্মতের শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি আবু বকর রা.। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম- এর হাতে দুধের পেয়ালা ছিলো। সামনে উমর রা. বসা। উমর রা. জানতেন যে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুধ পান করে পেয়ালা ডান দিকে দিবেন। তাই তিনি কয়েকবার হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে মনে করিয়ে দেয়ার জন্য বললেন, ‘হুজুর আবু বকর আপনার বাম দিকে বসে আছে’। কিন্তু হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, উমর রা. এর কথায় কোনই কর্ণপাত করলেন না। ডান দিকের গ্রাম্য লোকটিকে দিলেন। কেননা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জানতেন, কোন ব্যক্তি বড় জিনিস না বরং শরী‘আতের হুকুম বড় জিনিস। আবু বকর রা. বাম দিকে থেকে দুধ পেল কি পেল না- এটা বিষয় না। বিষয় হলো ইসলামের আহকাম যিন্দা করতে হবে।

সা‘আদ সাহেব আমীর থাকলো কি থাকলো না- এটা বিষয় না। বিষয় হলো: আমার দীন-ঈমান হেফাযত করতে হবে। আমার তাবলীগের মেহনতকে হিফাযত করতে হবে। তার কিসমত ভালো থাকলে তিনি রুজু করবেন, আর কিসমত ভালো না থাকলে রুজু করবেন না। তার আমীর থাকার বিষয়টি দুই নম্বর। আর জনগনের ঈমানের হেফাযত করা এক নাম্বার কাজ। লাখ লাখ জনগনকে আমরা ‘বিভ্রান্ত’ রাখালের হাতে ছেড়ে দিতে পারি না। আল্লাহ না করেন তারা যদি আমাদের চুপ থাকার কারনে গোমরাহ হয়, তাহলে আল্লাহ আমাদের উলামায়ে কেরামকে পাকড়াও করবেন যে, আমরা কেনো জনগণকে তার বিভ্রান্তি থেকে বাঁচাইনি! জনগণও আমাদের দোষী করবেন যে, কেন আমরা সা‘আদ সাহেবের ভুলগুলো ধরিয়ে দিয়ে তাদের ঈমানের হেফাযত করি নাই..!

কাদের অনুসরণ করতে হবে?

كَمَا أَرْسَلْنَا فِيكُمْ رَسُولًا مِنْكُمْ يَتْلُو عَلَيْكُمْ آيَاتِنَا وَيُزَكِّيكُمْ وَيُعَلِّمُكُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَيُعَلِّمُكُمْ مَا لَمْ تَكُونُوا تَعْلَمُونَ

যেমন আমি তোমাদের মধ্যে একজন রাসূল পাঠিয়েছি তোমাদেরই মধ্য হতে, যে তোমাদের সামনে আমার আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তোমাদেরকে পরিশুদ্ধ করে, তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমতের তালীম দেয় এবং তোমাদেরকে এমন সব বিষয় শিক্ষা দেয় যা তোমরা জানতে না। (সূরা বাকারা; ১৫১)

এই আয়াতে আল্লাহ একটা শব্দ বলেছেন, ‘মিনকুম’ অর্থাৎ ‘তোমাদের মাঝে’। যে আলেমকে আপনি চিনেন, জানেন, তাঁর ব্যাপারে আপনি সবকিছু জানেন, তাঁকে বছরের পর বছর দেখতে পাচ্ছেন, বড় বড় আলেম সহ সব মানুষ তার ব্যাপারে এই কথা বলেন যে, তিনি কোন সুদ খান না, ঘুষ খান না, তিনি একজন আল্লাহওয়ালা হক্কানী আলেম, তিনি কোনো নাজায়েয কাজে নেই, গলদ আকীদা রাখেন না, কুরআন-সুন্নাহর কোনো ভুল ব্যাখ্যা দেন না। তাহলে তাকে মানতে হবে। এখন আপনি এমন একজনকে মানলেন যিনি আপনার কাছে থাকেন না, যে কোন সময় যে কোন মাসআলা জানতে তাকে পাওয়া যায় না, যাকে বার বার জিজ্ঞাসা করা যায় না, তার ব্যাপারে আপনি ভালো জানেন না, তার ইলম ও আমলের ব্যাপারে হক্কানী উলামারা আপত্তি করে, তাকে মানা যাবে না। তাকে মানার কোন উপায় নাই। পবিত্র কুরআনের উল্লিখিত আয়াতের মাধ্যমে এ বিষয়টিই প্রমাণিত হয়। কাজেই মাওলানা সা‘আদ সাহেব যখন ‘মিনকুম’-এর মধ্যে পড়েন না এবং তার ইলম ও তাকওয়া যখন উলামায়ে কেরামের নিকট গ্রহণযোগ্য বিবেচিত নয়, কাজেই উপরিউক্ত আয়াতের ভিত্তিতেই তাকে মানা জনসাধারণের জন্য জায়িয হবে না।

قُلْ هَذِهِ سَبِيلِي أَدْعُو إِلَى اللَّهِ عَلَى بَصِيرَةٍ أَنَا وَمَنِ اتَّبَعَنِي

‘(হে নবী!) বলে দিন, এই আমার পথ, আমি পরিপূর্ণ উপলব্ধির সাথে আল্লাহর দিকে ডাকি এবং যারা আমার অনুসরণ করে তারাও।’ (সূরা ইউসুফ; আয়াত ১০৮)

এ আয়াতে দাওয়াতের কাজ ‘বাসীরাত’-এর সাথে অর্থাৎ জেনে-বুঝে সহীহভাবে করতে বলা হয়েছে। জাহালাত তথা অন্ধভক্তির সাথে দাওয়াতের কাজ করতে বলা হয়নি। অথচ কিছু ভাই অন্ধভক্তির কারণে মাওলানা সা‘আদ সাহেবের ভুলগুলো মানতে নারাজ।

নিযামুদ্দীনের ইতাআত প্রসঙ্গঃ

‘আমরা নিযামুদ্দীনের ইতাআতে আছি এবং থাকবো’ এ কথাটি সম্পূর্ণরূপে গোমরাহীর রাস্তা। কেননা, কোনো স্থান কখনো কাউকে হিদায়াত দিতে পারে না; হ্যাঁ, ব্যক্তি হিদায়াতের মাধ্যম হতে পারে, যতক্ষণ সে হকের উপর থাকবে। আর এ কথাটির অর্থ যদি এটা হয় যে, ‘‘মাওলানা ইলয়াস রহ. যেহেতু নিযামুদ্দীন থেকে এ মোবারক মেহনত শুরু করেছেন, কাজেই নিযামুদ্দীনের নেতৃত্বে যেই আসবে, আমরা তাঁর অনুসরণ করবো” তবে এ অর্থও নিঃসন্দেহে ভ্রষ্টতা। কেননা, নবীজি তো দীনের দাওয়াত শুরু করেছিলেন মক্কা-মদীনায়, কিন্তু তাই বলে কি কুরআনে কিংবা হাদীসে মক্কা-মদীনাকে স্থান হিসাবে এ মর্মে অনুসরণের বৈধতা দেওয়া হয়েছে যে, মক্কা-মদীনা থেকে যে যাই বলুক, যদিও তা কুরআন-সুন্নাহ বিরোধী হয়, তবুও তার অনুসরণ করতে হবে..! কখনোই নয়। কাজেই ‘নিযামুদ্দীনের ইতাআতে আছি’ এ কথাটি সম্পূর্ণরূপে গোমরাহীর কথা এবং উক্ত আয়াতের বিরোধী।

কাজেই মাওলানা সা‘আদ সাহেবকে অনুসরণীয় জ্ঞান করা এবং নিযামুদ্দীনের ইতাআতে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করা নিঃসন্দেহে গোমরাহী রাস্তা। যা থেকে আমাদের ভাইদের ফিরে আসা অত্যবশ্যক।

বর্তমান সময়ে মাওলানা সাআদ সাহেবের প্রসঙ্গে আমাদের করণীয় হলোঃ

১. যেহেতু বিষয়টি দীনী বিষয়, এবং এমন একটি বিষয়, যুগ যুগ ধরে যার পৃষ্ঠপোষকতা করে আসছেন উলামায়ে কেরাম, কাজেই আমাদের উচিত হবে, সংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাকরাইল অন্যান্য স্থানের উলামায়ে কেরামের পরামর্শ অনুযায়ী নিজেদের পরিচালিত করা।

২. দ্বিতীয়ত, এ মূলনীতি মনে রাখতে হবে যে, ইসলামে স্থান বা ব্যক্তির পূজা করা নিষেধ। কোনো স্থান কখনোই অনুসরণীয় হতে পারে না। মক্কা-মদীনা পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বরকতময় স্থান, কিন্তু কুরআন-হাদীসে কোথাও বলা হয়নি যে, মক্কা-মদীনার অনুসরণ করতে হবে। হ্যাঁ, ব্যক্তি অনুসরণীয় হতে পারে, যতক্ষণ সে হকের উপর থাকবে। খলীফা হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রাযি. একদিন জুমার নামাযের খুতবায় সবাইকে জিজ্ঞেস করলেন, আমি যদি কুরআন-হাদীসের বিপরীত কোনো কাজ করি তাহলে তোমরা কী করবে? উত্তরে একজন যুবক দাঁড়িয়ে তলোয়ার কোষমুক্ত করে বললো, আমরা বোঝাতে সক্ষম না হলে এই তলোয়ার দিয়ে আপনাকে সোজাপথে আনা হবে।

৩. তৃতীয়ত, মানুষ মাত্রই ভুল হতে পারে, কাজেই জীবিত কোনো মানুষের ব্যাপারে এমন ধারণা না করা যে, তার থেকে কোনো ভুল প্রকাশ পাওয়া অসম্ভব। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাযি. বলেন-

لا يقلدن أحدكم دينه رجلا، فإن آمن آمن، وإن كفر كفر، وإن كنتم لا بد مقتدينفاقتدوا بالميت ; فإن الحي لا يؤمن عليه الفتنة

তোমাদের কেউ যেন কারো এমনভাবে অনুসরণ না করে যে, সে [অনুসৃত ব্যক্তি] ইমান আনলে, সেও [অনুসরণকারী ব্যক্তিও] ঈমান আনে। সে কুফরী করলে সেও কুফরী করে। যদি কারো অনুসরণ করতেই হয়ে, তবে মৃত ব্যক্তিদের অনুসরণ করো, কেননা, জীবিতগণ ফেতনার আশঙ্কামুক্ত নন। তবরানী কাবীর; হা.নং ৮৭৬৪ মাজমাউয যাওয়ায়েদ; হা.নং ৮৫০ হাদীসটির সনদ হাসান

৪. চতুর্থত, দাওয়াত ও তাবলীগের প্রাণপুরুষ হযরতজী মাওলানা ইলয়াস রহ. এর মালফূয আমাদের হৃদয়ঙ্গম করতে হবেঃ

হযরতজী মাওলানা ইলয়াস রহ. ইরশাদ করেন, “এই সিলসিলার একটি উসূল এই যে, স্বাধীনভাবে ও নিজের মনমত না চলা। বরং নিজেকে ঐ সমস্ত বুযুর্গদের পরামর্শ অনুযায়ী পরিচালনা করা যাদের উপর দীনী বিষয়ে আমাদের পূর্ববর্তী আকাবির হযরতগণ আস্থা রেখে গেছেন। যে সকল বুযুর্গদের আল্লাহ তা‘আলার সাথে খাস সম্পর্ক রয়েছে- বোঝা যায় এবং সেটা সর্বস্বীকৃত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পর সাহাবা কেরাম রাযি. এর সাধারণ মাপকাঠি এটিই ছিল যে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদের উপর বেশী আস্থা রাখতেন তারাও তাদের উপর বেশী আস্থা রাখতেন। পরবর্তীতে যুগে আস্থারযোগ্য ঐসমস্ত বুযর্গানে দীন ছিলেন যাদের উপর হযরত আবু বকর রাযি. ও হযরত উমর রাযি. আস্থা রেখে গেছেন। দীনের কাজে আস্থা রাখার জন্য বহুত সতর্কতা ও হুশিয়ারীর সাথে নির্বাচন করা জরুরী। অন্যথায় অনেক বড় ধরনের গোমরাহীর আশঙ্কা রয়েছে। [মালফুযাত: ১৪৩নং মালফুয]

কাজেই বর্তমানে নিযামুদ্দীনকে অনুসরণীয় মনে করা যেমন ভুল, তেমনি সা‘আদ সাহেবের ভুল হওয়ার পরও [গ্রহণযোগ্য রুজু না হওয়া পর্যন্ত] তার অনুসরণ করা, কিংবা তাকে ভুলের উর্ধ্বে জ্ঞান করা, কিংবা নিযামুদ্দীনের প্রবীন মুরব্বীদের তত্ত্বাবধান, দারুল ঊলূম দেওবন্দ সহ পুরো বিশ্বের উলামায়ে কেরামের অনাস্থা প্রকাশের পরও তাকে মেনে নেয়া এবং মান্য করা নিঃসন্দেহে গোমরাহী। এ গোমরাহী থেকে বাঁচার জন্য যতদিন পর্যন্ত সা‘আদ সাহেব নিম্নোক্ত কাজগুলো না করবেন, ততদিন তাকে অনুসরণ করার অর্থ হবে একটি ‘গোমরাহ দল’ সৃষ্টিতে সহায়তা করাঃ

১. সবধরনের বিতর্কিত বক্তব্যের ব্যাপারে প্রকাশ্যে, স্পষ্ট শব্দে ভুল স্বীকার করত সঠিক ব্যাখ্যা দিবেন এবং এ রুজু উপর তিনি অটল-অবিচল থাকবেন।

২. তাবলীগের পূর্ববর্তী তিন হজরতজীর ‘নির্দেশিত পন্থায়’ তাবলীগের কাজ করবেন।

৩. নিযামুদ্দীনের প্রবীণ মুরব্বীদেরকে নিযামুদ্দীনে ফিরিয়ে এনে তাদের পরামর্শমত চলবেন।

৪. দারুল উলূম দেওবন্দ সহ অন্যান্য শীর্ষস্থানীয় উলামায়ে কেরামের আস্থা অর্জন করবেন।

উলামায়ে কিরাম মাওলানা সা‘আদ সাহেবের রুজুর স্বীকৃতি দেয়ার আগ পর্যন্ত তার অনুসরণ ত্যাগ করলেও হক্কানী উলামায়ে কিরামের তত্ত্বাবধানে দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ সর্বাবস্থাতেই চালিয়ে যেতে হবে। এ ব্যাপারে কোন অলসতা করা যাবে না। মাদরাসার সকল শিক্ষক ও বড় ছাত্ররা বন্ধের সময় এ কাজে সময় লাগাবেন। এর পাশাপাশি হাকীমুল উম্মাত থানভী রহ.-এর পরামর্শ অনুযায়ী ২/১ জন শিক্ষককে এ কাজের জন্য ফারেগ করে দিবেন এবং মারকাযের দেখাশোনা ও সহযোগিতা করার জন্য প্রত্যেক বড় মাদরাসা থেকে ২/১ শিক্ষকের সবক কম দিয়ে এ মুবারক কাজ চালু রাখার জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কেননা, উলামাদের সম্পৃক্ততা ছাড়া দাওয়াত ও তাবলীগের কাজ কখনো সহীহ নকশার উপর চলতে পারে না। আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে দীনের সকল সহীহ কাজে জুড়ে থাকার তাউফীক দান করুন-আমীন।

আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে তাওফীক দান করুন।