ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।
ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।
আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।
যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।
পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com
এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।
www.islamidars.com
ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. বিভাগ : বই ও আর্টিকেল তারিখ : ১৫ - অক্টোবর - ২০১৭
ইসলামের সূচনা থেকেই মুসলমানদের ঈমান-আমলকে ধ্বংস করার জন্য ইসলাম ও মুসলমানদের চিরশত্রু ইয়াহুদী-খ্রিস্টান শক্তি একযোগে কাজ করে যাচ্ছে। সহীহ ও শিরকমুক্ত ঈমান নিয়ে কোন মুসলমান কবরে যাবে, এটা তাদের সহ্যের বাইরে। তাই তারা যুগে যুগে মুসলমানদের ঈমানকে শিরক মিশ্রিত করার জন্য নানা ধরণের কূটচাল চালিয়েছে। কখনো প্রত্যক্ষভাবে, যা সাধারণ ও বিশিষ্ট সবাই বোঝে, কখনো পরোক্ষ ভাবে, যা সাধারণ তো দূরের কথা বিশিষ্টদেরও বোধগম্য নয়। তবে যুগের যারা সচেতন আলেম, তারা সব সময় সজাগ থেকেছেন এবং উম্মাহর ঈমান-আমলকে কুফর-শিরকের মিশ্রণ থেকে হেফাযত করার জন্য যার পর নাই চেষ্টা মেহনত করে গেছেন। কারণ তারা জানেন যে, নবীর নিয়াবত আর বিরাসতের গুরুদায়িত্ব তাদের কাঁধে অর্পিত হওয়ায় পরকালে তারা এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবেন।
বর্তমান যামানায় মুসলমানদের ঈমানকে শিরকমিশ্রিত করার জন্য রাজনৈতিক দর্শনের নামে যে সকল মতবাদ মুসলিম বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে, তার মধ্যে গণতন্ত্র সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যার ব্যাখ্যা সামনে আসছে। এমনি আরেকটি মতবাদ হলো সমাজতন্ত্র। যার মূলমন্ত্র হলো, সমস্ত সম্পদের মালিক রাষ্ট্র বা সরকার। জনগণ শ্রম দিবে এবং এর বিনিময়ে সে অন্ন, বস্ত্র, চিকিৎসা, বাসস্থান ইত্যাদি জরুরী জিনিস পাবে। কিন্তু তারা কোন গাড়ি, বাড়ি, শিল্প কারখানার মালিক হতে পারবে না। এ দর্শনটি যে শরী‘আত বিরোধী সে কথা সকলেই বোঝে। কারণ ব্যক্তি মালিকানা না থাকলে হজ্জ, যাকাতসহ আর্থিক ইবাদতসমূহ কারো উপর ফরয হবে না। ফলে এ সংক্রান্ত আয়াতগুলো অস্বীকার করার দরূন মানুষ কাফের ও বে-ঈমান হয়ে যাবে।
ইসলামের ইতিহাসে বিভিন্ন সময়ে ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের পক্ষ থেকে মুসলমানদেরকে ধর্মান্তকরণের বহু চেষ্টা হয়েছে। সমকালীন উলামায়ে কেরাম তা অনুধাবন করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং তার বিরুদ্ধে যথোচিত ব্যবস্থা গ্রহণ করে উম্মাহর ঈমানকে শিরকের মিশ্রণ থেকে রক্ষা করেছেন। কিন্তু বর্তমানে রাজনৈতিক দর্শনের মোড়কে গণতন্ত্রের নামে মুসলিম উম্মাহকে মুরতাদ বানানোর যে সূক্ষ্ম চেষ্টা চলছে, তার বাস্তবতা বুঝতে না পারায় এ যুগের উলামায়ে কেরামকেও এব্যাপারে বেশি একটা মাথা ঘামাতে দেখা যায় না। অথচ গণতন্ত্র স্পষ্ট কুফরীতন্ত্র। এ ব্যাপারে বিন্দু মাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই। যারা সন্দেহ করবে, তাদের ঈমান অবশ্যই ঝুঁকিপূর্ণ।
গণতন্ত্র মূলত একটি ধর্ম। বাদশাহ আকবর যেমন হিন্দু-মুসলমানদেরকে এক করার জন্য দীনে ইলাহী নামক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছিলো, যা হযরত মুজাদ্দিদে আলফে সানী রহ. এর মেহনতে নিশ্চিহ্ন হয়ে গিয়েছিলো। অনুরূপভাবে ধূর্ত ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা সমগ্র দুনিয়ার মানুষকে এক করে তাদের তাবেদার বানানোর জন্য ‘গণতন্ত্র’? নামক ধর্ম প্রতিষ্ঠা করেছে। পার্থক্য শুধু এতটুকু যে, বাদশাহ আকবর তার মতবাদের নাম দিয়েছিলো ‘ধর্ম’, আর ইয়াহুদী-খ্রিস্টানরা বাদশাহ আকবরের পরিণতি থেকে শিক্ষা নিয়ে চালাকি করে ধর্ম শব্দটি বাদ দিয়ে দিয়েছে। যেন দীনদার মুসলমানকেও এ ধর্মের ধারাগুলো অতি সহজে গলধঃকরণ করানো যায়। ইসলাম ধর্মে যেমন কোন অনুমোদিত জিনিসকে জায়েয এবং নিষিদ্ধ জিনিসকে হারাম বলে, অনুরূপভাবে গণতন্ত্র নামক ধর্মে অনুমোদিত জিনিসকে আইনসম্মত এবং নিষিদ্ধ জিনিসকে আইনসম্মত নয় বা বে-আইনি বলে। আর এ ধর্মের খোদা হলো, পরাশক্তির কর্ণধারগণ। অবতার হলো, বিভিন্ন দেশের গণতন্ত্রের কাণ্ডারীগণ। আর এর ফেরেশতা হলো, ফৌজ ইত্যাদি। আর ধর্মগ্রন্থ হচ্ছে সংবিধান, যা সার্বিকভাবে বোঝার জন্য এবং তার পক্ষে জনমত তৈরি করার জন্য ইংরেজদের ধর্মনিরপেক্ষ সিলেবাস বিশ্বের অধিকাংশ জায়গায় চালু আছে।
প্রিয় পাঠক! এগুলো শুধু আমাদের মুখের কথা নয়। বরং তার জ্বলন্ত প্রমাণ হলো, নব্বইয়ের দশকের শুরুর দিকে বাংলাদেশের দক্ষিণাঞ্চল যখন প্রচণ্ড বন্যায় প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার লোক মারা যায়, তখন মার্কিন সরকার সাহায্যের জন্য কয়েক জাহাজ সৈন্য পাঠিয়েছিলো। তাদের নাম দিয়েছিলো, ‘অপারেশন সী এঞ্জেল’। যার অর্থ হলো, ‘সামুদ্রিক ফেরেশতার মাধ্যমে সহযোগিতা’। এখন আমাদের কথা হলো, যদি মার্কিনীদের ভাষায় গণতন্ত্র ধর্মই না হত, তাহলে ফেরেশতা এলো কোত্থেকে? হ্যাঁ, গণতন্ত্র নামক এ ধর্মের নির্দিষ্ট কোন উপাসনালয় নেই। সুনির্দিষ্ট সময়ে তার সুনির্দিষ্ট কোন ইবাদত নেই। এতটুকু পার্থক্য। আর একারণেই এটা যে একটা ধর্ম, তা লোকেরা বুঝতে পারে না এবং সহজেই তা গ্রহণ করে।
আরো দেখুন, ইসলামী শরী‘আতে মুরতাদদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। গণতন্ত্রের ধর্মেও একই নিয়ম। এ মতবাদের সাথে কেউ বিদ্রোহ করলে তার শাস্তিও মৃত্যুদণ্ড। যেমন ধরুন, কিছু খোদাপ্রেমিক ইসলামী শাসনব্যবস্থার দাবিতে কোথাও জড়ো হয়েছে, সরতে চাচ্ছে না, নির্ঘাত তাদের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কারণ তারা গণতন্ত্রের মুরতাদ।
প্রিয় পাঠক! আপনাদের দরদে দরদী হয়ে আমি বলছি, কবরে ও আখেরাতে কেউ কারো সাহায্যকারী হবে না। আপনারাই বলুন, কেউ যদি হিন্দু কিংবা খ্রিস্টান অথবা ইয়াহুদী ধর্ম গ্রহণ করে বা এ সকল ধর্মের মতবাদে বিশ্বাসী হয় এবং তার মধ্যেই ইহকালীন সফলতা ও পরকালীন মুক্তি খুঁজে বেড়ায়, তাহলে কি সে মুসলমান থাকতে পারে? কিছুতেই না। তাহলে কেউ যদি গণতন্ত্র নামক ভ্রান্ত ধর্ম বিশ্বাস করে তার ধারাগুলোর অনুসরণের মধ্যেই পার্থিব উন্নতি তালাশ করে, তাহলে সে কি করে মুসলমান থাকতে পারে? বড় চিন্তার বিষয়। ঈমান তো শুধু মুখে দাবি করার বিষয় নয়। বরং তা অন্তরে বিশ্বাস করার নাম।
এখানে আমরা ইসলামের সাথে সরাসরি সংঘর্ষপূর্ণ গণতান্ত্রিক কিছু ধারা উল্লেখ করছি, যা বিশ্বাস করলে বিশ্বাসকারীর ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত তো হবেই, এমনকি তার ঈমান নষ্টও হতে পারে।
১. গণতন্ত্র বলে, ‘জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস’। ইসলাম বলে, সকল ক্ষমতার উৎস একমাত্র আল্লাহ পাক। তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারেন।
অপর আয়াতে আছে, আল্লাহ তা‘আলা যাকে ইচ্ছা ক্ষমতার মালিক করেন এবং যার থেকে চান, ক্ষমতা ছিনিয়ে নেন।
২. গণতন্ত্র বলে, অধিকাংশের মতামতেই সিদ্ধান্ত গৃহিত হবে। ইসলাম বলে, অধিকাংশের মতামত সিদ্ধান্তের একটি সূত্র, একমাত্র সূত্র নয়। কুরআনের অসংখ্য আয়াতে আল্লাহ পাক বার বার ঘোষণা করেছেন, অধিকাংশ মানুষই জ্ঞান রাখে না। অধিকাংশ মানুষই মূর্খ। অধিকাংশ লোকেরই বিবেক-বুদ্ধি নেই। অধিকাংশ মানুষই নাফরমান ইত্যাদি। অথচ অধিকাংশ বা ‘মেজরিটি’ই হলো গণতন্ত্রের মূল কথা।
৩. গণতন্ত্র বলে, ‘দেশের সার্বভৌমত্বের মালিক পার্লামেন্ট’। ইসলাম বলে আসমান-যমীনের স্বত্ব একমাত্র আল্লাহর। আসমান-যমীনে যা কিছু আছে, সবকিছুর একচ্ছত্র মালিক একমাত্র আল্লাহ।
৪. গণতন্ত্র বলে, পার্লামেন্ট যে কোন সময় যে কোন আইন প্রনয়ণ করার অধিকার রাখে। হোক তা কুরআন বিরোধী।’ এ ব্যাপারে পার্লামেন্ট জবাবদিহিতার ঊর্ধ্বে। সুতরাং এ ধারার আলোকে অধিকাংশ সংসদ সদস্যদের মতামত থাকলে, পার্লামেন্ট মদপান, যিনা, সমকামীতা, আন্তঃধর্ম বিবাহ ইত্যাদিও বৈধ ঘোষণা করতে পারে। ইসলাম বলে, আইন প্রনয়ণের অধিকার একমাত্র আল্লাহর। অন্য আয়াতে এসেছে, আল্লাহ যা করেন এ ব্যাপারে কারো জিজ্ঞাসা করার অধিকার নেই। কিন্তু মানুষ যা করে তার জবাবদিহিতা অবশ্যই তাকে করতে হবে। তো কুরআনের ভাষ্য অনুযায়ী সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, কোন নবী রাসূলও আইন প্রনয়ণের অধিকার সংরক্ষন করেন না। হ্যাঁ, পার্লামেন্ট আল্লাহ প্রদত্ত আইন জনগণের মাঝে বাস্তবায়িত করার পদ্ধতি বের করার অধিকার রাখে। এর চেয়ে বেশি কিছু নয়।
৫. গণতন্ত্র বলে, ‘জনগণের মাঝে কোন জটিল সমস্যা দেখা দিলে তার সমাধানের জন্য প্রথমে তা পার্লামেন্টে উত্থাপন করতে হবে কিংবা গণভোট নিতে হবে।’ ইসলাম বলে, কুরআন হাদীস ও ইজমায়ে উম্মতের মাধ্যমে সিদ্ধান্তকৃত কোন বিষয়ে সমস্যা দেখা দিলে হাক্কানী উলামাদের কাছ থেকে জেনে সে অনুযায়ী আমল করতে হবে। এখানে গণভোট বা মতামতের কোন প্রসঙ্গ নেই। যেমন কুরআনে এসেছে, কোন বিষয়ে মতানৈক্য হয়ে গেলে তার ফয়সালা করাতে হলে তোমরা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে প্রত্যাবর্তন কর।
৬. গণতন্ত্র বলে, ‘জনগণকে সব ধর্মের প্রতি সমান শ্রদ্ধা বজায় রাখতে হবে।’ আরেকটু পরিষ্কার ভাষায় যাকে ধর্মনিরপেক্ষতা বলে। ইসলাম বলে, একজন মুসলমানের জন্য ইসলাম ব্যতীত অন্য সব ধর্ম থেকে আন্তরিকভাবে সম্পর্কচ্ছেদের ঘোষণা দেয়া জরুরী। এর এ অর্থ নয় যে, অমুসলিমদের সাথে শত্রুতা রাখতে হবে বা খারাপ ব্যবহার করতে হবে। অমুসলিমদের অধিকারও আল্লাহ তা‘আলা কুরআনে বর্ণনা করেছেন এবং তাদের সাথেও বাহ্যিকভাবে ভালো ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে এসেছে, ‘তোমাদের জন্য ইবরাহীম ও তার সঙ্গীগণের মধ্যে চমৎকার আদর্শ রয়েছে। তাঁরা তাদের সম্প্রদায়কে বলেছিলো, তোমাদের সাথে এবং আল্লাহর পরিবর্তে তোমরা যার ইবাদত কর তার সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক নেই। আমরা তোমাদেরকে মানি না। তোমরা এক আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন না করলে তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে চির শত্রুতা থাকবে।’
৭. কেউ যদি ধোঁকা বা প্রতারণার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ টাকা ইনকাম করে, যেমন সুদ বা জুয়ার মাধ্যমে অনেকে ধনী হচ্ছে, এগুলো গণতন্ত্রের ধর্মে সম্পূর্ণ হালাল এবং ঐ ব্যক্তিকে বুদ্ধিজীবী টাইটেল দেয়া হবে। কারণ সে বুদ্ধি খাটিয়ে সাধারণ লোকদের টাকা হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়েছে। কিন্তু ইসলামী শরী‘আতে এ টাকাগুলো হারাম, এগুলো মূল মালিককে ফেরত দিতে হবে। হাদীস অনুযায়ী এই ব্যক্তি নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের মধ্যে শামিল নেই এবং ইসলামী আদালত এ ব্যক্তিকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিবে।
প্রিয় পাঠক! ইসলামের সাথে সংঘর্ষপূর্ণ গণতান্ত্রিক ধারাগুলোর কিছু আমরা এখানে উল্লেখ করেছি। আশা করি এতুটুকুতেই গণতন্ত্রের বাস্তবতা অনুধাবন করতে পেরেছেন। যেখানে কুরআনের বিরুদ্ধে একটি মাত্র আক্বীদা পোষণ করলে ঈমান থাকে না, সেখানে সরাসরি কুরআন হাদীস বিরোধী এতগুলো ধারা বিশ্বাস করলে কি করে তার ঈমান ঠিক থাকতে পারে?
মোটকথা, গণতন্ত্র ঈমান বিধ্বংসী এক মতবাদ বা ধর্ম। কেউ যদি মনে-প্রাণে এর ধারাগুলোকে বিশ্বাস করে, তাহলে নিশ্চিত তার ঈমান ক্ষতিগ্রস্ত হবে অথবা একেবারেই বিনষ্ট হবে।
আমরা যদি আখেরাতের প্রসঙ্গ কিছুক্ষণের জন্য রেখে দিয়ে শুধু মাত্র দুনিয়াবী দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখি, তারপরও বলতে হবে, গণতন্ত্র একটি ব্যর্থ সমাজ ব্যবস্থা। এর দ্বারা কোন রাষ্ট্র চলতে পারে না। যে সমাজ ব্যবস্থায় একজন সর্বোচ্চ জ্ঞানী ও একজন রিক্সাচালকের মতামত সমপর্যায়ের মনে করা হয়, তার দ্বারা কোন দেশ তো দূরের কথা, সাধারণ একটি প্রাইমারী স্কুলও চলতে পারে না। স্কুলের হেডমাস্টার কে হবেন? সেকেন্ড মাস্টার কে হবেন? এ জন্য কিন্তু এলাকার লোকদের ভোট নেয়া হয় না। বরং এক্ষেত্রে যদি ভোটের কথা বলা হয় তাহলে বলা হয়, মূর্খ লোকেরা এর কি বুঝবে? এ জন্য তো জ্ঞানী-গুণী ও শিক্ষিত লোকদের কমিটি দরকার। তাহলে দেখুন, যে ব্যবস্থা দ্বারা স্কুলের একজন হেডমাস্টার ও প্রিন্সিপ্যাল নিযুক্ত করা যায় না, তার দ্বারা একজন রাষ্ট্রপ্রধান ও নীতিনির্ধারক কীভাবে নির্বাচিত হতে পারে? একটি দেশ কি একটি প্রাইমারী স্কুল থেকেও কম গুরুত্ব রাখে?
প্রিয় পাঠক! সারকথা হচ্ছে বর্তমান পৃথিবীর অধিকাংশ মুসলমান বুঝে কিংবা না বুঝে, ইচ্ছায় কিংবা অনিচ্ছায় ইসলামের চির দুশমন ইয়াহুদী-খ্রিস্টানদের তৈরি গণতন্ত্র নামক ধর্মের বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছে। এহেন পরিস্থিতিতে মুসলমানের অমূল্য সম্পদ ঈমানকে রক্ষা করার জন্য আমাদের কর্তব্য হলো, মনে-প্রাণে এই গণতন্ত্রকে ভুল মনে করতে হবে। এর কুরআন বিরোধী ধারাগুলোকে সরাসরি কুফর জ্ঞান করতে হবে এবং সাধ্যানুযায়ী দীনী দা’ওয়াত ও তা’লীমের জন্য সময় বের করে মানুষের মাঝে ঈমান আমল পরিশুদ্ধ করার জন্য ব্যাপক মেহনত চালাতে হবে। এটিই সে পদ্ধতি, যার মাধ্যমে আল্লাহ তা‘আলা এই সব কুফরীতন্ত্রের জোয়াল আমাদের কাঁধ থেকে নামিয়ে দিয়ে সাচ্চা মুসলমান বানাবেন এবং তামাম কুফর-শিরক ও বিদ‘আত থেকে আমাদের হেফাযত করবেন; ইনশা-আল্লাহ।
একটি সন্দেহের অপনোদন
প্রিয় পাঠক! কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারে যে, গণতন্ত্র কুফরীতন্ত্র হয়ে থাকলে আমাদের আকাবিরে দেওবন্দ কেন এই পদ্ধতি গ্রহণ করেছিলেন? এর উত্তরে আমরা বলব, গণতন্ত্রকে মনে-প্রাণে বিশ্বাস করা আর বাতিলের ভাষা হিসাবে গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ব্যবহার করা এক কথা নয়। কারণ তারা গণতন্ত্রের হরতাল, লংমার্চ ইত্যাদির প্রভাব বোঝে এবং এটাকে ভয় পায়। কিন্তু আমাদের আকাবিরগণ গণতন্ত্রকে সর্বদা কুফরীতন্ত্র হিসাবেই বিশ্বাস করতেন। তবে বিভিন্ন সময় দীন-ইসলামকে রক্ষার স্বার্থে বাতিলের ভাষা হিসাবে তাঁরা সাময়িকভাবে এ পদ্ধতি গ্রহণ করেছেন এবং উম্মতের ঐক্যবদ্ধ প্ল্যাটফর্ম তৈরি করে বিভিন্ন কর্মসূচীর মাধ্যমে বাতিলের মুকাবেলা করেছেন।
উল্লেখ্য, যতদিন এ মুসীবত দূর না হবে, ততদিন একান্ত ঠেকায় পড়ে, বড় অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য তুলনামূলক ভালো লোককে ভোট দিতে চাইলে দেয়ার অবকাশ রয়েছে। তবে আন্তরিকভাবে কখনোই এ মতবাদকে বৈধ মনে করা যাবে না।
ঈমানকে হেফাযতের লক্ষ্যে কথাগুলো নিজে বুঝবো এবং অপরকে বোঝাবো। সেই সাথে লোকদের ঈমান-আমল পরিশুদ্ধ করার জন্য যার যার কর্মক্ষেত্রে যথাসাধ্য চেষ্টা করার পাশাপাশি আল্লাহর দরবারে নিয়মিত দু‘আ করতে থাকবো। আল্লাহ পাক আমাদেরকে সহীহ ঈমান ও হেদায়াতের উপর কায়েম থাকার তাউফীক দান করেন। আমীন।