ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৬শে যিলক্বদ, ১৪৪৪ হিজরী, ১৬ই জুন, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (সকাল ৭টা থেকে শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
ইনশাআল্লাহ আগামী ২২শ শাউয়াল, ১৪৪৪ হিজরী মুতাবিক, ১৩ই মে, ২০২৩ ঈসায়ী তারিখ রোজ শনিবার বাদ ‘আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসার পুরাতন ভবনের (সাত মসজিদের সাথে) নীচ তলায় ইফতা বিভাগের রুমে বাস্তব প্রশিক্ষণের মাধ্যমে হজ্জের ট্রেনিং দেয়া শুরু করবেন।
তারিখ : ১৪ - ফেব্রুয়ারী - ২০১৮
জিজ্ঞাসাঃ
হক্কানী পীর ও বাতিল পীরের পরিচয় কি ?
বাতিল পীরের দরবারে কোন কাজগুলো ভন্ডামী ? বাঙালী জাতি হিসেবে আমরা যে সকল সংস্কৃতি বা উৎসব পালন করে থাকি, তা কি ভন্ডামী পর্যায়ে পড়ে ?
জবাবঃ
এদেশের মানুষ সাধারণত ধর্মপরায়ণ। তাদের এ ধর্ম পরায়ণতার সুযোগ নিয়ে সমাজে বেশ কিছু ব্যবসায়ী পীরের আবির্ভাব ঘটেছে- যাদের ভিতর হক্কানী পীর (যারা আল্লাহর রাস্তায় সঠিক পথ প্রদর্শক)-এর দশটি আলামতের কোন একটিও পাওয়া যায় না । হক্কানী পীরের দশটি আলামত এইঃ
(১) পীর সাহেব তাফসীর, হাদীস, ফিকহ ও ধর্মীয় যাবতীয় ব্যাপারে অভিজ্ঞ আলিম হওয়া আবশ্যক । অন্ততঃপক্ষে মিশকাত শরীফ ও জালালাইন শরীফ বুঝে পড়েছেন পরিমাণ ইলম থাকা জরুরী ।
(২) পীরের আকীদা ও আমল শরী‘আতের মুআফিক হওয়া অপরিহার্য । তাঁর স্বভাব-চরিত্র ও অন্যান্য গুণাবলী যেমন শরী‘আতে চায়, সেরকম হওয়া বাঞ্জনীয় ।
(৩) পীরের মধ্যে লোভ (টাকা-পয়সা, সম্মান-প্রতিপত্তি, যশঃ ও সুখ্যাতির লিপ্সা) থাকবে না । নিজে কামিল হওয়ার দাবী করবে না । কেননা এটাও দুনিয়ার মুহব্বতেরই অন্তর্ভুক্ত ।
(৪) তিনি কোন কামিল পীরের খিদমতে থেকে ইসলাহে বাতিন (অন্তঃকরণে পরিশুদ্ধতা) এবং তরীকত অর্জন করেছেন এরকম হতে হবে ।
(৫) সমসাময়িক পরহেযগার-মুত্তাকী আলেমগণ ও সুন্নত তরীকার ওলীগণ তাকে ভাল বলে মনে করেন- এমন হতে হবে ।
(৬) দুনিয়াদার অপেক্ষা দীনদার লোকেরাই তাঁর প্রতি বেশি ভক্তি রাখে- এমন হওয়া আবশ্যক ।
(৭) তাঁর মুরীদের মধ্যে অধিকাংশ এরকম হতে হবে যে, তারা প্রাণপণে শরী‘আতের পাবন্দি করেন এবং দুনিয়ার প্রতি মোহ-লালসা রাখেন না ।
(৮) তিনি এমন হবেন যে, মনোযোগের সাথে মুরীদদের তা‘লীম-তলকীন করেন এবং অন্তর দিয়ে এটা চান যে, তারা ভাল হোক । আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলের পায়রবী করুক । তিনি মুরীদদের মতলব মত স্বাধীন ছেড়ে দিতে পারেন না । তাদের মধ্যে যদি কোন দোষ দেখতে বা শুনতে পান, তবে তা যথারীতি (কাউকে নরমে কাউকে গরমে) সংশোধন করেন ।
(৯) তাঁর সুহবতে কিছুদিন যাবৎ থাকলে, দুনিয়ার মুহব্বত কমে যায় এবং আখেরাতের চিন্তা-ফিকির বাড়তে থাকে ।
(১০) তিনি নিজেও রীতিমত যিকির শোগল করেন । অন্ততঃপক্ষে করার পাক্কা ইরাদা রাখেন । (কেননা, নিজে আমল না করলে, অন্ততঃপক্ষে করার পাক্কা ইরাদা না থাকলে, তা‘লীম তলকীনে বরকত হয় না) । [প্রমাণঃ কসদুল সাবীল, পৃঃ ৯]
সমাজের যে সকল পীর সাহেবানের মধ্যে এ আলামতগুলো পাওয়া যাবে, তারাই হক্কানী পীর । যাদের মধ্যে এগুলো পাওয়া যাবে না ; এরপরও পীর নাম ধারণ করে বসবে, তারা বাতিল, ভন্ড ও ব্যবসায়ী । বর্তমানে তাদের দ্বারা মুসলমানদের অবশিষ্ট ঈমানটুকুও বরবাদ হয়ে যাচ্ছে । পীরের চরণে সিজদা করা বা মাথা নুইয়ে কদমবুসী করা, পীরের নামে মান্নত করা, পীরের কবরে সিজদাহ করা, পীরের কবরে গিলাফ চড়ানো, আলোক সজ্জা করা, পীরের নামে বাৎসরিক উরস করা, পীরকে মাকসুদ পূরনকারী ও হাজতরাওয়া-মুশকিলকুশা মনে করা প্রভৃতি শিরক, বিদ‘আত ও হারাম পর্যায়ের । বর্তমানে এসব কুসংস্কার দ্বারা ঈমান আক্বীদার মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে । যেসব পীর-ফকির এসকল শরী‘আত বিবর্জিত কাজের মধ্যে লিপ্ত বা এগুলোকে অনুমোদন করে থাকে, তাদের পথভ্রষ্ট হওয়া সুস্পষ্ট । ভন্ড পীরদের এসকল ভন্ডামী ছাড়াও আমাদের দেশের শিক্ষিত শ্রেণী ঈমান ও মুসলমানী জলাঞ্জলী দিয়ে কতিপয় হিন্দুয়ানী রুসুমকে বাঙালী সংস্কৃতি বা রীতিনীতি রূপে দাঁড় করিয়েছে । তারা শহীদগণের মাযারে কুরআন তিলাওয়াত ও দু‘আ পাঠ ইত্যাদির পরিবর্তে সঙ্গীত পরিবেশন, পুষ্পার্ঘ অর্পণ প্রভৃতির রেওয়াজ করেছে । অথচ এসব যা কিছু করা হচ্ছে এর কোনটার প্রমাণ কুরআন-হাদীসে নেই । বরং এসকল কাজকে শরী‘আতে নিষিদ্ধ করা হয়েছে । তেমনিভাবে মঙ্গল প্রদীপ প্রজ্বলনসহ বৈশাখী মেলার নানা অনুষ্ঠানাদিও শরী‘আত বিরোধী ।[প্রমাণঃ শামী ২ : ৪৩৯ , দুররে মুখতার ৬ : ৩৮৩]
وكذا ما يفعلونه من تقبيل الارض بين يدي العلماء والعظماء فحرام....الخ. (الدرالمختار:6/383)
ইসলাম পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা । মুসলমানদের দীন-দুনিয়ার সবকিছুই শরী‘আত কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত । কোথাও খামখেয়ালী বশতঃ শরী‘আতের বরখিলাপ কিছু করার অনুমতি তাকে দেয়া হয়নি । দীন দুনিয়ার প্রত্যেকটি পদক্ষেপ তাকে কুরআন হাদীসের আলোকে গ্রহণ করতে হবে । কোন ক্ষেত্রে তার জন্য একথার সুযোগ নেই যে, “এটা আমি বাঙালী জাতির সংস্কৃতি হিসেবে করছি । এ ব্যাপারে আল্লাহ-রাসূল কি বলেন, তা আমার দরকার নেই ।” (নাঊযুবিল্লাহ) বরং আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম সব কিছুর উর্ধ্বে । দেশ-জাতি ও সাহিত্য-সংস্কৃতি সবই আল্লাহর নির্দেশের গন্ডির মধ্যেই হতে হবে । মুসলমানগণের সংস্কৃতিও শরী‘আতের ধাঁচেই গঠিত হবে । সুতরাং কোন মুসলমান কুরআন-সুন্নাহর বিরোধিতা করে এ দীন-ঈমান বিরোধী কাজগুলোর কোনটাই করতে পারে না । সে একজন মুসলমান এটাই বড় কথা এবং এটা তার প্রথম পরিচয় । তারপরে সে বাঙালী, পাকিস্তানী, আরবী ইত্যাদি বিষয়ে পরিচিত হবে তার মুসলমানিত্ব ঠিক রেখে । ইসলামে এরূপ চিন্তার কোনই অবকাশ নেই ।