elektronik sigara

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

 

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

 

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

 

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

 

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই ‍দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

www.islamidars.com

ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)

হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।

১. আল্লাহ তা‘আলা ইরশাদ করেন: (অর্থ) হে ঈমানদারগণ! তোমরা পবিত্র বস্তু সামগ্রী আহার করো, যেগুলো আমি তোমাদেরকে রুযী হিসাবে দিয়েছি। (সূরা বাকারাহ-১৭২)

২. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন: (অর্থ) মানুষের নিকট এমন এক সময় আসবে যখন সম্পদ উপার্জনে এ মর্মে কোনো তোয়াক্কা করবে না যে, সে হালাল উপার্জন করছে, নাকি হারাম উপার্জন করছে। (সহীহ বুখারী হা. নং ২০৫১)

৩. অন্যত্র ইরশাদ করেন: (অর্থ) হারাম খাদ্যে লালিত দেহ জান্নাতে প্রবেশ করবে না। (বাইহাকী  হা. নং ৫৭৫৯)

৪. রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেন: (অর্থ) হালাল ও হারামের বিষয় তো স্পষ্ট। তবে এ দু’য়ের মাঝে কতিপয় সন্দেহযুক্ত বিষয় আছে, যেগুলো সর্ম্পকে বহু লোক অবহিত না। যে ব্যক্তি সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকেও বিরত থাকে সে নিজ দ্বীন ও মর্যাদার হেফাযত করতে পারে। আর যে সন্দেহযুক্ত বিষয়ে লিপ্ত হয় সে পর্যায়ক্রমে হারামে পতিত হয়। (সহীহ বুখারী শরীফ হাদীস নং ২০৫১, সহীহ মুসলিম শরীফ হা. নং.১৫৯৯ )

উপরের আয়াত ও হাদীসসমূহ দ্বারা একথা স্পষ্ট যে, পরকালে জাহান্নাম থেকে মুক্তির জন্য রুযী-রোযগার হালাল হওয়া আবশ্যক। স্পষ্ট হারাম থেকে বাঁচা যেমন জরুরী তেমনি শর‘ঈ প্রমাণের ভিত্তিতে হারামের সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকেও বিরত থাকা জরুরী।

যারা কুরআন, হাদীস ও পরকাল বিশ্বাস করে না দুনিয়ার জীবনে হয়তো তারা হারাম বা সন্দেহযুক্ত রুযী-রোযগার বর্জনের কষ্টটুকু স্বীকার করবে না; কিন্তু কোনো মুসলমান ক্ষণস্থায়ী জীবনের প্রাচুর্যের লোভে চিরস্থায়ী আখিরাতকে ঝুঁকিপূর্ণ করতে পারে না, বরং অসীম জীবনের সুখ-সাফল্যের লক্ষ্যে সীমিত সময়কে পূর্ণ সংযমের মাধ্যমে অতিবাহিত করতে সচেষ্ট হবে। জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রের ন্যায় আয়-উপার্জনেও হারাম তো বটেই, সন্দেহযুক্ত বিষয় থেকেও থাকবে নিরাপদ দূরত্বে। বর্তমান যামানায় আয়-উপার্জনের একটি মাধ্যম হলো শেয়ার বেচা-কেনা। অথচ শর‘ঈ দৃষ্টিকোণ থেকে এতে রয়েছে হারাম ও নাজায়িযের ব্যাপক সম্পৃক্ততা যা থেকে বাঁচতে হলে তা জানতে হবে খুব গভীরভাবে। আর এজন্যই আমাদের নিম্নোক্ত প্রয়াস।

শেয়ারের শরঈ বিশ্লেষণ

বর্তমানে শেয়ারসমূহের রয়েছে দ্বিমুখী সংশ্লিষ্টতা

(ক) কোম্পানির সাথে সংশ্লিষ্টতা ও (খ) শেয়ারবাজার বা পুঁজি বাজারের সাথে সংশ্লিষ্টতা।

কোম্পানি বার্ষিক যে লভ্যাংশ ঘোষণা করে তা শেয়ার-হোল্ডারের একাউন্টে জমা হয়ে যায়, তেমনি কোম্পানি যদি লভ্যাংশের পরিবর্তে বোনাস শেয়ার প্রদান করে তাও শেয়ারধারীর বি.ও তে জমা হয়, কিংবা রাইট-শেয়ার নিতে চাইলে সে-ই প্রাধান্য পায়। আর ভবিষ্যতে কখনো কোম্পানি বিলুপ্ত হলে শেয়ার-হোল্ডারগণ শেয়ার অনুপাতে সকল সম্পদে অংশীদার হয়। এসকল বিষয়ের বিবেচনায় প্রতিটি শেয়ার মানে কোম্পানির সকল সম্পদে আনুপাতিক অংশীদারিত্ব।

পক্ষান্তরে বর্তমান শেয়ার বাজারে শেয়ারসমূহ সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে প্রায় স্বতন্ত্র। এখানে শেয়ারের মূল্যায়ন ভিন্নভাবে হয়। দেশের আর্থিক অবস্থা, রাজনৈতিক পরিস্থিতি, গ্রাহকদের চাহিদা বা অনীহা এসব বিষয়ের প্রভাব শেয়ারের ক্ষেত্রে এক রকম, আর কোম্পানির ক্ষেত্রে আরেক রকম। কোম্পানির লাভ-লোকসানের সাথে শেয়ার-মূল্যের উত্থান বা পতনের কোনো সামঞ্জস্য থাকে না। শেয়ারবাজারে যারা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে তাদের অধিকাংশের ধারণায়ও একথা থাকে না যে, সে কোম্পানির আনুপাতিক অংশের ক্রয়-বিক্রয় করছে। এ সকল দিক বিবেচনা করলে একথা সুস্পষ্ট হয়ে উঠে যে, বর্তমান শেয়ারবাজারে শেয়ারের বাস্তবতা হলো শুধু সার্টিফিকেট কিংবা শেয়ার সংখ্যা। এ ছাড়া অন্য কিছু নয়।

শেয়ারের মূল্য:

শেয়ারের মূল্য তিন ধরনের হয়ে থাকে

(ক) গায়ের দর (Face value): অর্থাৎ শেয়ারের প্রথম নির্ধারিত মূল্য।

(খ) বাজার দর (Market value): অর্থাৎ শেয়ারবাজারে যে দরে ক্রয়-বিক্রয় হয়।

(গ) বাস্তব দর (Neet Asset value/Break up value): অর্থাৎ কোম্পানি বিলুপ্ত হলে প্রতি শেয়ার হোল্ডার যা পাবে।

শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের শরঈ বিধান:

(ক) শরীয়তমতে কোনো বস্তুর ক্রয়-বিক্রয় শুদ্ধ হতে হলে তা মাল তথা সম্পদ হওয়া আবশ্যক। আর মাল বা সম্পদ বলা হয় যা ব্যবহারযোগ্য হয়, এবং যার নিজস্ব মূল্য আছে। (ফিকহী মাকালাতঃ ১ম খণ্ড, বুহূস ফী কাযায়া ফিকহিয়্যাঃ ১ম খণ্ড)

একথা অনস্বীকার্য যে, শর‘ঈ সংজ্ঞা মতে শেয়ার-সার্টিফিকেট মাল নয়। বরং মাল হলো কোম্পানীস্থিত অর্থ-সম্পদের আনুপাতিক অংশ। কাজেই শেয়ার কেবল তখনই বেচা-কেনার যোগ্য হবে, যখন তা কোম্পানীস্থিত অর্থ-সম্পদের আনুপাতিক অংশের প্রতিনিধিত্ব করবে। যদি কোম্পানির অর্থ-সম্পদের সাথে তার সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়, এবং তার মধ্যে স্বাতন্ত্র্য এসে যায় তখন শর‘ঈ দৃষ্টিতে তা ক্রয়-বিক্রয়ের যোগ্য থাকবে না।

(খ) ক্রয়-বিক্রয় সহীহ হওয়ার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো হারাম কিংবা হারাম যুক্ত না হওয়া। কাজেই কোনো কোম্পানির মূল কারবার যদি হারাম হয়, যেমন মদ বা মাদক জাতীয় বস্তুর উৎপাদন বা ব্যবসা, অনুরূপ প্রচলিত ব্যাংক, বীমা ইত্যাদি, যাদের মূল কারবার হয় সুদের উপর অর্থ লগ্নি করা, এধরনের কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় শরীয়তমতে বৈধ নয়।

(গ) গায়ের দরের চেয়ে কম-বেশিতে শেয়ার লেন-দেন করার ক্ষেত্রে আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শর্ত হলো কোম্পানির ‘স্থির সম্পদ’ (Fixed Assets) থাকা। কাজেই যে সকল কোম্পানি ‘স্থির’ পণ্যের মালিক হয়নি সেগুলোর শেয়ার গায়ের দরের চেয়ে কম-বেশিতে লেনদেন শরীয়তমতে জায়িয নয়।

(ঘ) ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে ফটকাবাজী, প্রতারণা ও জুয়ামুক্ত হওয়াও জরুরী। অন্যথায় এর দ্বারা যে আয় হবে তা হালাল হবে না।

মোটকথা, সম্পূর্ণ হালাল ব্যবসা-নির্ভর, স্থির সম্পদ-সমৃদ্ধ, ফটকাবাজী ও জুয়া-মুক্ত কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে অংশীদার হওয়া এবং পরবর্তীতে আনুপাতিক হারে লভ্যাংশ গ্রহণ করা শরী‘আতের দৃষ্টিতে জায়িয আছে।

সুদী লেনদেনের সাথে জড়িত কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ের হুকুম:

আজকাল একশত ভাগ হালাল কারবার করে, প্রাসঙ্গিক পর্যায়েও হারাম ও নাজায়িয লেনদেন করে না, এমন কোম্পানির অস্থিত্ব না থাকার মতই। বিশেষ করে ব্যাংকে টাকা রেখে সুদ নেওয়া ও ব্যাংক থেকে সুদী লোন নিয়ে ব্যবসায় লাগানোর কাজটি প্রায় সব কোম্পানীই করে থাকে। প্রশ্ন হলো এ জাতীয় কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে অংশীদার হওয়া জায়িয আছে কি না?

ইসলামী অর্থনীতি ও লেনদেনের মাসায়িল সম্পর্কে বিজ্ঞ কিছুসংখ্যক আলিমের মতে কয়েকটি শর্ত সাপেক্ষে এজাতীয় কোম্পানির শেয়ার কেনা জায়িয হতে পারে।

শর্তগুলো যথাক্রমে:

(ক) কোম্পানির বার্ষিক সাধারণ সভায় (AGM) কিংবা যে কোনো উপায়ে নীতি-নির্ধারকদের নিকটে একজন শেয়ার-হোল্ডার হিসাবে সুদী লেনদেনের বিপথে প্রতিবাদ পাঠাবে। তার প্রতিবাদ কার্যকর না হলেও যেহেতু সে নীতিনির্ধারক বা পরিচালক নয়, কাজেই এ প্রতিবাদের পর সুদী লেনদেনের দায় তার উপর বর্তাবে না।

(খ) যদি কোম্পানি ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত সুদ তার শেয়ার-হোল্ডারদের মাঝে বণ্টিত লভ্যাংশের মধ্যে শামিল করে তাহলে কোম্পানির ‘ব্যালেন্সশীট’ তথা আয়-ব্যয়ের খতিয়ান দেখে সুদের আনুপাতিক অংশটুকু সাওয়াবের নিয়ত না করে সদকা করে দিবে।

(গ) যারা লভ্যাংশের জন্য নয়, বরং শেয়ার দিয়ে ব্যবসা করার উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে কিংবা শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় ব্রোকারী করে, তারাও আয়ের একটা অংশ অনুমান করে সদকা করে দিবে।

পক্ষান্তরে ইসলামী অর্থনীতি ও লেনদেনের মাসায়িল সম্পর্কে বিজ্ঞ বিশ্বের অধিকাংশ আলিমের মত হলো, সুদের মতো জঘন্য পাপের ক্ষুদ্রতম দায় বর্তায়  এমন কাজও বিনা ঠেকায় কোনো মুসলমানের জন্য বৈধ হতে পারে না। কাজেই মূল ব্যবসা হালাল হওয়া সত্ত্বেও প্রাসঙ্গিক পর্যায়ে সুদী লেন-দেন করে এমন কোম্পানির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ নয়। প্রতিবাদ করলে কোনো কাজ হবে না জেনেও স্বেচ্ছায় তাতে অংশীদার হওয়া, অতঃপর এ ঠুনকো প্রতিবাদ করা তাতে সুদের দায় এড়ানো যাবে না। কোম্পানির সুদী লোনের পরিমাণ কম-বেশি হওয়া এক্ষেত্রে কোনো পার্থক্য সৃষ্টি করবে না। অনুরূপ এ জাতীয় কোম্পানির শেয়ার ক্রয় করে অংশীদার হওয়াকে এজাতীয় কোম্পানির পণ্য ক্রয় করার সাথে তুলনা করাও ঠিক হবে না। সুদী লেন-দেনের বর্তমান ব্যাপকতাও এক্ষেত্রে অজুহাত হতে পারে না, যেমন বর্তমানে সুদের মারাত্মক ব্যাপকতা সত্ত্বেও সুদের কোনো অংশ বৈধ নয়।

বর্তমান শেয়ার বাজারের শরঈ বিধান:

বর্তমান শেয়ারবাজার দ্বারা উদ্দেশ্য হলো যেখানে শুধু Capital Gain তথা বিক্রয় করে মুনাফা অর্জনের উদ্দেশ্যে শেয়ার ক্রয় করা হয় (যদিও কখনো লোকসানও গুনতে হয় ), কোম্পানিতে অংশীদার হয়ে লভ্যাংশ (Divident) গ্রহণ মূল উদ্দেশ্য নয়; যদিও কখনো দাম বাড়ার  অপেক্ষা করতে হয়। এ বাজারকে Secondary Market (সেকেন্ডারি মার্কেট), Money Market (মানি মার্কেট ), Capital Market (ক্যাপিটাল মার্কেট) ও বলা হয়। এ বাজারে শেয়ারের লেন-দেন হয় স্বতন্ত্র গতিতে। কোম্পানি-ঘোষিত ‘নীট অ্যাসেট ভ্যালু’ তথা শেয়ারের বাস্তব মূল্যের সাথে এবং কোম্পানির বাস্তব অবস্থার সাথে শেয়ার বাজারের মূল্য হ্রাস-বৃদ্ধির সম্পর্ক একেবারে গৌণ।

এ বাজারের শেয়ার আর কোম্পানিতে আনুপাতিক অংশীদারিত্ব মোটেও এক জিনিষ নয়। অথচ শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের বৈধতার মূল ভিত্তিই ছিল এ কথার উপর যে, শেয়ার মূলত কোম্পানির সকল সম্পদের আনুপাতিক মালিকানা। শুধু কাগজ বা সংখ্যা হলে তার ব্যবসা জায়িয হওয়ার প্রশ্নই আসে না। কেননা তখন সে ব্যবসার অর্থ হবে টাকার বিনিময়ে টাকার ব্যবসা। তাছাড়া কিছুসংখ্যক ফিকাহবিদের মতে প্রাসঙ্গিক পর্যায়ে সুদী কারবারে জড়িত কোম্পানিসমূহের শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করা বৈধ হওয়ার জন্য সুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের যে শর্ত রাখা হয়েছে, শেয়ার ব্যবসায়ীদের জন্য সে শর্তটি পালন করাও সম্ভব নয়। কারণ, তারা কখনো দিনেই কয়েকবার বেচাকেনা করে আবার একসঙ্গে বহু কোম্পানির শেয়ার লেন-দেন করে। এ অবস্থায় তারা কতবার সুদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করবে? কার কাছেই বা প্রতিবাদ করবে? আর যদি প্রতিবাদ করেও, তা কি হাস্যকর ব্যাপার হয়ে দাঁড়াবে না?

সুতরাং বর্তমান শেয়ারবাজারে শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় (Capital Gain) করে অর্থোপার্জন এক ধরণের জুয়া যা কোনো সূরতেই জায়িযের আওতায় পড়ে না এবং উপরোক্ত পদ্ধতিতে শেয়ার-ব্যবসা করাকে কোনো নির্ভরযোগ্য আলিম বৈধ বলেছেন বলেও আমাদের জানা নেই।

যারা শেয়ার-ব্যবসার সাথে জড়িত হয়েছেন তাদের ক্ষেত্রে শরীআতের হুকুম কী?

বলা বাহুল্য যে, শর‘ঈ মাসআলা সম্পর্কে অবগত না হয়ে লাখ লাখ মুসলমান এমনকি অনেক দ্বীনদার লোকেরাও এযাবৎ এ ব্যবসায় জড়িত হয়েছেন এবং অনেকেই এ ফটকাবাজী ব্যবসার স্বাভাবিক পরিণতিও বরণ করেছেন। এ পর্যায়ে কেউ কেউ ভবিষ্যতে কখনো এ ব্যবসা না করার সংকল্প করেছেন; কারো কারো কিছু শেয়ার অবশিষ্টও রয়ে গেছে। এদের ক্ষেত্রে শর‘ঈ হুকুম কী?

এ প্রশ্নের উত্তর জানার আগে একটি কথা মনে রাখতে হবে। তা হলো, একজন লোক বিপদে জড়িয়ে পড়ার পর তা থেকে মুক্ত হতে চায়, আরেকজন ভবিষ্যতে স্বেচ্ছায় সেই বিপদে জড়াতে চায়। দু’জনের হুকুমে ক্ষেত্র বিশেষে একটু পার্থক্য হয়। কাজেই নতুন করে এ ব্যবসা শুরু করা, বা পুরাতন ব্যবসায়ীর জন্য এতে জুড়ে থাকা নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি তো নির্ধারিত। সুদের অংশ সদকা করবেন এ নিয়তেও তাদের জন্য এ ব্যবসায় প্রবেশ করা জায়িয হবে না। কিন্তু যারা হালাল পণ্য উৎপাদনকারী বা বৈধ পণ্যের ব্যবসা করে এমন কোম্পানির প্রাইমারী বা সেকেন্ডারি শেয়ার ক্রয়-বিক্রয় করে ইতিপূর্বে আয় করেছেন, তারা সংশ্লিষ্ট কোম্পানিসমূহের বিগত দিনের ‘ব্যালেন্সশীট’ দেখে নিবেন। ব্যালেন্সশীটে আয়ের মধ্যে যদি সুদের অংশ উল্লেখ থাকে তাহলে সে অংশ অনুপাতে, বরং সতর্কতামূলক কিছু বেশি টাকা সওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিবেন। অনুরূপভাবে শেয়ারবাজার যখন জুয়াড়িদের ষড়যন্ত্র, বা ‘মার্চেন্ট ব্যাংক’ সমূহের অতিমাত্রিক লোনের প্রভাবে কৃত্রিমতায় ভাসছিল  তখন যারা রাতারাতি লাখ লাখ টাকা বানিয়েছেন তারাও কোম্পানির বাস্তব অবস্থার সাথে তুলনা করে অস্বাভাবিক আয়টুকু সাওয়াবের নিয়ত ছাড়া সদকা করে দিবেন। আর যাদের নিকট এখনো কোনো কোম্পানির শেয়ার বিদ্যমান আছে তারা তাদের শেয়ারের বাজার-মূল্য কোম্পানির ‘নীট অ্যাসেট ভ্যালু’র সমপরিমাণ হলেই বিক্রয় করে এ ব্যবসা থেকে দ্রুত বেরিয়ে পড়বেন। এতে যদি আর্থিক ক্ষতি হয় তাহলে পরকালের কথা ভেবে সেই ক্ষতি মেনে নিবেন।

আর যারা ব্যাংক-বীমা ও হারাম কারবারে জড়িত কোম্পানির শেয়ার দ্বারা ব্যবসা করেছেন তাদের তো সম্পূর্ণ আয়ই সদকা করে দেওয়া জরুরী। এক সাথে সম্ভব না হলে আস্তে আস্তে সদকা করতে থাকবে। এছাড়া সংশ্লিষ্ট সকলেই আল্লাহ তা‘আলার দরবারে খাঁটি মনে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। আল্লাহ তা‘আলা সকলকে নিজ অপার কৃপায় ক্ষমা করুন। আমীন।