elektronik sigara

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

 

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

 

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

 

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

 

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই ‍দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

www.islamidars.com

ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)

হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।

দুইজন মুসলমান যখন পরস্পর সাক্ষাৎ করে, তখন তারা একে অপরকে সালাম দেয়, সালামের পর মুসাফাহা করে। এটা যেমনিভাবে মুসলমানদের পরস্পর মুহাব্বত-ভালোবাসার নিদর্শন, তেমনিভাবে পরস্পর ঘৃণা-বিদ্বেষ ইত্যাদি দূর করার মাধ্যম।

মুসাফাহার ফযীলত একাধিক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেন,

مَا مِنْ مُسْلِمَيْنِ يَلْتَقِيَانِ، فَيَتَصَافَحَانِ، إِلَّا غُفِرَ لَهُمَا قَبْلَ أَن يَّفْتَرِقَا

অর্থ: দু’জন মুসলমান যখন পরস্পর সাক্ষাৎ করে মুসাফাহা করে, তখন তারা পৃথক হওয়ার পূর্বেই তাদেরকে ক্ষমা করে দেয়া হয়।

অন্য হাদীসে এসেছে, إِنَّ الْمُؤْمِنَ إِذَا لَقِيَ الْمُؤْمِنَ فَسَلَّمَ عَلَيْهِ وَأَخَذَ بِيَدِهِ فَصَافَحَهُ تَنَاثَرَتْ خَطَايَاهُمَا كَمَا يَتَنَاثَرُ وَرَقُ الشَّجَرِ

অর্থ: কোনও মুমিন বান্দা যখন আরেকজন মুমিনের সাথে সাক্ষাৎ করে এবং তার হাত ধরে মুসাফাহা করে তখন তাদের উভয়ের (সগীরা) গুনাহগুলো এমনভাবে ঝরে যায় যেমন গাছের পাতা ঝরে পড়ে।

নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের যুগ থেকে আজ পর্যন্ত মুসাফাহার আমলটি নিরবচ্ছিন্নভাবে পালন হয়ে আসছে। হযরত কাতাদা রহ. বলেন, ‘আমি হযরত আনাস রাযি. কে জিজ্ঞাসা করলাম, সাহাবায়ে কেরামের মাঝে কি মুসাফাহার আমল ছিলো? তিনি বললেন, হ্যাঁ।’ হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম রাযি. বলেন, ‘আমরা (একবার) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সাথে ছিলাম, তিনি হযরত উমর রাযি. এর হাত ধরে (মুসাফাহা কর) ছিলেন।

মুসাফাহা এর শাব্দিক ব্যাখ্যা ও পদ্ধতি

মুসাফাহা (اَلْمُصَافَحَةُ) এটা আরবী শব্দ (صَفْحٌ) থেকে নির্গত। এর অর্থ হলো, পার্শ্ব, । (صَفْحَةُ الْوَرَقِ) অর্থাৎ কাগজের এক পাশ; পৃষ্ঠা। এমনিভাবে হাতের দু’টি দিক রয়েছে, তালুর দিক, উপরের দিক।

অতএব (صَافَحَهُ مُصَافَحَةً) এর অর্থ হলো, নিজের হাতের এক দিক অপরের হাতের আরেক দিকের সাথে মিলানো। এটা হলো অর্ধেক মুসাফাহা। অতঃপর যখন আরেক হাত রাখবে তখন প্রত্যেকের অপর হাত আরেকজনের অপর হাতের সাথে মিলে যাবে। এটা হলো পূর্ণ মুসাফাহা।

মুসাফাহার সঠিক পদ্ধতি হলো, উভয় হাতে মুসাফাহা করা। মুসাফাহার সময় প্রত্যেকের এক হাত অপর ব্যক্তির দুই হাতের মাঝে থাকবে। কেউ কেউ শুধু আঙ্গুল মিলিয়ে থাকেন, এটা ঠিক না।

হাদীসের আলোকে দুই হাতে মুসাফাহার দলীল

ইমাম বুখারী রহ. স্বীয় গ্রন্থ সহীহ বুখারীর ৭৫৫ নম্বর পৃষ্ঠায় باب المصافحة নামে পরিচ্ছেদ স্থাপন করেছেন। যাতে তিনি হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. থেকে বর্ণনা এনেছেন,  عَلَّمَنِي النَّبِىُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ التَّشَهُّدَ وَكَفِّي بَيْنَ كَفَّيْهِ অর্থাৎ ‘হুযূর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তাশাহহুদ শেখালেন, এমতাবস্থায় যে আমার হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উভয় হাতের মাঝে ছিলো’।

এরপর ইমাম বুখারী রহ. باب الأخذ باليدين তথা ‘উভয় হাত ধরা’ নামে আরেকটি পরিচ্ছেদ স্থাপন করেছেন। আর তাতে হাম্মাদ ইবনে যায়েদ রহ. এবং আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. এর মুসাফাহার পদ্ধতি উল্লেখ করেছেন যে, তারা উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন।

অতঃপর উভয় হাতের মুসাফাহার দলীল হিসাবে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. এর উপরোক্ত বর্ণনাটি পূর্ণ সনদসহ এনেছেন যে, আমার হাত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উভয় হাতের মাঝে ছিলো।

এর দ্বারা পরিষ্কার বোঝা যায় যে, নবীয়ে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক হাত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. এর দুই হাতের মাঝে ছিলো। কারণ নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাতে মুসাফাহা করলে তাঁর কোন সাহাবী এক হাতে মুসাফাহা করতে পারেন না। কারণ তাঁরা ছিলেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আশেক ও কদমে কদমে তাঁর অনুসারী।

বিজ্ঞ আলেমগণ ভালভাবেই জানেন যে, ইমাম বুখারী রহ. এর এ বাবের দ্বারা উদ্দেশ্য এটাই যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাতেই মুসাফাহা করতেন। আর পরবর্তীতেও উম্মতের মাঝে এ আমলই জারী ছিলো।

ইমাম বুখারী রহ. তার কিতাব ‘আত তারীখুল কাবীরে’ লেখেন, اسماعيل بن ابراهيم بن المغيرة الجعفي، أبو الحسن : رأى حماد بن زيد، صافح ابنَ المبارك بكلتا يديه অর্থাৎ ইসমাঈল (ইমাম বুখারী রহ. এর পিতা) ইবনে ইবরাহীম রহ. বলেন, তিনি হাম্মাদ ইবনে যায়েদ রহ. কে দেখেছেন যে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ. এর সাথে উভয় হাতে মুসাফাহা করেছেন। এখানে জ্ঞাতব্য যে, এই উভয় ব্যক্তিই স্বীয় যামানার মুহাদ্দিসীনে কেরামের ইমাম ছিলেন। ইমাম আব্দুর রহমান ইবনে মাহদী রহ. বলেন যে, ‘(হাদীস শাস্ত্রের) ইমাম হলেন চারজন। যথা, ১. মালেক রহ. ২. সুফিয়ান সাউরী রহ. ৩. হাম্মাদ ইবনে যায়েদ রহ. ও ৪. আব্দুল্লাহ ইবনে মুবারক রহ.।’

অন্যান্য মুহাদ্দিসও উভয় হাতে মুসাফাহার কথা উল্লেখ করেছেন।

হযরত আয়েশা সিদ্দীকা রাযি. বলেন, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এক মহিলাকে বললেন, قد بايعتك অর্থাৎ আমি তোমাকে বাই‘আত করলাম। হযরত আয়েশা রাযি. বলেন যে, তাকে শুধু কথার দ্বারা বাই‘আত করেছেন, হাত ধরে বাই‘আত করেননি।

আল্লামা কস্তল্লানী রহ. ও আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহ. হযরত আয়েশা রাযি. এর উক্ত বক্তব্যের ব্যাখ্যায় লেখেন, اى لا باليد كما كان يبايع الرجال بالمصافحة باليدين অর্থাৎ হাত দিয়ে বাই‘আত করেননি, যেমন পুরুষদের বাই‘আত করতেন উভয় হাতে দিয়ে মুসাফাহার মাধ্যমে।

ফিকহের আলোকে দুই হাতে মুসাফাহার দলীল

মুহাদ্দিসীনে কেরামের সাথে সাথে ফুক্বাহায়ে কেরাম; যাদের অনুসরণ করার নির্দেশ কুরআন ও হাদীসে এসেছে, তারাও উভয় হাতে মুসাফাহা করাকে সুন্নাত বলেন। আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী তাঁর প্রসিদ্ধ গ্রন্থ ফাতাওয়ায়ে শামীতে লেখেন, والسنة فيها ان تكون بكلتا اليدين অর্থাৎ মুসাফাহার সুন্নাত হলো, (মুসাফাহা) দুই হাতে হওয়া।

এক হাতে মুসাফাহার প্রচলন

মুসলমানদের মাঝে উভয় হাতে মুসাফাহা করার পদ্ধতিটি উম্মাহর একটি নিরবচ্ছিন্ন কর্মধারা, যা যুগ পরম্পরায় স্বীকৃত। ইংরেজদের আমলের পূর্বে কোন ইসলামী গ্রন্থে দুই হাতে মুসাফাহা করাকে বিদ‘আত বা সুন্নাতের খেলাফ বলে মন্তব্য করা হয়নি।

ইংরেজ আমলের শুরুর দিকেও মুসলমানরা পরস্পর সাক্ষাতের সময় দুই হাতে মুসাফাহা করতো। আর ইংরেজরা পরস্পর সাক্ষাতের সময় এক হাতে মুসাফাহা করতো, যাকে মূলত তারা হ্যান্ডশেক বলতো। ইংরেজদের এ প্রথাকে সর্বপ্রথম গ্রহণ করে তৎকালীন আধুনিক শিক্ষিতরা। তারা কলেজ ভার্সিটিতে এক হাতে মুসাফাহা করার রেওয়াজ শুরু করে দেয়। অবশ্য এটাকে তারা ইংরেজদের পদ্ধতিই মনে করতো। কিন্তু পরবর্তীতে সেসব আধুনিক শিক্ষিতদের তাকলীদ করে কথিত আহলে হাদীসরাও নিজেদের অসৎ উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য শুধু এক হাতে মুসাফাহা করার রীতি বের করে। কিন্তু পার্থক্য হলো কথিত আহলে হাদীসরা ইংরেজদের পদ্ধতিটিকে সুন্নাত সাব্যস্ত করে মুসলমানদের মাঝে যুগ যুগ ধরে উম্মাহর নিরবচ্ছিন্ন কর্ম পরম্পরায় চলে আসা দুই হাতে মুসাফাহার আমলী পদ্ধতিকে বিদ‘আত ও সুন্নাত পরিপন্থী বলে প্রচারণা শুরু করে দেয়। সেই সাথে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের অনুসারী জামা‘আতকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সুন্নাতের বিরোধী, সুন্নাত ধ্বংসকারী হিসাবে প্রচার করতে শুরু করে। মুসলমানদের মাঝে প্রচলিত ইসলামী পদ্ধতিটি মিটিয়ে দেয়াকে সুন্নাত জিন্দা করার নামে অভিহিত করতে থাকে। এভাবেই সালাম ও মুসাফাহা, যা এক সময় মুসলমানদের পরস্পর মুহাব্বত ও মাগফিরাতের মাধ্যম ছিলো, সেটা বিবাদ-ঝগড়া ও বিভক্তির মাধ্যম হয়ে দাঁড়িয়েছে।

একহাতে মুসাফাহা করার দলীলের পর্যালোচনা

একহাতে মুসাফাহা করার ব্যাপারে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোনও কওল, ফে’ল কিংবা তাকরীর, সহীহ, হাসান অথবা যঈফ পর্যায়েরও কোনও হাদীস; হাদীসের গ্রন্থে পাওয়া যায় না। আহলে হাদীসরা মুসাফাহা সম্পর্কে এ ধরণের হাদীস উপস্থাপন করতে আজ পর্যন্ত ব্যর্থ, ইনশাআল্লাহ কিয়ামত পর্যন্ত ব্যর্থই থাকবে।

তবে ‘সালাম’-এর কিছু হাদীস রয়েছে যেগুলোতে أخذ باليد، أخذ بيده অর্থাৎ ‘হাত ধরেছেন’ ইত্যাদি শব্দ এসেছে। আর يد শব্দটি এক বচন। যার দ্বারা বোঝা যায় যে, এক হাতেই মুসাফাহা করা উচিত। এ সকল হাদীসগুলোকে আমাদের আহলে হাদীস বন্ধুগণ এক হাতে মুসাফাহার দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন।

প্রিয় পাঠক! আহলে হাদীস বন্ধুদের এ বক্তব্য শুনে হাদীস সম্পর্কে তাদের অজ্ঞতা স্পষ্ট হয়। দেখুন, মানুষের শরীরে কিছু অঙ্গ রয়েছে যেগুলো একাধিক। যেমন, দুই হাত, দুই পা, দুই কান, দুই চোখ ইত্যাদি। এক ধরণের হওয়ার কারণে পৃথিবীর সকল ভাষায় এগুলোর প্রত্যেকটির ক্ষেত্রে এক বচনই ব্যবহার করা হয়। যেমন বলা হলো, ‘আমি আপনাকে সেখানে স্বচক্ষে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখেছি’। একথার দ্বারা কি কোন বেওকুফ একথা বুঝবে যে, লোকটি কানা, তাই এখানে ‘স্বচক্ষে’ একবচন ব্যবহার করা হয়েছে? কখনো বলা হয় যে, ‘আমি নিজ কানে তোমার কথা শুনেছি’। এর মানে কি লোকটি কথা শোনার সময় অপর কানটি বন্ধ করে রেখেছিলো? কেউ বললো, ‘আমি আমার পা সেখানে রাখবো না’। এর মানে কি এটা যে, লোকটির একটিই পা?

আল্লাহ পাক কুরআনে কারীমে ইরশাদ করেছেন, وَلَا تَجْعَلْ يَدَكَ مَغْلُولَةً إِلَى عُنُقِكَ وَلَا تَبْسُطْهَا كُلَّ الْبَسْطِ فَتَقْعُدَ مَلُومًا مَحْسُورًا

অর্থ: (কৃপণতাবশত) নিজের হাত ঘাড়ের সাথে বেঁধে রেখো না এবং (অপব্যয়ী হয়ে) তা সম্পূর্ণরূপে খুলে রেখো না, যার ফলে তোমাকে নিন্দাযোগ্য ও নিঃস্ব হয়ে বসে পড়তে হয়।

এ আয়াতে কি এক হাতই উদ্দেশ্য? আর সে হাত কি ডান হাত?! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে দু‘আ করতেন। আর অন্যদেরও শিখাতেন যে, اَللَّهُمَّ اجْعَلْ فِي بَصَرِي نُورًا وَاجْعَلْ فِي سَمْعِي نُورًا

অর্থ: হে আল্লাহ! আমার চোখে নূর দাও! আমার কানে নূর দাও!

তাহলে এ হাদীসে কি بصر ও سمع এক বচন ব্যবহার হওয়ার কারণে এক কান ও এক চোখ বোঝানো উদ্দেশ্য? কখনোই না। তাছাড়া বুখারী শরীফের প্রসিদ্ধ হাদীস-  اَلْمُسْلِمُ مَنْ سَلِمَ الْمُسْلِمُونَ مِنْ لِسَانِهِ وَيَدِهِ

অর্থ: প্রকৃত মুসলমান ঐ ব্যক্তি, যার হাত ও মুখ হতে অপর মুসলমান নিরাপদ থাকে।

তেমনিভাবে মুসলিম শরীফের হাদীস-  مَنْ رَأَى مِنْكُمْ مُنْكَرًا فَلْيُغَيِّرْهُ بِيَدِهِ

অর্থ: যে ব্যক্তি কোন নিষিদ্ধ কাজ দেখে, সে যেন তা হাত দিয়ে প্রতিহত করে।   এসব হাদীসে يد এক বচন আসায় কি এক হাতই উদ্দেশ্য? এক্ষেত্রেও কি অন্য হাত ব্যবহার করা সুন্নাতের খেলাফ হবে?

এরপরও তর্কের খাতিরে যদি মুসাফাহার হাদীসে يد (হাত) দ্বারা এক হাতই উদ্দেশ্য নেয়া হয়, তাহলে আরবীতে يد শব্দতো আঙ্গুল থেকে নিয়ে কাঁধ পর্যন্ত পূর্ণ অংশকেই বোঝায়। এ অর্থ হিসাবে যদি মুসাফাহার সময় দুই ব্যক্তি পরস্পর কনিষ্ঠাঙ্গুল মিলায় বা উভয়ের বাম কাঁধ পরস্পর মিলায়, তাহলে কি এ হাদীসের উপর আমল হবে? এবং এটা কী মুসাফাহা গণ্য হবে? কিছুতেই হবে না?

যদি একথা মেনেও নেয়া হয় যে, এখানে يد দ্বারা এক হাতই উদ্দেশ্য, তবুও উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল; যা স্পষ্ট হাদীস দ্বারা প্রমাণিত, সেটাকে বিদ‘আত ও খেলাফে সুন্নাত কিভাবে বলা যায়? দেখুন! রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে এক কাপড়ে নামায আদায় করা সহীহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। কিন্তু উম্মতের নিরবচ্ছিন্ন আমল হলো তিন কাপড়ে নামায পড়া। উম্মতের এ নিরবচ্ছিন্ন আমলের মাঝে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের এক কাপড়ে নামায পড়ার হাদীসের উপরও আমল হয়ে যাচ্ছে। সাথে সাথে অন্য হাদীসের উপরও। আজ পর্যন্ত উম্মতের এ নিরবচ্ছিন্ন আমলকে কেউ খেলাফে সুন্নাত বলে মন্তব্য করেনি।

তেমনিভাবে উম্মতের মাঝে দুই হাতে মুসাফাহা করার যে নিরবচ্ছিন্ন আমল চলে আসছে, তাতে এক হাতে মুসাফাহা করার হাদীসের উপরও আমল হয়ে যাচ্ছে। সেই সাথে দুই হাতে মুসাফাহা করার হাদীসের উপরও আমল হয়ে যাচ্ছে। তাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা‘আতের কোন হাদীসের বিরোধিতা করার ভয় নেই।

যেমন, হাদীসে উযূর মধ্যে একবার করে অঙ্গ ধোয়ার কথা এসেছে, তেমনিভাবে দুইবার করে ধোয়ার হাদীসও রয়েছে, সেই সাথে তিনবার করে ধোয়ার হাদীসও বিদ্যমান। এখন যে ব্যক্তি তিনবার করে অঙ্গ ধৌত করবে, সে তিন হাদীসের উপরই আমল করলো। পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি একবার করে অঙ্গ ধৌত করবে, সে সুনিশ্চিতভাবে দু’টি হাদীসের উপর আমল করেনি। এখন এই ব্যক্তি যদি এ প্রোপাগাণ্ডা শুরু করে যে, একবার করে অঙ্গ ধৌত করাই সুন্নাত, আর তিনবার করে ধৌত করা বিদ‘আত ও খেলাফে সুন্নাত, তাহলে এ মূর্খের ব্যাপারে যতই আফসোস করা হোক না কেন, তা কমই হবে।

মোটকথা, ইজমায়ে উম্মতের বিপরীতে কিছু নামধারী আহলে হাদীস শুধু নিজেদের মনগড়া ব্যাখ্যা অনুসারে يد দ্বারা এক হাত উদ্দেশ্য নিয়েছে। যেখানে পুরো উম্মত يد দ্বারা এর জিন্স তথা হস্তসমূহ উদ্দেশ্য নিয়ে উভয় হাত উদ্দেশ্য নিয়েছে। শুধু তাই নয়, লা-মাযহাবীরা নিজেদের পক্ষ থেকে يد দ্বারা ডান হাতকে সুনির্দিষ্ট করে নিয়েছে। সেই সাথে কেবলই নিজ মতের ভিত্তিতে দুই হাতে মুসাফাহা করার হাদীসকে শুধু অস্বীকারই করেনি, বরং খেলাফে সুন্নাত সাব্যস্ত করেছে।

পাঠক! তারা ডান হাতে মুসাফাহা করার বিষয়টি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কোন কওল, ফেল বা তাক্বরীর, হাসান, সহীহ বা যঈফ কোন হাদীস দ্বারাই প্রমাণ করতে ব্যর্থ হয়ে আভিধানিক অর্থ দিয়ে দলীল পেশ করে থাকে। বলে যে, মুসাফাহা হাতের তালু মিলানোর নাম। আমরা বলবো, যদি দুই ব্যক্তি তাদের হাতের বাম তালু দিয়ে মুসাফাহা করে, তাহলে আভিধানিক অর্থে এটাও মুসাফাহা বলে সাব্যস্ত হয়, কিন্তু তারাও তো এটাকে মুসাফাহা বলে না।

অনেক আহলে হাদীস বন্ধু একথা বলে থাকে যে, ‘যদিও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দুই হাতে মুসাফাহা করেছিলেন, কিন্তু আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. তো এক হাতেই করেছেন। আর আমি তো নবী নই যে, উভয় হাতে মুসাফাহা করবো। আমি এখানে নবীর বদলে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. এর অনুসরণ করি’। এর উত্তর হলো, যেমনিভাবে আপনি নবী নন, তেমনি ইবনে মাসঊদ রাযি. এর মত সাহাবীও নন যে, এক হাতে মুসাফাহা করবেন। তাই আপনি এক আঙ্গুলের সাথে অন্য আঙ্গুল মিলিয়ে মুসাফাহা করবেন, যাতে আপনার নবী হওয়ারও কোন সন্দেহ না থাকে, আবার সাহাবী হওয়ারও কোন সম্ভাবনা না থাকে’!! আশ্চর্য! কোন হাদীসে তো ‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. উভয় হাতে মুসাফাহা করেননি’ একথা আসেনি। তাহলে কীভাবে বুঝলেন যে, তিনি এক হাতে মুসাফাহা করেছেন? তাছাড়া একথা কিছুতেই যৌক্তিক হতে পারে না যে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উভয় হাত মুবারক বাড়িয়েছেন। আর ইবনে মাসঊদ রাযি. কেবল এক হাত বাড়িয়েছেন! তিনি কখনো তথাকথিত আহলে হাদীসদের ন্যায় বেয়াদব ছিলেন না।

আসল কথা হলো, যখন কোনও ব্যক্তি উভয় হাতে মুসাফাহা করে, তখন এক হাতের উভয় পাশে অন্যজনের উভয় হাত লেগে থাকে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসঊদ রাযি. এক হাতের সৌভাগ্যের কথা বর্ণনা করছেন যে, আমার এ হাতের উভয় পাশে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উভয় হাত মুবারক লেগে ছিলো। নিজের অপর হাত লাগানো ছিলো না একথা বলেননি।

আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আমাদেরকে সহীহ বুঝ দান করুন, সুন্নাতের উপর আমল করার তৌফিক দান করুন। আমীন।