elektronik sigara

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপের নতুন আপডেট এসেছে। আমরা যারা মোবাইল ফোন ব্যবহারকারী, আমরা সবাই ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপটি আপডেট করে নেই।

 

ইসলামী যিন্দেগী এ্যাপ ব্যবহারকারীদের সকলকে জানানো যাচ্ছে যে, অনেক লম্বা সময় ধরে আমাদের ২টি ওয়েবসাইটই হ্যাক হচ্ছিল। ফলে আমাদের ব্যবহারকারীরা ঠিকমতো কিতাব, প্রবন্ধ ডাউনলোড করতে, পড়তে এবং বয়ান ডাউনলোড করতে, শুনতে অসুবিধা বোধ করছিল। এছাড়াও আরো অনেক ধরনের সমস্যা হচ্ছিল। ফলে ব্যবহারকারীদের সুবিধার জন্য এবং হ্যাকারদের থেকে আরো বেশী নিরাপদে থাকার জন্য আমরা আমাদের এ্যাপটি আপডেট করেছি।

 

আলহামদুলিল্লাহ, বর্তমান আপডেটে অনেক নতুন দীনী প্রয়োজনীয় জিনিস সংযোগ করা হয়েছে যা যে কোন দীনদার ব্যবহারকারীর জন্য আনন্দের বিষয় হবে বলে আশা করি।

 

যেহেতু আমরা সম্পূর্ণ নতুনভাবে কাজ করেছি তাই এ্যাপটি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রথম দিকে আপনাদের সমস্যা মনে হতে পারে। কিন্তু পরবর্তীতে তা আগের চেয়ে আরো সহজ মনে হবে ইনশাআল্লাহ। আর আমরা এখন পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছি তাই আপনাদের নজরে কোন ভুল বা অসঙ্গতি নজরে পড়লে আমাদের উপর নারাজ না হয়ে সুপরামর্শ দেয়ার বিশেষ আবেদন রইলো।

 

পরামর্শ দেয়ার ঠিকানা: islamijindegi@gmail.com

 

এতোদিন আমরা ২টি ওয়েবসাইট চালিয়েছি www.darsemansoor.com এবং www.islamijindegi.com আমরা এই ‍দুটি এ্যাপের সমস্ত তথ্য সহ আরো অনেক জিনিস নতুন সংযোগ করে একটি ওয়েবসাইট তৈরী করেছি। সবাইকে উক্ত ওয়েবসাইটে ভিজিট করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি।

www.islamidars.com

ইনশাআল্লাহ জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসায় দাওয়াতুল হকের মাহফিল অনুষ্ঠিত হবে আগামী ২৯শে সফর, ১৪৪৫ হিজরী, ১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ঈসা‘য়ী, শুক্রবার (ফজর নামাযের পরপরই শুরু হবে ইনশাআল্লাহ)

হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।

হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।

ইসলামী শরী‘আতে মনগড়া ইবাদতের বৈধতা নেই। ইবাদতের মৌলিক বুনিয়াদ হলোঃ কুরআন এবং সুন্নাহ। এর বাইরে ইবাদতের নামে কোন কিছু করলে সেটা হবে বিদ‘আত ও গোমরাহী। হাদীস শরীফে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেনঃ “প্রত্যেক বিদ‘আত গোমরাহী, আর প্রত্যেক গোমরাহী জাহান্নামে টেনে নিয়ে যাবে।” (সুনানে নাসায়ী, হাদীস নংঃ ১৫৭৮)

মীলাদ প্রসঙ্গ :

মীলাদ এর আভিধানিক অর্থ জন্ম, জন্মকাল ও জন্ম তারিখ। পরিভাষায় মীলাদ বলা হয় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা বা জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনার মজলিস।

তবে আমাদের দেশে প্রচলিত মীলাদ বলতে বোঝায় ঐ সব অনুষ্ঠান, যেখানে মওজু’ রেওয়ায়েত সম্বলিত তাওয়ালূদ পাঠ করা হয় এবং অনেক স্থানে দুরূদ পাঠ করার সময় রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম মজলিসে হাজির-নাজির হয়ে যান-এই বিশ্বাসে কিয়ামও করা হয়। এসব করা হলে মূলত সেটাকে মীলাদ মাহফিল মনে করা হয়, চাই তাতে রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা হোক বা না হোক। পক্ষান্তরে এসব ছাড়া অর্থাৎ তাওয়ালূদ, সমস্বরে ভুল দরূদ তথা ইয়া নবী সালা-মালাইকা… এবং কিয়াম করা না হলে সেটাকে মীলাদ মনে করা হয় না।

মীলাদের হুকুমঃ

মীলাদ বলতে যদি এই অর্থ হয় যে, রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত নিয়ে আলোচনা, তাহলে নিঃসন্দেহে তা কল্যাণ ও বরকতের বিষয়। কিন্তু যদি প্রচলিত অর্থ উদ্দেশ্য হয়, যা উপরে উল্লেখ করা হলো, তাহলে তা কুরআন সুন্নাহের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ বিদ‘আত ও গোমরহী।

কেননা শরী‘আতের ভিত্তি যে চারটি বিষয়ের উপর তথা কুরআন, হাদীস, ইজমা ও কিয়াস, এই চারটির কোনটি দ্বারা উক্ত মীলাদ প্রমাণীত নয়।

দ্বিতীয়ত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাদেরকে সত্যের মাপকাঠি বলেছেন এবং যাদের যুগকে সর্বোত্তম যুগ বলে আখ্যায়িত করেছেন এবং যাদের আদর্শকে আঁকড়ে ধরতে বলেছেন তারা হলেন সাহবায়ে কিরাম। তাদের কারো থেকে এজাতীয় মীলাদ প্রমাণিত নেই, এবং তাদের কারো যুগেই এর অস্তিত্ব ছিল না। এমনকি চার মাযহাবের ইমামগণের কারো যুগেও তার হদিস ছিল না। এক কথায় রাসূলের যমানা থেকে দীর্ঘ ছয়শত (৬০০) বছর পর্যন্ত এর কোন অস্তিত্ব ছিল না। বরং ৬০৪ হিজরীতে তার সূচনা হয়।

কিয়াম প্রসঙ্গ :

কিয়াম শব্দের আভিধানিক অর্থ দাঁড়ানো। আর মুআশারা তথা সামাজিকতায় কিয়াম বলতে বোঝায় কারো আগমনে দাঁড়ানো। আর মীলাদের ক্ষেত্রে কিয়াম বলতে বোঝায় কোন মজলিসে সমস্বরে দরূদ পাঠ করার পর, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম উক্ত মজলিসে হাজির হয়ে গেছেন,এই ধারণায় ইয়া নবী বলতে বলতে তাঁর সম্মানে দাঁড়িয়ে যাওয়া, এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দুরূদ পাঠ করা।

মীলাদের মধ্যে কিয়ামের হুকুম :

এক. যখন উল্লেখিত আলোচনা দ্বারা একথা প্রমাণিত হলো যে, প্রচলিত মীলাদ কুরআন সুন্নাহ ইজমা কিয়াস আমল দ্বারা সাব্যস্ত নয়, এবং খাইরূল কুরুনের যুগে তার কোন অস্তিত্ব ছিল না, তখন কিয়াম বৈধ হওয়ার তো কোন প্রশ্নই আসে না।

উপরোন্তু নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁর জীবদ্দশায় নিজের জন্য কিয়াম করাকে অপছন্দ করতেন। ফলে সাহাবায়ে কিরাম তাঁর প্রতি অপরিসিম মুহাব্বত ও ভালোবাসা থাকা সত্বেও, তিনি যখন স্বশরীরে উপস্থিত হতেন তখন তাঁকে দেখতে পেয়েও তারা দাঁড়াতেন না। সুতরাং যখন তিনি তাঁর জীবদ্দশায়ই তাঁর সম্মানে দাঁড়ানোকে অপছন্দ করতেন, তখন স্বয়ং রাসূলের অপছন্দনীয় বস্তুকেই রাসূলের জন্য সম্মানের বিষয় নির্ধারণ করা, নিজেদের অজ্ঞতা প্রকাশ করা কিংবা রাসূলের প্রতি অবজ্ঞা ও উপহাস করা ছাড়া, আর কি বলা যেতে পারে!! (আল্লাহ তা‘আলা আমাদের হিফাযত করুন)

দুই. হাদীস শরীফে আছে- হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে আমার কবরের নিকট এসে আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে আমি তা সরাসরি শুনব, আর যে দূরে থেকে আমার উপর দুরূদ পাঠ করবে তা আমার নিকট পৌঁছানো হবে। (শুআবুল ঈমান হা.নং-১৫৮৩)

অন্যত্র আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন- আল্লাহর কতক ফিরিশতা রয়েছেন, যারা গোটা পৃথিবীতে বিচরণ করতে থাকেন, এবং উম্মতের সালাম আমার নিকট পেশ করেন। (দারেমী, হা.নং-২৭৭৪)

সুতরাং তাদের কথা অনুযায়ী যদি রাসূল দরূদের মজলিসে সস্বশরীরে হাযির হয়ে থাকেন, তাহলে উল্লেখিত হাদীসের কি অর্থ থাকে, যেখানে স্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে যে, ফিরিশতা দ্বারা দুরূদ পৌঁছানো হয়। মূলত এটা চরম অজ্ঞতার বর্হিঃপ্রকাশ ছাড়া কিছুই না।

তিন. কুরআন এবং হাদীসের অসংখ্য দলীল দ্বারা একথা প্রমাণিত যে, রাসূল হাযির-নাযির নন। একমাত্র আল্লাহ তা‘আলাই হাযির-নাযির বা সর্বত্র বিরাজমান। বিস্তারিত জানার জন্য দেখুন- (তোহফায়ে আহলে বিদ‘আত, ইসলামী আকিদা ও ভ্রান্ত ধারণা)

প্রচলিত মীলাদের ব্যাপারে প্রসিদ্ধ উলামায়ে কিরামের উক্তিঃ

ইমাম সুয়ূতী রহ. বলেনঃ

প্রচলিত মীলাদ না কুরআন সুন্নাহর কোথাও আছে, না পূর্ববর্তী উম্মতের আদর্শ কোন ব্যক্তি থেকে প্রমাণিত। বরং তা সুস্পষ্ট বিদ‘আত, যার আবিষ্কারক হলো একদল পেটপূজারী। (আল-হাবী লিল ফাতওয়া: ১/২২২-২২৩)

হাফেয সাখাবী রহ. তার ফাতওয়া গ্রন্থে উল্লেখ করেনঃ

এজাতীয় মীলাদ সর্বোত্তম তিন যুগের সালফে সালিহীনের কারো থেকে সাব্যস্ত নেই। বরং এর পরবর্তী যুগে সূচনা হয়েছে। (সুবুলুল হুদা ওয়ার রাশাদ: ১/৩৬২)

আল্লামা আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মিসরী মালেকী রহ. বলেনঃ

চার মাযহাবের উলামায়ে কিরাম এজাতীয় প্রচলিত মীলাদ নিন্দণীয় হওয়ার ক্ষেত্রে ঐক্যমত পোষণ করেন। (আল ক্বওলুল মু’তামাদ, পৃষ্ঠা: ১৬২)

সহীহ ও বৈধ মীলাদঃ

মীলাদের অর্থ হল জন্ম। মীলাদ মাহফিলের উদ্দেশ্য হলো নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম যেসব লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যে হয়েছে এবং তিনি নবুয়তের ২৩ বছরে উম্মতের জন্য কি কি সুন্নাত বা তরিকা রেখে গেছেন, তার কোন কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করা, এবং আলোচনা শেষে শ্রোতাগণ নিজস্ব ভাবে হাদীসে বর্ণিত সহীহ দরূদ ৩ বার বা ১১ বার পড়ে নেয়া, তারপর সকলে মিলে দু‘আ মুনাজাত করা। এ হলো সহীহ মীলাদের রূপরেখা। এর মধ্যে কোন গুনাহ নেই, বরং এটা বরকতময় মাহফিল।

ঈদে মিলাদুন্নবী ও জশনে জুলুস প্রসঙ্গঃ

রবিউল আউয়াল মাসের ১২ তারিখ এলে সমাজের এক শ্রেণীর লোক নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্মদিন পালনের নামে জশনে জুলুসে ঈদে মীলাদুন্নবীর ব্যাপক উৎসব  ও আনন্দমুখর আয়োজন করে থাকে।

একে কেন্দ্র করে দেয়াল লিখন, ব্যানার বানানো, সভা-সমাবেশ, গেইট সাজানো, রাসূলের শানে কাসিদা পাঠ, নকল বাইতুল্লাহ ও রওজা শরীফের প্রতিকৃতি নিয়ে রাস্তায় নারী-পুরুষের সম্মিলিত শোভাযাত্রা, ঢোল-তবলা ও হারমোনিয়াম সজ্জিত ব্যান্ডপার্টির গগণবিদারী নিবেদন (!) গান-বাজনা এবং নারী-পুরুষের উদ্দাম নাচা-নাচি ও অবাধ ঢলাঢলি। অবশেষে মিষ্টি ও তবারক বিতরণ করা হয়ে থাকে। এবং এটাকে মহাপূণ্যের কাজ ও শ্রেষ্ঠ ঈদ হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে।

শরঈ দৃষ্টিতে এর হুকুম :

এক. ইসলামে কোন মহা-মনীষীর জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালনের বিধান নেই।

যদি থাকত তাহলে বছরের প্রত্যেক দিনই জন্ম বা মৃত্যু দিবস পালন করতে হতো। কেননা লক্ষাধিক নবী-রাসূল ও লক্ষাধিক সাহাবা এবং শত সহস্র ওলী-বুযুর্গ দুনিয়াতে আগমন করে বিদায় নিয়ে গেছেন। আর তালাশ করলে দেখা যাবে, বছরের প্রত্যেক দিন কোন না কোন নবী কিংবা সাহাবা অথবা কোন বুযুর্গ জন্ম গ্রহন করেছেন কিংবা ইন্তিকাল করেছেন। ফলে সারা জীবন কেবল জন্ম দিবস আর মৃত্যু দিবস পালনের মাঝেই কেটে যাবে। ইবাদত বন্দেগীর সুযোগ হবে না। কখনো দেখা যাবে একই দিনে কোন মহামনীষী জন্ম গ্রহন করেছেন আবার কোন মনীষী ইন্তিকাল করেছেন।  তখন একই দিন জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করতে হবে। যার পরিণতি হবে সমাজে সর্বদা অশৃঙ্খল-গোলযোগ মারামারি। অথচ ইসলাম মানুষকে সুশৃঙ্খল যিন্দেগী যাপন করা শিখায়।

দুই. নবীজী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম নবুয়ত লাভের পর ২৩ বছর জীবত ছিলেন। অতঃপর রাসূলের ইন্তিকালের পর সাহাবায়ে কিরাম ১১০ বছর পর্যন্ত দুনিয়াতে ছিলেন। এই সূদীর্ঘ কালের প্রতি বছরই রবিউল আউয়াল মাস আসতো, কিন্তু কোন বছরই না রাসূল স্বয়ং নিজের জন্মদিন পালন করেছেন, এবং না কোন সাহাবা করেছেন।

তিন. জাহেলী যুগে মদীনাবাসীরা (প্রথা অনুযায়ী) দুটি দিনে আনন্দ উৎসব করতো। অতঃপর আল্লাহর রাসূল মদীনায় আগমন করে বললেন, আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের জন্য এ দুটি দিনের চেয়ে উত্তম দুটি দিন তথা ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা নির্ধারণ করে দিয়েছেন। (সুনানে নাসাঈ হা.নং-১৫৫৬)

এর দ্বারা একথা প্রতিয়মান হয় যে, মুসলমান কখনো নিজেরা নিজেদের ঈদ নির্ধারণ করতে পারে না। বরং তা আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে নির্ধারিত হয়ে থাকে। আর কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী মুসলমানদের ঈদ হলো দু’টি, ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। সুতরাং তৃতীয় কোন দিনকে ঈদ হিসাবে নির্ধারণ হলে, সেটা হবে স্পষ্ট বিদ‘আত ও গোমরাহী। কুরআন-সুন্নাহর সাথে যার আদৌ কোন সম্পর্ক নেই।

সাহাবা, তাবেঈন এবং তাবে তাবেঈন এই তিন সোনালী যুগে এর কোন অস্তিত্ব ছিলো না। কুরআন-সুন্নাহয় ও আইম্মায়ে মুজতাহিদীনের আলোচনায় দুই ঈদের অধ্যায় আছে এবং মাসাইলের আলোচনা আছে, কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী নামে না কোন অধ্যায় আছে, না তার ফাযায়েল ও মাসাইলের আলোচনা আছে।

এ ঈদ যেমন মনগড়া, তার পালনের রীতিও মনগড়া। এ ক্ষেত্রে যে সকল ফযীলতের কথা বর্ণনা করা হয়, সে সবও জাল এবং বানোয়াট। নির্ভরযোগ্য কোন হাদীসের কিতাবে সেগুলোর নাম-গন্ধও নেই। প্রমাণের জন্য বাংলা ভাষায় অনূদিত হাদীস ও ফিকহের কিতাবগুলো দেখা যেতে পারে। সেগুলোতে দুই ঈদের কথা সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ রয়েছে, কিন্তু কথিত শ্রেষ্ঠ ঈদের আলোচনা কুরআন-হাদীসের কোথাও নেই।

ঈদে মীলাদুন্নবীর সূচনা যেভাবে হয় :

মুসলিম সাম্রাজ্যে প্রাধান্য বিস্তারকারী খৃষ্টানরা ঈসা ‘আলাইহিস সালামের জন্মদিবস উপলক্ষে “ক্রিসমাস-ডে” পালন করতো, তাদের সেই আড়ম্বরপূর্ণ জন্মোৎসবের জৌলুসে দূর্বল ঈমানের মুসলমানরা প্রভাবিত হয়ে পড়ে, এবং মুসলিম সমাজে খৃষ্টানদের ন্যায় নবীর জন্ম উদযাপনের রেওয়াজ না থাকায় তারা এটাকে নিজেদের ত্রুটি হিসেবে সাব্যস্ত করে।

এরই ধারাবাহিকতায় ইরাকের মুসেল নগরীতে, স্বেচ্ছাচারী বাদশাহ মালিক মুযাফ্ফর আবু সাঈদ কূকবুরী (মৃত ৬৩০হি.) ৬০৪ হিজরীতে সর্বপ্রথম এই ঈদে মীলদুন্নবীর সূচনা করে। এরপর তার দেখাদেখি অন্য লোকেরাও শুরু করে।

উক্ত বাদশাহ সম্পর্কে ইমাম আহমাদ ইবনে মুহাম্মাদ মিসরী মালেকী লেখেন- সে একজন অপব্যয়ী বাদশাহ ছিলো। সে তার সময়কালের আলেমদের হুকুম দিতো, তারা যেন তাদের ইজতিহাদ ও গবেষণা অনুযায়ী আমল করে এবং অন্য কারো মাযহাবের অনুসরণ না করে। ফলে দুনিয়া পূজারী একদল আলেম তার ভক্ত এবং দলভূক্ত হয়ে পড়ে। (আল কাওলুল মু’তামাদ ফী আমলিল মাওলিদ, রাহে সুন্নাত সূত্রে,পৃষ্ঠা: ১৬২)

উক্ত অপব্যয়ী বাদশাহ প্রজাগণের মনোরঞ্জন ও নিজের জনপ্রিয়তা অর্জনের লক্ষে প্রতি বছর ১২ই রবীউল আউয়ালকে কেন্দ্র করে মীলাদুন্নবী উদযাপন করতো। এবং এ অনুষ্ঠানে সে রাষ্ট্রীয় কোষাগার হতে তিন লক্ষ দীনার ব্যয় করতো । (আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়াঃ-১৩/১৩৯-১৪০)

অতপর দুনিয়ালোভী দরবারী মৌলবী উমর ইবনে দেহইয়া আবূল খাত্তাব মীলাদ মাহফিল ও জশনে জুলুসের  স্বপক্ষে দলীলাদী সম্বলিত কিতাব রচনা করে বাদশার কাছ থেকে প্রচুর অর্থ কড়ি হাতিয়ে নেয়। তার ব্যাপারে হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানী রহ. বলেন-

সে আইম্মায়ে দীন এবং পূর্বসূরী উলামায়ে কেরামের ব্যাপারে অত্যন্ত আপত্তিকর ও গালিগালাজ মূলক কথাবার্তা বলত। সে দুষ্টভাষী, আহমক এবং অত্যন্ত অহংকারী ছিল। আর ধর্মীয় ব্যাপারে ছিল চরম উদাসীন। (লিসানুল মিযান: ৪/২৯৬)

তিনি আরো বলেন- আমি মানুষদেরকে তার ব্যাপারে মিথ্যা ও অবিশ্বাস যোগ্যতার ক্ষেত্রে ঐক্যবদ্ধ পেয়েছি। (লিসানুল মিযান ৪/২৯০)

মুহাক্কিক উলামায়ে কিরামের দৃষ্টিতে মীলাদুন্নবী :

১. আল্লামা তাজুদ্দীন ফাকেহীনী রহ. ছিলেন মীলাদ উদ্ভবকালের একজন সুপ্রসিদ্ধ আলেম। তিনি মীলাদের প্রতিবাদে এক মূল্যবান কিতাব রচনা করেছেন। কিতাবটির নাম “আল মাওরিদ ফিল কালামিল মাওলিদ” উক্ত গ্রন্থে তিনি লিখেছেন-“মীলাদের এই প্রথা না কুরআনে আছে, না হাদীসে আছে। আর না পূর্বসূরীদের থেকে তা বর্ণিত আছে। বরং এটি একটি বিদ‘আত কাজ, যাকে বাতিলপন্থি ও স্বার্থপরগোষ্ঠী সৃষ্টি করেছে। আর পেট পূজারীরা তা লালন করেছে”। (বারাহীনে ক্বাতিআঃ-১৬৪)

২. আল্লামা ইবনুল হাজ্জ মালেকী রহ. যাকে মীলাদের গোঁড়া সমর্থক মৌলভী আহমদ রেজা খাঁ বেরেলভী ইমাম বলে আখ্যায়িত করেছেন, তিনি মাদখাল নামক গ্রন্থে লিখেছেন “লোকেরা যে সমস্ত বিদ‘আত কাজকে ইবাদত মনে করে এবং এতে ইসলামের শান শওকত প্রকাশ হয় বলে ধারণা করে, তন্মধ্যে রয়েছে মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান। রবীউল আউয়াল মাসে বিশেষ করে এ আয়োজন করা হয়, বস্তুত এসব আয়োজন অনুষ্ঠান অনেক বিদ‘আত ও হারাম কাজ সম্বলিত হয়”। (মাদখালঃ-১/৯৮৫ আল মিনহাজুল ওয়াজিহঃ-২৫২)

৩. আল্লামা ইবনে তাইমিয়া রহ. লিখেছেন – প্রচলিত এই মীলাদ অনুষ্ঠান যা সালফে সালিহীনের যুগে ছিল না। যদি এ কাজে কোন ফযিলত ও বরকত থাকত , তবে পূর্বসূরীরা আমাদের চাইতে বেশী হকদার ছিলেন ,কারণ তারা নবী প্রেমের ক্ষেত্রে আমাদের চাইতে অনেক অগ্রগামী এবং ভাল কাজে অধিক আগ্রহী ছিলেন। (ইকতিজা উসসিরাতিল মুস্তাকিমঃ-২৬৫)

৪. আল্লামা ইবনে হাজার আসক্বালানী রহ. কে প্রশ্ন করা হয়, মীলাদ অনুষ্ঠান কি বিদ‘আত? না শরী‘আতে এর কোন ভিত্তি আছে? জবাবে তিনি বলেন – মীলাদ অনুষ্ঠান মূলত বিদ‘আত । তিন পবিত্র যুগের সালফে সালিহীনের আমলে এর অস্তিত্ব ছিল না। (হিওয়ার মাআল মালিকীঃ-১৭৭)

৫. কুতুবুল আলম রশীদ আহমদ গংগুহী রহ. এক প্রশ্নের জবাবে লিখেন- “মীলাদ মাহফিলের অনুষ্ঠান সর্বাবস্থায় নাজায়িয। মনদুব কাজের জন্য ডাকাডাকি করা শরী‘আতে নিষিদ্ধ”। আল্লাহ সর্বজ্ঞ। অন্যত্র লিখেন- “বর্তমান যুগের মাহফিলগুলো যথা মীলাদ, ওরশ, তিন দিনা, চল্লিশা, সবই বর্জন করা দরকার। কেননা, এগুলোর অধিকাংশ গুনাহ ও বিদ‘আত থেকে মুক্ত নয়”। (ফাতওয়া রশীদিয়াঃ-১৩১)

৬. হাকীমুল উম্মাত শাহ আশরাফ আলী থানবী রহ. প্রচলিত ঈদে মীলদুন্নবীর যৌক্তিকতা খন্ডনের পর লিখেন – “মোট কথা, যুক্তি ও শরী‘আত উভয় দিক দিয়ে প্রমাণিত হল যে, এই নবোদ্ভাবিত ঈদে মীলাদুন্নবী নাজায়িয, বিদ‘আত এবং পরিত্যাজ্য”। (আশরাফুল জওয়াবঃ-১৩৮)

৭. সৌদি আরবের প্রধান মুফতী আল্লামা শায়েখ আব্দুল আযীয বিন বায রহ. এর ফাতওয়ায় তিনি এক প্রশ্নের জবাবে লিখেন – কুরআন সুন্নাহ তথা অন্যান্য শর‘ঈ দলীল মতে ঈদে মীলাদুন্নবীর আয়োজন অনুষ্ঠান ভিত্তিহীন, বরং বিদ‘আত। এতে ইহুদী, খৃষ্টানদের সাদৃশ্য পাওয়া যায়। এসব অনুষ্ঠানে মুসলমানদের যোগদান করা নাজায়িয। কেননা, এর দ্বারা বিদ‘আতের সম্প্রসারণ ও এর প্রতি উৎসাহ যোগানো হয়। (মাজমুউল ফাতওয়াঃ-৪/২৮০)

সুতরাং উল্লেখিত আলোচনার ভিত্তিতে শর‘ঈ দৃষ্টিতে দীনের নামে এ জাতীয় অনুষ্ঠান উদযাপন করা মারাত্মক বিদ‘আত ও না-জায়িয প্রমাণিত হয়, যা বর্জন করা সকলের জন্য জরুরী।