জামি‘আ রাহমানিয়া আরাবিয়া মাদরাসা থেকে প্রকাশিত একাডেমিক ক্যালেন্ডার পেতে ক্লিক করুন।
হযরতওয়ালা দা.বা. কর্তৃক সংকলিত চিরস্থায়ী ক্যালেন্ডার ডাউনলোড করতে চাইলে এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” এ ভিজিট করুন।
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা এর লিখিত সকল কিতাব পাওয়ার জন্য এ্যাপের “সর্বশেষ সংবাদ” থেকে তথ্য সংগ্রহ করুন।
হযরতওয়ালা দা.বা. এর কিতাব অনলাইনের মাধ্যমে কিনতে চাইলে ভিজিট করুনঃ www.maktabatunnoor.com
হযরতওয়ালা মুফতী মনসূরুল হক সাহেব দা.বা. এর নিজস্ব ওয়েব সাইট www.darsemansoor.com এ ভিজিট করুন।
লেখক: মুফতী মনসূরুল হক দা.বা. বিভাগ : বই ও আর্টিকেল তারিখ : ০১ - জুলাই - ২০১৬
হাকীমুল উম্মত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. ও শাইখুল ইসলাম আল্লামা তাকী উসমানী সাহেব দা. বা.-এর বক্তব্যের আলোকে উলামাদের হিফাযত
আলেম উলামা ও ছাত্রগণ রাজনীতির মাঠে কেন আসেন না?
হাকীমুল উম্মাত, মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. ইরশাদ করেন যে, বর্তমানে অবস্থা আর চিন্তা ফিকির শুধু এটাই যে, (রাজনীতির) মাঠে নামা উচিৎ। অথচ এর পরিণাম এই হয় যে, মাদরাসা-খানকাহ হাত থেকে ছুটে যায়, আর মাঠও আয়ত্তে আসে না। তাছাড়া এ মানুষগুলোর রাজনীতির মাঠের জন্য না আছে কোন শর্তের বালাই, আর না আছে কোন বাধ্য বাধকতা। বরং সবচেয়ে দুঃখজনক বিষয় এই যে, আজ একথা পর্যন্ত বলা হচ্ছে যে, (এখন) মাসআলা মাসাইল শোনার সময় নেই, এখন কাজের সময়; কাজেই কাজ করা চাই। (নাউযুবিল্লাহ)
প্রসঙ্গ : রাজনীতি ও আন্দোলনে ছাত্রদের অংশগ্রহণ
আমার মতামত হচ্ছে এই যে, যে কোন ধরনের আন্দোলনই হোক না কেন, তাতে তালিবে ইলম বা ছাত্রদের অংশগ্রহণের অনুমতি না হওয়া চাই। এতে পরবর্তী সময়ে ভীষণ ক্ষতি হয়, যা তাৎক্ষণিক ভাবে বুঝে আসে না।
পরিশেষে আমি জিজ্ঞেস করতে চাই যে, যখন পড়া ও পড়ানোর দায়িত্বে কেউ লিপ্ত থাকবে না তখন কাজ করনেওয়ালা উলামাদের জামা‘আত কোথা থেকে তৈরী হবে?
যারা আলেম, অনুসরণীয় ও নেতৃস্থানীয় রয়েছ, তাঁদেরই উচিৎ (জন সাধারণকে সাথে নিয়ে) সার্বিক দায়িত্ব আঞ্জাম দেয়া। কিন্তু ছাত্রদেরকে অবশ্যই তাদের পড়া লেখায় ব্যস্ত থাকতে দাও, যাতে ভবিষ্যৎ পর্যন্ত দীনে ইসলামের হুকুম আহকাম বাতলানে ওয়ালা একটি দলের ধারাবাহিকতা চালু থাকে।
তবে কি তোমাদের ধারণা এটাই যে, ভবিষ্যতে দীনের আর কোন প্রয়োজন থাকবে না? যেমনটি আজ বলা হচ্ছে যে, ‘মাসাইলের সময় নেই এখন কাজের সময়!!’
ঐ সব আলেম নেতাদেরকে ডেকে বলা উচিৎ যে আপনারা এই যে আজ সর্দার ও নেতা হয়েছেন তা কি ঐ পড়ালেখার বদৌলতেই নয়? অথচ আজ আপনারা সে পড়ালেখারই গোড়া কাটছেন।
সারকথা এটাই যে, ছাত্রদের এ জাতীয় কমিটি ও সভা সমিতিতে অংশগ্রহণের অনুমতি একেবারেই দেয়া উচিৎ নয়। এর মারাত্মক ক্ষতি রয়েছে।
এ (রাজনীতির) কাজের জন্য কি তবে শুধু ছাত্রদেরই দায় ঠেকেছে? অন্যান্য সাধারণ মুসলমান কি নেই? তাদের থেকেও কাজ নাও।
দ্রষ্টব্যঃ “আল ইলমু ওয়াল উলামা” হাকীমুল উম্মাত, মুজাদ্দিদুল মিল্লাত হযরত মাওলানা আশরাফ আলী থানভী রহ. পৃষ্ঠা ২৮০ এবং ২৮৪।
প্রসঙ্গ : রাজনীতি
বিশ্বখ্যাত আলেম পাকিস্তানের শরী‘আ আদালতের সাবেক জাস্টিস শাইখুল ইসলাম মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উসমানী সাহেব (দাঃ বাঃ) বলেন যে, “আমার সম্মানিত পিতা হযরত মাওলানা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. মুফতীয়ে আযম পাকিস্তান প্রকৃতিগত ভাবেই রাজনৈতিক মন মানসিকতা সম্পন্ন ছিলেন না। আর তিনি কখনো ‘রাজনীতি’কে স্বীয় কর্মপন্থাও বানাননি।
অবশ্য এতে কোন সন্দেহ নেই যে, ‘রাজনীতিও দীনের একটি গুরুত্বপূর্ণ শাখা। আর এটা অনস্বীকার্য যে, এ শাখায় মুসলমানদের জাতীয় ও সামগ্রিক সাফল্যের চিন্তা ভাবনা করা একজন আলেমেদীন ও হক্বের দাওয়াত প্রদানকারী ব্যক্তি মাত্রেরই গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব।
মুলতঃ এ কারণেই যখনই মুসলমানদের কোন অনিবার্য জাতীয় প্রয়োজন সামনে এসেছে তখনই তিনি সীমিত গন্ডির মধ্যে থেকেও এ শাখায় বিশাল খেদমত আঞ্জাম দিয়ে গেছেন। কিন্তু তাঁর পদ্ধতিই এমন ছিল যে, এ সব খেদমতগুলো প্রসিদ্ধ হওয়া সত্বেও তিনি কখনো ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব’ রূপে পরিচিত হননি।
১. সর্ব প্রথম কথা হচ্ছে এই যে, ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকে সম্পূর্ণ রাজনীতি মুক্ত রাখা হোক। এসব প্রতিষ্ঠানের ছাত্র শিক্ষকদের দেশের চলমান রাজনৈতিক অবস্থা সম্বন্ধে অবশ্যই সম্যক ধারণা রাখা চাই। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তারা প্রত্যক্ষভাবে সরাসরি রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়বে। বরং তাদের এতে (সরাসরি) অংশগ্রহণ করা অনুচিত। হ্যাঁ, যদি এ সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত কোন আলেম মনে করেন যে, তার জন্য রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িয়ে পড়া দরকার, সে ক্ষেত্রে তার জন্য মঙ্গল জনক পন্থা এই যে, তিনি সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে (ইস্তিফা) অবসর নিয়ে নিবেন এবং অতঃপর রাজনৈতিক খেদমত আঞ্জাম দিবেন।
আমার সম্মানিত পিতা রহ. ইরশাদ করতেন যে, উলামায়ে দেওবন্দের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিত্বদের পদ্ধতি এটাই ছিল যে, তাঁরা দারুল উলূম দেওবন্দের সাথে সংশ্লিষ্ট থাকা অবস্থায় সক্রিয় ও প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে বিশেষভাবে অংশ গ্রহণ করেননি। (যার উজ্জল দৃষ্টান্ত এই যে,) হযরত শাইখুল হিন্দ মাহমূদ হাসান দেওবন্দী রহ. যখন ভারত বর্ষের স্বাধীনতা আন্দোলনে বিপুল বিক্রমে অংশগ্রহণ শুরু করেন তখন তিনি দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ইস্তিফা নিয়ে নেন।
স্বয়ং আমার মুহতারাম পিতা মুফতী মুহাম্মাদ শফী রহ. এবং শাইখুল ইসলাম আল্লামা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. যখন পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে সরাসরি অংশগ্রহণ শুরু করেন তখন তাঁরাও প্রথমে দারুল উলূম দেওবন্দ থেকে ইস্তিফা নিয়ে নেন। পরে প্রত্যক্ষ কর্মতৎপরতা চালাতে থাকেন।
প্রথমতঃ যখন কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বা সে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-শিক্ষক প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তখন ইলম ও জ্ঞানের ঐ একাগ্রতা দূরীভূত হয়ে যায় যা ইলম অর্জনের জন্য অত্যাবশ্যক। শুধু তাই নয়, এর ফলে তা‘লীম ও তারবিয়্যাত তথা শিক্ষাও দীক্ষার মানও কমে যায় এবং যোগ্যতা শক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে। এর কারণ এই যে, জ্ঞানের জন্য পূর্বশর্ত হল একাগ্রতা ও নিবিষ্ট চিত্ততা। পক্ষান্তরে ‘রাজনৈতিক বাস্তবতা’ হল এটার সম্পূর্ণ বিপরীত ব্যাপার। এ কারণেই (অধিকাংশ ক্ষেত্রে) দেখা যায় যে, যে সব ছেলে ছাত্র যমানায় প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তাদের যোগ্যতা কম ও দুর্বল হয়।
দ্বিতীয়তঃ ইলম ও আমল এর সঠিক মানাসিকতা তৈরীর পূর্বেই যখন অপরিপক্ক মস্তিষ্কের ছাত্ররা রাজনীতিতে অংশগ্রহণ আরম্ভ করে তখন তারা আর ঐ সীমারেখা মেনে চলতে পারে না যা ইসলাম রাজনীতির জন্য নির্ধারণ করে দিয়েছেন।
আর এভাবে বারংবার সীমা লংঘনের দরুন এক পর্যায়ে ধর্মীয় গোষ্ঠীর রাজনীতিও বিধর্মী রাজনীতির ঘূর্ণাবর্তে নিপতিত হওয়ার আশংকা দেখা দেয়।
এতদভিন্ন যখন একজন মানুষ মজবুত দীক্ষা ছাড়াই রাজনীতির ন্যায় একটি জটিল ও স্পর্শকাতর ব্যাপারে তথা কন্টকাকীর্ণ পথে পা রাখে তখন তার জন্য অহংকার, যশ ও খ্যাতি, আরো বিভিন্ন আত্মিক অসুস্থতা থেকে বেঁচে থাকা খুবই দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে।
তৃতীয়তঃ দীনের বিভিন্ন কর্ম বণ্টনের চাহিদা ও আবেদনও এটাই যে, সমস্ত আলেমদের একযোগে রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়া অনুচিৎ। বরং কিছু লোককে অবশ্যই শিক্ষা, দীক্ষা, তা‘লীম ও তারবিয়্যাত এবং দাওয়াত ও তাযকিয়াহ (আত্মশুদ্ধি) এর কাজে ব্যাপৃত ও সম্পৃক্ত থাকতে হবে। যাতে করে দীনী প্রয়াজনের সমস্ত কাজই সঠিকভাবে, সুচারু রূপে পরিচালিত হতে পারে এবং দীনের কোন শাখাতেই শূন্যতা সৃষ্টি না হয়।
চতুর্থতঃ দীনী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর মঙ্গল ও উন্নতির পথ এটাই যে, তারা কখনো প্রশাসনের এত নিকটেও ঘেষবে না যদ্দরুন তাদেরকে প্রশাসনের তল্পীবাহক হতে হয়, আবার তারা প্রশাসনের সাথে এমন বৈরী আচরণও করবে না যদ্দরুন তাদের কাজে বাঁধা বিপত্তি আসে। এর অন্তর্নিহিত রহস্য এই যে, হুকুমাত বা প্রশাসনের নিত্য পরিবর্তনশীল অথচ এসব ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাজ ও লক্ষ্য এক ও অভিন্ন।
কাজেই প্রশাসনের নৈকট্য কিংবা দূরত্বের মাধ্যমে এসব প্রতিষ্ঠান গুলোর উপর খারাপ প্রতিক্রিয়া পড়তে দেয়া উচিৎ হবে না। বরং তাদেরকে সর্ববস্থায় নিজেদের সুদূর প্রসারী মহান গঠনমূলক কাজেই মশগুল থাকা চাই। অথচ এর বিপরীতে যদি এ সব প্রতিষ্ঠান প্রত্যক্ষ রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে তাহলে তাদের এ মহান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অবশ্যই হুমকীর সম্মুখীন হবে।
২. এছাড়া যে সব উলামায়ে কিরাম কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাথে (প্রত্যক্ষ ভাবে) জড়িত নন সে সব উলামাদের ‘রাজনীতি’ তে অংশগ্রহণের ব্যাপারে আমার মুহতারাম ওয়ালিদ সাহেব রহ. এর আন্তরিক অভিলাষ এটাই ছিল যে, তাঁরাও যেন শক্ত জরুরত বা অনিবার্য প্রয়োজন ব্যতিরেকে নির্বাচনে অংশ না নেন।
হযরত মাওলানা শাব্বীর আহমাদ উসমানী রহ. একদা পার্লামেন্টে ভাষণ প্রদানের সময় বলেছিলেন “প্রশাসনের দায়িত্বশীল ও পরিচালকবৃন্দ এ ভুল ধারণাকে মন থেকে বের করে দিন যে, ‘মোল্লারা’ ক্ষমতা চায়। আমি দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে বলে দিতে চাই যে, আমরা মোটেও ক্ষমতা দখল করতে চাই না, তবে ক্ষমতাসীনদেরকে কিছুটা মোল্লা (দীনদার) বানাতে চাই”।
দ্রষ্টব্য : “মেরে ওয়ালিদ মেরে শাইখ” জাষ্টিস মুফতী মুহাম্মাদ তাক্বী উসমানী (দাঃ বাঃ পৃষ্ঠা ১৫৫-১১৯)